৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাঁপছে তেঁতুলিয়া। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ অঞ্চলে। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত কয়েকদিন তাপমাত্রা বাড়লেও আজ তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রিতে। গতকাল শুক্রবার রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
এদিন সকাল থেকেই দেখা গেছে সূর্যের মুখ। তবে অনুভূত হচ্ছে প্রচণ্ড কনকনে শীত। সূর্যের মুখ দেখা গেলেও মিলছে না রোদের উষ্ণতা। এতে দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরীব অসহায় মানুষ। পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহনের চালকরা পড়েছেন বিপাকে। তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবে জীবিকার তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে।
চা শ্রমিক রাজু, কামাল ও জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সকালে কনকনে শীত। রোদ দেখা গেলেও বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। এখন বাগানের পরিচর্যা চলছে। শীতের কারণে গাছের ফ্লাইং, কাটিং করতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু খিদে আর পরিবারের কথা চিন্তা করে কাজে বের হতে হয়।’
পাথর শ্রমিক ইমরান, আরশেদ আলী ও আবু তাহের বলেন, ‘ঠাণ্ডায় নদীর পানি বরফের মতো মনে হয়। তারপরেও পাথর তোলা আমাদের জীবিকা। তাই কাজে বেরিয়েছি। কদিন ধরে নদীর ঠাণ্ডা পানিতে কাজ করে জ্বর-সর্দিতে ভুগলাম। তবুও পরিবারের কথা চিন্তা করে সকালেই পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি।’ একই কথা জানান কয়েকজন দিনমজুর ও নারী পাথর শ্রমিক।
নারী পাথর শ্রমিকরা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে তাদেরও কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। ঘর-সংসার সামলে তাদের জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে হয়। শীতের কারণে অনেক সময় কাজে যেতে দেরি হয়। তখন মহাজনরা কাজে নিতে চান না।
অপরদিকে বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তারা জানান, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কারণে ক্ষেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। অনেক দেরিতে মাঠে যেতে হচ্ছে। এখন বোরো মৌসুম, ভুট্টা, মরিচ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করতে হচ্ছে। শীতের কারণে বেলা করে ক্ষেতে গিয়ে কাজ এগোচ্ছে না বলে জানান তারা।
শীতের কারণে পড়ালেখা স্থবির হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। সকালে স্কুল শিক্ষার্থী তানিয়া, কাজল ও নাইমা খাতুন জানায়, কনকনে শীতে রাতে পড়তে কষ্ট হয়। তখন যেন তাপমাত্রা শূন্যতে চলে যায়। আর সকালে কুয়াশা আর বাতাসের কারণে প্রাইভেট এবং স্কুলে যেতে কষ্ট হয়।
এদিকে শীতের প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল জানান, তেঁতুলিয়ায় আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১০ জানুয়ারি এ জেলায় ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বর্তমানে উপজেলার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে।