গত অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছাড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার ৩৩৫ কোটি পিস। চলতি অর্থবছরে তা আড়াই হাজার কোটি ছাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পাঁচ দশকের ব্যবধানে ডিমের প্রাপ্যতা বেড়েছে প্রায় ৩৩ গুণ। আর দামে সাশ্রয়ের কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের পুষ্টির জোগানে এখন সেরার তালিকায় ডিম।
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। দাম কিছুটা বাড়লেও তা হাতের নাগালেই আছে। সাশ্রয়ী দামের কারণে পুষ্টি চাহিদার বড় অংশই সরবরাহ করছে ডিম। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে ডিম।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমে আছে ভিটামিন ‘এ ‘ই বি৬, বি১২, ফোলেট, ফসফরাসসহ প্রায় সব ধরনের ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, সেলিনিয়াম, থিয়ামিন। সপ্তাহে চারটি ডিম খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কমে যায়। সপ্তাহে ছয়টি ডিম খেলে স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কা ৪০ শতাংশ কমে। মাত্র দুটি ডিম নারীর দৈনিক প্রোটিন চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ পূরণ করতে পারে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ডিম খেলে ওজন কমানো সম্ভব। বহুমুখী গুণাগুণ হিসেবে সব বয়সের মানুষের জন্য ডিম একটি উত্তম খাদ্য। ডিম চোখের জ্যোতি বাড়ায়, অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। লিউটিন ও জিয়াজানথিন বার্ধক্যজনিত ক্ষয় রোধ করে। ডিমের ক্যারোলিন হার্টের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বাড়তি চাহিদা পূরণে ওমেগা ৩-এর মতো উপাদানও যুক্ত হচ্ছে ডিমে। বাংলাদেশের ডিমে সঠিক পরিমাণে ওমেগা-৩ বিক্রি হচ্ছে কি না, সেটি তদারকির সুপারিশ করেছেন পুষ্টিবিদরা। এ ছাড়া ডিম নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক মতবাদের অবসানের জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. শওকত আলী বলেন, বেশি ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এমন ধরনের মতবাদ চালু রয়েছে। আবার ডিমের কুসুম খাবার বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়। অথচ ডিমের কুসুমে ভালো কোলেস্টেরল বেশি পাওয়া যায়। কুসুম হলো সব ধরনের পুষ্টির মূল উপাদান। যেকোনো প্রাণিজ আমিষের চেয়ে ডিমের বায়োলজিক্যাল ভ্যালু বেশি। এ ছাড়া প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়।
মসিউর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ডিম খাওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। সেটি আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সে জন্য তুলনামূলক কম দামে সেটি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। ডিম উৎপাদনকারী খামারিদের আরো বিকাশের সুযোগ দিলে পুষ্টি নিরাপত্তায় বড় টেকসই অবদান রাখা সম্ভব।