প্রতি বছরই আগাম জাতের সবজি চাষে বেশি মুনাফা অর্জন করলেও এবার আগাম ও উন্নত জাতের স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো চাষে বাজিমাত করেছেন গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক সজিব রহমান। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আরও লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদী। উন্নত জাত, সঠিক পরিচর্যা ও কৃষি অফিসের আন্তরিকতা থাকলে কৃষকের ভাগ্যবদলাতে পারে এমন প্রত্যাশা তার। নতুন ও উন্নত জাতের ফসল চাষে মাঠ দিবসের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এমন দাবি কৃষি অফিসের।
মেহেরপুর জেলায় যে কয়েকটি আগাম জাতের টমেটো চাষ হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫, রোমা ভিএফম রোমারিও, টিপু সুলতান, গ্রেট পেলে, ডেল্টা এফ-১, নিউ রুপালী এফ ইত্যাদি। এগুলো ভরা মৌসুমী জাত। শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই এসব জাতের টমেটো আবাদ হয়ে থাকে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বপন করে অক্টোবর-নভেম্বরে এসব জাতের টমেটোর চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। এসব জাতের টমেটো গাছে ফুল ও ফল আসতে একটু দেরি করে, ফলন নিয়েও হতাশায় থাকেন চাষিরা।
মেহেরপুর জেলায় এই প্রথম স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো আবাদ করেছেন ভাটপাড়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে কৃষক সজিব রহমান। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি এক বিঘা জমিতে স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটোর চারা রোপণ করেন। তিন মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছেই আসে ফুল ও ফল। স্মার্ট জাতের টমেটোর প্রতিটি গাছেই টমেটোর ভারে নুইয়ে পড়ে। গাছ ঠেকাতে বেঁধে দিতে হয় বাঁশের খুঁটি। এক বিঘা জমিতে তিনি প্রথম অবস্থাতেই লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করেন। এখনও তার জমিতে লক্ষাধিক টাকার টমেটো রয়েছে। বর্তমান বাজারে টমেটোর ভাল দাম পাওয়ায় এবার তিনি খরচের দ্বিগুণ টাকা আয় করেবন এমন প্রত্যাশা তার।
কৃষক সজিব রহমান জানান, এক বীজ কোম্পানির মাঠ দিবসে অংশগ্রহণ করে স্মার্ট-১৭ জাতের হাইব্রিড টমেটোর বিষয়ে জানতে পারেন তিনি। পরে পরীক্ষামূলক এক বিঘা জমিতে স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটোর চারা রোপণ করেন। তিন মাস যেতে না যেতেই গাছে আসে ফুল ও ফল। প্রতিটি গাছের পাতার নিচে থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায় টমেটো। তিনি প্রথমেই লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। এখনও জমিতে লক্ষাধিক টাকার টমেটো রয়েছে। সঠিক সময়ে কৃষি অফিসের সহায়তা ও নতুন নতুন উন্নত জাত কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে আরও লাভবান হওয়া সম্ভব।
কৃষক সজীব রহমানের টমেটো দেখে আগামী বছরে স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো আবাদ করবেন বলে জানান স্থানীয় কৃষক শাহিন আলী। তবে এমন উন্নত জাতের বিষয়ে কৃষকের সঙ্গে কৃষি অফিসকেও এগিয়ে আসতে হবে এমন দাবি আগ্রহী কৃষক শাহিন আলীর।
সবজি চাষি কাবিরুল ইসলাম বলেন, শুধু স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো নয়, অনেক উন্নত জাত আছে যা আমরা জানি না। স্থানীয় কৃষি অফিসার যদি ওইসব আবাদ সম্পর্কে আমাদের সঠিক সময়ে জাত ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারনা দেন তাহলে আমাদের এই অঞ্চলে সব আবাদেই আমরা লাভবান হতে পারি।
সজীব একজন সবজি চাষি। তিনি নিজ উদ্যোগে এবার উন্নত ও আগাম জাতের টমেটো আবাদ করে অনেক ফলন পেয়েছেন এবং লাভবান হয়েছেন।
বিভিন্ন বীজ কোম্পানির উদ্যোগে আমরা আবাদ সম্পর্কে যেটুকু ধারনা পেয়ে থাকি শুধুমাত্র সেটুকুতেই আমরা সীমাবদ্ধ থেকে কিছুটা লাভবান হই। স্থানীয় কৃষি অফিসার ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা যদি আমাদের পাশে এসে উন্নত জাত নির্বাচনে সহায়তা করতো তা হলে আমরা নতুন নতুন আবাদের খোঁজ পেতাম বলে জানান আগ্রহী কৃষক জিয়ারুল ইসলাম।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরান হোসেন বলেন, মেহেরপুর জেলায় চলতি বছরে ৬৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের টমেটো আবাদ হয়েছে। এতে ১৫০০ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হবে। যা জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হবে। তিনি আরও বলেন, মেহেরপুর জেলার মাটিতে সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানকার উৎপাদিত টমেটো ও সবজির সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যায়। সে কারণে কৃষক সজিব রহমানের মত কৃষকদের পাশে থেকে মাঠ দিবসের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের জাত সম্পর্কিত নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি।