1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

হিজরতে যাওয়া ৩২ তরুণ এখনো নিরুদ্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আল-আমিনের মৃত্যুর কথা শুনে মনে হয়েছে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আমার ছেলের (নিহাল আব্দুল্লাহ) শেষ পরিণতি কী হয়েছে জানি না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকরাও এখন ছেলের সম্পর্কে কিছু বলতে পারছে না।’

মঙ্গলবার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন সাইফুল ইসলাম। তিনি কথিত হিজরতের নামে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হওয়া কুমিল্লার নিহাল আব্দুল্লাহর বাবা। নিহালের মতো নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণ আমিনুল ইসলাম ওরফে আল-আমিন।

নিরুদ্দেশ হওয়ার পর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক তরুণ ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিলের তথ্য মতে বান্দরবানের গহিন অরণ্যে কবর খুঁড়ে আমিনুল ইসলাম ওরফে আল-আমিনের লাশ পাওয়া যায়নি। শিথিল র‌্যাবকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা পাঁচ সঙ্গী গহিন অরণ্যে কবর দেন।

গত ১০ অক্টোবর ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হওয়া যে ৩৮ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে র‌্যাব, তার মধ্যে কুমিল্লার নিহাল ও মোহাম্মদ আস সামির নাম রয়েছে। তাঁরাসহ গত চার বছরে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হওয়াদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি যেমন রয়েছেন, আছেন সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ কলেজ পড়ুয়া তরুণও। তাঁদের কেউ কেউ আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমন তথ্য রয়েছে র‌্যাবের কাছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, নিরুদ্দেশ হওয়া ৩৮ জনের মধ্যে ৩২ জনের খোঁজ মেলেনি এখনো। বাকি ছয়জনের মধ্যে আল-আমিন খুন হওয়ার মামলা করেছেন তাঁর বাবা। দুজনকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তারা হলো ইমতিয়াজ আহমেদ ও হাসিবুল ইসলাম। রিমান্ডে থাকা দুজন হলো বায়েজিদ ইসলাম ওরফে মোয়াজ ওরফে বাইরু ও ইমরান বিন শিথিল ওরফে বিল্লাল। আর সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয় জঙ্গি সঙ্গ ছেড়ে স্বেচ্ছায় পরিবারে ফিরেছেন।

যা বলছে পরিবার : কুমিল্লার সাত তরুণ গত ২৩ আগস্ট একযোগে নিখোঁজ হন। তাঁদের বয়স ১৮  থেকে ২৩ বছর। তাঁদের মধ্যে এখনো নিরুদ্দেশ রয়েছেন কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নিহাল আবদুল্লাহ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আস সামি। এই দুজন ও সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া শিথিল গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা পরীক্ষায় বসতে পারেননি।

এরই মধ্যে আল-আমিনের পরিণতির কথা জেনেছে নিহাল আবদুল্লাহ আর মোহাম্মদ আস সামির পরিবার। বিষয়টি জানার পর থেকে অনেকটাই দিশাহারা অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। শেষ পর্যন্ত সন্তানদের জীবিত অবস্থায় ফেরার খবর পাবে ডশ না, তা নিয়ে শঙ্কায় তারা।

গতকাল দুপুরে নিহাল আবদুল্লাহর বাবা কুমিল্লা নগরীর রানীরবাজারের পাশের অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১১ জানুয়ারি জানতে পারি শিথিলের খোঁজ মিলেছে। তখন থেকে অপেক্ষায় দিন কাটছে কখন আমার ছেলের খোঁজ মেলার খবর আসবে।’

সাইফুল বলেন, ‘পটুয়াখালী থেকে জঙ্গিদের সঙ্গ ছেড়ে কৌশলে পালিয়ে আসা সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয় (২৫) আমার ভায়রার ছেলে। কুমিল্লার ছয়জন আর নিলয়সহ মোট সাতজন একসঙ্গে সেদিন নিরুদ্দেশ হয়।’ তিনি বলেন, ‘ওই ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের শেষ পরিণতির খোঁজ মিলেছে; কিন্তু আমার ছেলেসহ বাকিদের কী হয়েছে সেটাই জানার অপেক্ষায় আছি। দীর্ঘ এই সময়ে আমরা অনেকটা জিন্দা লাশের মতো হয়ে আছি। আমার ছেলে জঙ্গি সংগঠনের ফাঁদে পড়বে—এমনটা স্বপ্নেও ভাবিনি।’

নিহালের শেষ পর্যন্ত জীবিত অবস্থায় সন্ধান মিলবে; এমন প্রত্যাশার কথা বলে মা ফৌজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার বোনের ছেলে ফিরে এসেছে। কয়েক দিন আগে শিথিলের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমার ছেলেরও দ্রুত সন্ধান চাই। ছেলেটার শেষ পরিণতি কী হয়েছে, সেটা জানতে চাই।’

ঘরছাড়ার পর এখনো নিরুদ্দেশ থাকা আস সামি বেঁচে আছেন কি না জানে না পরিবার। সামির বাবা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘এখনো বিশ্বাস হয় না আমার ছেলে জঙ্গিদের ফাঁদে জড়াতে পারে। তাকে যারা এই পথে নিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তি চাই। আমার ছেলে জীবিত ফিরবে, সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছি।’

গত ১১ জানুয়ারি বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে শিথিলসহ পাঁচ তরুণকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, কুমিল্লা থেকে একসঙ্গে ঘরছাড়া সাত তরুণের একজনের এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে। আল-আমিন নামের ওই তরুণকে বান্দরবানের গহিন অরণ্যে কবর দিয়েছে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গীরা। তবে গত রবিবার সেই কবর খুঁড়ে সন্ধান মেলেনি আল-আমিনের লাশের; কবরের মধ্যে মিলেছে একটি কম্বল।

র‌্যাব সূত্র বলছে, গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক ব্যক্তি কথিত হিজরতের উদ্দেশে ঘর ছেড়েছেন। নিরুদ্দেশ হতে তাঁদের যারা উদ্বুদ্ধ করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তাদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, নিরুদ্দেশ জঙ্গিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এরপরই সেখানে শুরু হয় যৌথ অভিযান। ওই অভিযানে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি সদস্য।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিরুদ্দেশ তরুণদের খোঁজ নিতে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, এরা ধাপে ধাপে নিরুদ্দেশ হয়েছে। অনেক পরিবার আছে, যাদের সন্তান দুই বছর ধরে নিরুদ্দেশ; কিন্তু আমাদের কখনো জানায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন তাদের কাছে যাচ্ছি, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলছি তখন অনেকে বলছে হয়তো তারা বিদেশে, আবার যারা দুই-তিন মাস নিখোঁজ, তাদের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে হয়তো তাবলিগে গেছে। তবে খোঁজ নিয়ে এসব কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

জঙ্গি তৎপরতা ক্রমে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন অপরাধ বিশ্লেষক নূর খান লিটন। তিনি  বলেন, ‘র‌্যাবের তথ্যানুযায়ী বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হওয়া এসব তরুণের সঙ্গে জঙ্গিবাদের যদি কোনো যোগসূত্র থাকে, তাহলে ধরে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে, আমাদের নিরাপত্তা হুমকিতে। তবে এ ধরনের নিশ্চিত কোনো তথ্য কোনো সূত্র থেকে আমি পাইনি।’

কোন জেলার কতজন : গত ১০ অক্টোবর র‌্যাবের প্রকাশিত তালিকায় যে ৩৮ জনের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জের, নেত্রকোনার একজন, নোয়াখালীর একজন, পটুয়াখালীর একজন, ফরিদপুরের দুজন, বরিশালের তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন, ময়মনসিংহের একজন, মাগুরার একজন, মাদারীপুরের দুজন, সিলেটের ছয়জন, সুনামগঞ্জের একজন, কুমিল্লার ১১ জন, খুলনার একজন, চাঁদপুরের একজন, ঝালকাঠির দুজন, ঝিনাইদহের একজন ও টাঙ্গাইলের একজন।


সর্বশেষ - রাজনীতি