1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রংপুরের চরাঞ্চল এখন ‘হিডেন ডায়মন্ড’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩

উত্তরের চরগুলো এখন ‘হিডেন ডায়মন্ড’। প্রতি বছর এসব চরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার ফসল। এছাড়া বছরে ২৫ লাখ গবাদিপশুর যোগান দিচ্ছে চরে বসবাসকারীরা। তবে আকস্মিক বন্যা, খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় সময়ই হোচট খেতে হয় চরে বসবাসকারীদের। সেইসাথে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত তারা।

গবেষকরা বলছেন, কৃষি জমি কমতে থাকায় চরগুলোই দেশের ভবিষ্যৎ খাদ্যের যোগানের কেন্দ্রবিন্দু। সে কারণে চরের কৃষকদের সুযোগ সুবিধার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

উত্তরের জীবন রেখা তিস্তা। মাস দুয়েক আগেও ছিলো পানিতে টইটুম্বুর। এখন পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর। আর এসব চরে ফসল ফলিয়ে খাদ্যের যোগান দিয়ে নিরব বিপ্লব ঘটিয়ে যাচ্ছেন চরের কৃষকরা। তিস্তার বালুময় প্রান্তর এখন সবুজে ঢেকেছে।

শুক্রবার সকালে চর ইচলিতে গিয়ে দেখা মিললো মহসেনা বেগমের। নিজের জমির আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত। কথা হলো মহসেনার সাথে। জানালে চর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি। এই মৌসুমে ২০ শতক জমিতে আবাদ করেছেন রসুন আর পিয়াজ। বলেন, পরিবারের যতটুকু লাগে সেটা রেখে বাকিটা স্থানীয় বাজারে বেচে দেন। এতে সংসারে অর্থের যোগান হয়।

কিছুদূর যাবার পর আরেক কৃষক হাসেম আলীর সাথে কথা হলো। সে সময় হাসেম আলী নিজের উৎপাদিত সবজি তুলছেন স্থানীয় একটি বাজারে বিক্রির জন্য। রসুন ও পিয়াজের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে মহিপুর চরে ২ বিঘা জমিতে রসুন ও পিঁয়াজের পাশাপাশি এক একর জমিতে আলুও আবাদ করেছেন।

রংপুর অঞ্চলের চরগুলোতে এখন হাজারো কৃষকদের দম ফেলার ফুসরত নেই। তিস্তার বিভিন্ন চরে আলু, রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ, ভূট্টা ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানা ধরনের ফসলের পরিচর্যা চলছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। যেসব ফসল একটু আগাম রোপণ করা হয়েছে সেগুলো তোলা হচ্ছে বাজারে। তবে চরাঞ্চলগুলোতে কৃষকের পণ্য পরিবহনে সব থেকে বেশি বিরম্বনায় পড়তে হয়।

মহসিন আলী নামে এক কৃষক জানান, এক একর জমিতে আলু আবাদ করেছি। ফলন ভালো হলেও মূল সড়ক থেকে চর দূরে হবার কারণে পাইকাররা দাম কম করেন। সে কারণে অনেক সময় লোকসানেও পড়তে হয়।

চরাঞ্চলগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য সাধারণত ঘোড়ার গাড়ি, ঠেলা গাড়ি, মহিষের গাড়ি এবং সাইকেল ব্যবহার করেন চাষীরা।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, নদী শাসনের মধ্য দিয়ে চরগুলোতে সুরক্ষা করা গেলে দেশের কৃষিতে বড় অবদান রাখা সম্ভব। একই সাথে বৈশ্বিক এই সংকটে খাদ্য উৎপাদনের বড় যোগান হতে পারে চরাঞ্চলগুলো।

তিনি বলেন, চরগুলো দেশের খাদ্য চাহিদার বড় যোগান দিয়ে যাচ্ছে। দেশে ভূট্টার চাহিদার বৃহৎ অংশই উৎপাদন হচ্ছে রংপুরের চরগুলোতে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী রংপুর অঞ্চলে প্রায় এক লাখ হেক্টর চরে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল।

রংপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, চরগুলো থেকে বছরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হয়। এরই মধ্যে চর অঞ্চলের কৃষকদের সহযোগীতায় কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে পানির পাইপ ও সেচ পাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে চরের উৎপাদন বাড়বে দ্বিগুণ।

শুধু কৃষিতে নয় গবাদি পশুর চাহিদারও বড় একটি জোগান দিয়ে থাকেন চরের বাসিন্দারা। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতি বছর উত্তরাঞ্চলের চরগুলোতে প্রায় ২৫ লাখ গবাদি পশু লালন-পালন হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। চরের নারীরাই মূলত এখানকার গবাদি পশু লালনপালনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। রংপুর প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, চরাঞ্চলগুলো মাংস ও দুধের বড় যোগান দিচ্ছে। এছাড়াও গবাদি পশু লালন পালন করে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন চরের বাসিন্দারা। তিনি বলেন, গবাদি পশু পালনে চরের বাসিন্দাদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সককারী অধ্যাপক ও গবেষক কুন্তলা চৌধুরী বলেন, চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য কৃষিতে বিশেষ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি বীমার আওতায় আনার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বন্যা, খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে চরের বাসিন্দারা একরকম ঝুঁকি নিয়ে দেশে খাদ্য চাহিদার বড় যোগান দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই সমতলের আবাদী জমি কমছে। সে কারণে চরের কৃষি ব্যবস্থাপনার বিশেষ প্রকল্পের পাশাপাশি বন্যা, খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনীয় নানা রকম ফসলের জাত উদ্ভাবনের ওপর নজর দেয়া জরুরি।


সর্বশেষ - রাজনীতি