আগামী মার্চের মধ্যেই শতভাগ সম্পন্ন হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ। এটি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সুড়ঙ্গপথ। তবে পুরো কাজ মার্চে শেষ হলেও ফেব্রুয়ারিতেই টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে। এরই মধ্যে টানেলের জন্য গাড়ি চলাচলের টোল নির্ধারণ করে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। টোল নির্ধারণ হওয়ার পরই টানেল উদ্বোধনের তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘টানেলের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশের কিছুটা বেশি। আশা করছি মার্চের আগেই টানেলের শতভাগ কাজ শেষ হবে।’
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মার্চের আগেই টানেল যান চলাচলের জন্য শতভাগ উপযোগী হবে। তাই ফেব্রুয়ারিতে এটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে টানেলের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন সেতু এবং শাহ আমানত সেতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রাথমিক প্রস্তাবনায় তিন চাকার গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। প্রস্তাবনায় প্রাইভেট কার, জিপ ও পিকআপের জন্য ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ২৫০ টাকা, ৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা এর চেয়ে বেশি আসনের বাসের জন্য ৪০০ টাকা, ৫ টনের ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের জন্য ৬০০ টাকা, ট্রাক (তিন এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রেইলর (চার এক্সেল) ১ হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলরের জন্য ১ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা বাড়তি টোল নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেতু বিভাগ থেকে পাঠানো প্রস্তাবনাটি অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করার পর আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং করবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর টোলের হার চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হবে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টানেলের ভৌতিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশের কিছুটা বেশি। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে দুটি টিউব, তিনটি ক্রস প্যাসেজের কাজ, ভায়াডাক্ট উভয় টিউবের পেভমেন্ট স্লেভ, পূর্ব অংশ ও পশ্চিম অংশের রেইন শেল্টারের আর্ক মেশ শেল ইনস্টলমেন্ট ও পেইন্টিং কাজ। টানেলের ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ওয়্যার্সের মধ্যে ক্যাবল কানেকশন, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, লাইটিং কাজ চলমান থাকলেও জেট ফ্যান ইনস্টলমেন্টও সম্পন্ন হয়েছে। উভয় প্রান্তের অ্যাপ্রোচ সড়কের ৫ হাজার ৩৫০ মিটার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। চলমান অন্যান্য কাজও শেষ হওয়ার পথে। প্রসঙ্গত, চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারা উপজেলাকে এক করে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এ টানেলের এক প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। অন্য প্রান্তে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। এ টানেল শহর ও গ্রামকে এক সুতায় যুক্ত করবে। বাংলাদেশ সরকার ও চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে যৌথ অর্থায়ন করেছে।