1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জামাই-শ্বশুর নামা

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩

বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এলেই যেন ডেভিড বার্গম্যানের স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সামাজিক কার্যক্রম ফুরিয়ে যায়। এখানে তিনি জামাই। তার শ্বশুর ড. কামাল হোসেন ও স্ত্রীর প্রচারক হয়ে পড়েন। সারা হোসেন ও ড. কামাল দুইজনই নামকরা আইনজীবী।

ড. কামাল একজন দল বদলানো প্রবীণ রাজনীতিবিদ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ও তার মন্ত্রীসভার একজন শীর্ষ মন্ত্রী এবং এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা থেকে বাংলাদেশের সবশেষ নির্বাচনে ড. কামাল বিরোধী জোটের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। যে জোটের অন্যতম দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত এক দল জামায়াতে ইসলামী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থনে ভয়ঙ্কর যুদ্ধাপরাধ করেছিল জামায়াতে ইসলামী। এমনকি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।

তবে ইসলামপন্থী জোটকে পশ্চিমাদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করতে সেক্যুলার ভাব ধরে রেখেছিলেন ড. কামাল। আর এজন্য ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে বড় এক ভূমিকা পালন করেছে।

ডেভিড বার্গম্যান, ট্রাম্পের জামাই জ্যারেড কুশনারের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্বস্ততার সাথে তার ভূমিকা পালন করেন।

মার্কিন রাষ্ট্রের সাথে তার গভীর ঘনিষ্ঠতা থেকেই কথিত স্বাধীন মিডিয়া নেত্র নিউজ চালাতে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট অফ ডেমোক্রেসি থেকে একটি মোটা তহবিলই পাচ্ছেন বার্গম্যান। এছাড়া তার স্ত্রী সারা হোসেন মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইরান কমিটির জন্য) চেয়ারম্যানের পদও পেয়েছেন।

জেফ রিচেলসনের (ইউএস ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি) মতে, নেত্র নিউজ এনইডির দায়িত্ব পালন করছে। তারা মূলত মার্কিনদের ইচ্ছা মতো শাসন পরিবর্তনের ক্রিয়াকলাপে জড়িত মিডিয়া ও অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মের জন্য বাজেট সংগ্রহ করে।

তারা হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে একটি ভয়ঙ্কর অপপ্রচার চালিয়েছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোষ্ঠী সরকারের পতন ঘটাতে চায়। এমনকি তারা প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকেও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।

ভুয়া খবর ছড়িয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরিতে সিদ্ধহস্ত নেত্রনিউজ। কোভিডের সময় তারা লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর পূর্বাভাস দিয়েছিল। এখন তারা শ্রীলঙ্কার ধরনের অর্থনৈতিক পতনের পূর্বাভাস দিচ্ছে। যাচাই বা প্রমাণ ছাড়া সংবাদ প্রকাশ করে নেত্রনিউজ মূলত জনসাধারণের উদ্বেগকে উস্কে দিয়ে একটি গণ-অভ্যুত্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে।

বার্গম্যানকে তার বাংলাদেশী সমর্থক তাসনীম খলিল সাহায্য করেন। তিনি ডেভিডের ডিপ স্টেটের সঙ্গে যোগাযোগকে দেখভালও করে থাকেন।

ডেভিড বার্গম্যানের সহ-সম্পাদক তাসনীম খলিল। যিনি সুইডেনে স্ব-নির্বাসনে রয়েছেন। সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে একদল আইন প্রণেতাদের সামনে খলিলের সুপারিশের ঘটনা সামনে এসেছে। খলিল নিজেকে একজন স্বাধীন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে বিষদগার করে, একইভাবে সেও বক্তব্য তুলে ধরেছিল।

তবে ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের নিয়োজিত গুণ্ডাদের মাধ্যমে বহুবার আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।

২০০৯ সালে জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি সব ঠিকঠাক ছিল বলে জানান খলিল।

অথচ, ওই সময় বিএনপি-জায়ামাত সরকারের শাসনামলে ইসলামপন্থী সহিংসতার উত্থান ঘটেছিল।

খলিলকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই সরকারের সময় বাংলা ভাইয়ের মতো উপাদানগুলো অবাধে চলেছিল, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছিল। বিবিসির স্ট্রিংগার মানিক সাহার মতো সাংবাদিককে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে।

খলিলের মিথ্যার নৌকা ভেঙে যায় ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে অস্ত্র সংগ্রহের ঘটনাটি থেকে। ওই সময় ভারতের উত্তর-পূর্ব থেকে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ প্রমাণ পেয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন যদি নেত্র নিউজ একটি স্বাধীন আউটলেট হয়, তাহলে ড. কামাল হোসেনের কর ফাঁকি নিয়ে প্রতিবেদন করবে না কেন?

কর ফাঁকির মামলা নিয়ে ডেভিড আশ্চর্যরকমভাবে চুপ। কারণ বার্গম্যানের স্ত্রী সারা হোসেন ও ড. কামাল দুজনই বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাছে আইনি পরিষেবা থেকে অর্জিত আয় গোপন করেছিলেন। তারা দুজনই পরিচিত অ্যাডভোকেট। তাদের ল’ ফার্মেও বেশির ভাগ শেয়ার রয়েছে।

আরেকটি মূল বৈশিষ্ট্য যা ডেভিডের স্বাধীন তদন্তকারী হিসেবে করা দাবিকে নাকচ করে দেয়। তা হলো ডেভিড তার শ্বশুরের রাজনৈতিক স্বার্থকে ঘিরে লেখেন এবং প্রকাশ করেন।

জামায়াতের পক্ষে ডেভিডের পাইকারি ওকালতির কথাই ধরুন। একটি দল যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দখলদার বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য গণহত্যা অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল। সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের দৌড়ে দাঁড়িয়ে আত্ম-স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিরক্ষায় ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে। অথচ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যেসব দাবি তুলেছিল। তার মধ্যে এটিও একটি।

বিচারের শুরু থেকেই বার্গম্যান তার ব্লগের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের সাহায্য করার জন্য জামায়াত নেতাদের বক্তব্যের কথা বারবার তুলে ধরেছেন বার্গম্যান। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণআন্দোলন শুরু হলে সেখানে ডেভিড বার্গম্যানকে যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবী হিসাবে পরিচয় দেওয়া হয়।

২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে জামায়াত-বিএনপি একত্রিত হয়ে রাস্তায় সন্ত্রাসী অভিযানের একটি অভূতপূর্ব কাণ্ড শুরু করেছিল। এতে শতাধিক মানুষ মারা যায়। কিন্তু কথিতভাবে বার্গম্যানকে তখন নীরব বলে মনে হয়েছিল। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার তৎপরতা শুরু করলে সরকারের বিরুদ্ধে বারবার লিখতে থাকেন বার্গম্যান।

এর ঠিক পরের নির্বাচনে ২০১৮ সালে তার শ্বশুর বিরোধী জোটের প্রধান হিসেবে আবির্ভূত হন। বিএনপি এবং জামায়াতের ওপর নির্ভর করে তার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় জোট।

জাতীয় এবং পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ক্ষয়িষ্ণু গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে বার্গম্যান একটি অফশোর আউটলেট খোলেন। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট অফ ডেমোক্রেসি অর্থায়ন করেছিল।

জামায়াত যুদ্ধাপরাধকে অস্বীকার করার কারণে বার্গম্যান কিছু পরিচিত পাকিস্তানপন্থী তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

শর্মিলা বোস এমনই একজন যার নিবন্ধ নেত্র নিউজ গত বছর প্রকাশ করে। ওই খবরে দাবি করা হয় ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি নয়।

এমন অসত্য প্রকাশের আগে বার্গম্যান আওয়ামী লীগের নামে একটি জাল টুইটার হ্যান্ডেল শেয়ার করেন। এতে তিনি লিখেন, টুইটারে আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন করছে। বার্গম্যান এখনও অনেককে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি চালাচ্ছেন।

লেখক : সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত – প্রবীণ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক


সর্বশেষ - রাজনীতি