1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন স্কুল ক্লিনিক

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

স্কুলজীবনে প্রতি পাঁচজনে একজন শিক্ষার্থী কোনো না কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় পতিত হয়। স্কুল ক্লিনিক বিদ্যালয়ের এসব শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারে। প্রয়োজনে শারীরিক পরীক্ষা, ল্যাব টেস্ট ইত্যাদি করিয়ে সময়মতো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দিতে পারে। তদুপরি স্কুল ক্লিনিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের আচরণ তৈরি করে দেয়।

বিদ্যালয়ে শিশু হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়লে; বমি, ডায়রিয়া, খিঁচুনি বা দুর্ঘটনার শিকার হলে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ ও ওষুধের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। এতে বিপদ লাঘবের সুযোগ থাকে।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ে সব শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর বিধান রয়েছে। এর মধ্যে কিছুসংখ্যক শিশুকে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য চেকআপের আওতায় আনতে হয়। বিশেষত ‘বিশেষ সাহায্য-সহযোগিতা’ সম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল ক্লিনিকের প্রয়োজনীয়তা অনেক। কখনো বা স্কুল চিকিৎসক এসব শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফারও করতে পারেন। যেসব শিশুকে স্কুল চিকিৎসক সাধারণভাবে রেফার করে থাকেন বা শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে মা-বাবা ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন, সেসব হলো—দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, স্বাস্থ্যগত কারণে শিশুর বারবার স্কুল কামাই, অতিরিক্ত মাত্রায় আচরণজনিত সমস্যা, পড়ালেখায় খারাপ ফল, শারীরিক অসুস্থতা, শিশু নির্যাতন, সামাজিক সমস্যা ইত্যাদি।

ব্যবস্থাপনা : রেজিস্টার্ড মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার, সম্ভব হলে কোনো শিশু চিকিৎসককে স্কুলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে এবং সময়ে সময়ে তাঁকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ট্রেনিং কোর্সে সংযুক্ত করানো হলে তাঁর অর্জিত দক্ষতা সুফল বয়ে আনে। এ ছাড়া পার্টটাইম সার্ভিসের আওতায় অন্যান্য বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসক; যেমন—নাক-কান-গলা ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ, স্পিচথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্টের সহযোগিতা নেওয়া যায়।

স্কুল নার্স

► অনেক স্কুলে নিয়মিতভাবে সিনিয়র অভিজ্ঞ স্কুল নার্স ও স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পার্টটাইম বেসিসেও স্কুল নার্স নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। স্কুল নার্সের দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে—

► প্রত্যেক শিশুর স্বাস্থ্যগত ইতিহাস নেওয়া, শিশুকে পরীক্ষা করা।

► স্কুলের স্টাফ থেকে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিষয়াদি জেনে নেওয়া।

► যেসব শিশু শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যায় জর্জরিত তাদের ফলোআপ করা।

► শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার, ত্বক, হাত-পা, চুল, দাঁত, মুখ ইত্যাদির যত্ন নেওয়া বিষয়ে পরামর্শদান।

► শিশুর উচ্চতা ও ওজন নির্ণয় করে বৃদ্ধি বিকাশ চার্টে লিপিবদ্ধ করা।

► যেসব স্কুল সেন্টারে সুযোগ আছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করে দেখা।

মনে রাখা দরকার, স্কুল চিকিৎসক ও নার্স এমন না যে তাঁরা স্কুলে পরিদর্শকের মতো আসা-যাওয়া করবেন। বরং তাঁদের স্কুল পরিকাঠামো, স্কুলের পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিশেষ শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা গ্রহণের উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার—প্রতিটি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর জন্য তাঁরা যেন অভিভাবকমণ্ডলী, শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল ও উপদলের সঙ্গে একত্রে বসে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুল হাইজিন ও পরিবেশ নিয়মিত তদারকি করে স্কুল নার্স ডেঙ্গু মহামারির মতো রোগ বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারেন।

স্কুল হেলথ সার্ভিস—

১. মেডিক্যাল চেকআপ : স্কুলে ভর্তির সময়ে ও পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনমাফিক কোনো কোনো শিশুর প্রতিনিয়ত চেকআপ, বিশেষত যে শিশুর কোনো অসুবিধার কথা স্কুল নার্স কিংবা ক্লাস টিচার বা হেড টিচার লিখে দিয়ে থাকেন। প্রতিবছর শিশুর ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ ও গ্রোথ চার্ট ব্যবহার। এতে (প্রায় ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে) যেসব শিশু শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন, যাদের শিগগির ডাক্তারি চিকিৎসার প্রয়োজন, তাদের আগেভাগে শনাক্ত করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায়। স্কুল বয়সে বয়ঃসন্ধিকালের কিছু অসুখ; যেমন—মেরুদণ্ডের রোগ, মূত্রতন্ত্রের ইনফেকশনস ইত্যাদি শনাক্তের জন্য শারীরিক চেকআপ ও রুটিন পরীক্ষা।

২. দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির পরীক্ষা : শিশুর পড়ালেখার সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রধান দুটি কারণ—চোখে দেখা ও কানে শোনার সমস্যা, যা স্কুল বয়সে প্রাথমিক স্তরে নির্ণয় হওয়া উচিত। সাধারণভাবে স্কুল নার্স দ্বারা এসব পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া যায় ও পরবর্তী সময়ে বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষাদি (যেমন—অডিওমেট্রি) করানো যেতে পারে। আর প্রয়োজনে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করে পরামর্শ গ্রহণ।

৩. সংক্রমণ প্রতিরোধে : বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার এক সহজ জায়গা হলো স্কুল। কোনো শিশু সংক্রামক অসুখ নিয়ে স্কুলে এলে তাকে ক্লিনিক্যাল উন্নতি না হওয়া ও স্যাম্পল পরীক্ষায় জীবাণুর অনুপস্থিতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে আসা নিবৃত্ত করা। যেমন—মাম্পস, হাম বা চিকেনপক্সে আক্রান্ত শিশু। শিশু যক্ষ্মাক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং স্কুল বয়সের ছাত্র-ছাত্রীরা যেসব সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে আছে, তাদের জন্য প্রতিষেধক টিকাদানের ব্যবস্থা।

৪. স্বাস্থ্য শিক্ষা : স্কুল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অংশগ্রহণে প্রতি মাসে একবার বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক অধিবেশনের আয়োজন। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি সচেতনতা বাড়াতে, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রতিরোধমূলক বিশেষ স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ। অসংক্রামক রোগের প্রতিরোধে গৃহীত কৌশলের বাস্তবায়ন। শিশুকে পরিচালনার জন্য মনোশিক্ষা বা শিশু সাইকোলজির প্রয়োগ—বিশেষত আচরণজনিত সমস্যার শিকার শিশুর ক্ষেত্রে।

৫. স্বাস্থ্য ডায়েরি : প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি স্বাস্থ্য ডায়েরি থাকা উচিত। ডায়েরিতে শিশুর নাম, জন্ম তারিখ, মা ও বাবার নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লিপিবদ্ধ রাখা। প্রতিবছর শিশুর ওজন ও উচ্চতা নির্ণয় করে ডায়েরিতে লিখে রাখা। শিশু যেসব টিকা পেয়েছে তার উল্লেখ থাকা।

৬. স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন : বছরে অন্তত একবার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ, দন্ত, চক্ষু, নাক-কান-গলা ইত্যাদি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন। গঠিত স্বাস্থ্য ক্যাম্পে বিশেষ স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়, স্কুল চিকিৎসক ও নার্সের তালিকা অনুযায়ী বিশেষ সাহায্য-সহযোগিতায় শিশু শনাক্তকরণ ও রেফার করা।

৭. দরকার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ : বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য কার্যক্রম গ্রহণে মনোযোগী হলে শিক্ষার্থীরা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন—

►  বিদ্যালয়ের সুপরিবেশ নিশ্চিত করা—নিরাপদ প্রাচীর বা ঘেরসহ পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো-বায়ুপূর্ণ নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ইউরিনাল ও শৌচাগার। নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা। পরিচ্ছন্ন টিফিন রুম।

►  প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাধারণ রোগব্যাধি ও সমস্যা মোকাবেলায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমপক্ষে একজন শিক্ষক, যিনি প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা পর্যবেক্ষণ করবেন। যেমন—নখ কাটা, দাঁত মাজা, চুল কাটা, পরিষ্কার পোশাক পরা ইত্যাদি। প্রতি তিন-চার মাস পর নির্ধারিত দিনে শিক্ষার্থীদের একটি করে কৃমির বড়ি খাওয়ানো। প্রয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের সাহায্য গ্রহণ।

►  শিশুর জন্য দৈনিক প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অর্ধেক ও দৈনিক ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশ ‘না লাভ—না ক্ষতি’ এ রকম পদ্ধতিতে স্কুল মিল চালু করা। যেসব এলাকায় দাঁতের ক্ষয়রোগ, আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা, রাতকানা, আয়োডিনের অভাবজনিত গলগণ্ডসহ নানা ধরনের অপুষ্টি সমস্যা বিদ্যমান, সেসব এলাকার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট রকমের খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

►  শিক্ষার্থীদের স্কুল ক্লিনিক দৈহিক, মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য বিশেষ সুযোগ এনে দেয় এবং এতে স্কুল রোগতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম গড়ে তোলা যায়। তাই জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে ‘বিদ্যালয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে’ এখনই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে।

লেখক : ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী – শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।


সর্বশেষ - রাজনীতি