দেশের করোনা পরিস্থিতি যে সরকার বেশ দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছে, তা একটি মহল স্বীকার না করলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ভাইরাস নিয়ে একটি গোষ্ঠী শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে কখনো বলা হয়েছে সরকার মুজিব শতবর্ষ পালনের জন্য সংক্রমণের কথা গোপন করছে। সংক্রমণ সনাক্তের পর বলা হয়েছে মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের কারণে করোনা সংক্রমণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না এমন ধারণা তৈরির কম চেষ্টা করা হয় নি।
এরপর আরেকটা শ্রেণী চিকিৎসাব্যবস্থা কলাপস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ায়, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, মুসলমানের করোনা হয়না, এমন উদ্ভট বক্তব্য দিতে থাকে। সরকার যখন মহামারী নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্ণমাত্রায় লকডাউনের ঘোষণা দেয়, তখনও এই শ্রেণীটা ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে, মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে মহামারী ছড়ানোর চেষ্টা চালায়। কেউ কেউ বলতে থাকে করোনা আল্লাহর সৈনিক, এই রোগ শুধু কাফেরদের হবে। যখন দেখা গেলো স্বঘোষিত ধর্মের ইজারাদাররাও করোনায় মারা যেতে শুরু করলো, তখন তারা বলতে শুরু করলো এটা সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছেন, এই রোগে ধার্মিকের মৃত্যু হলে শহীদি মৃত্যু বলে গণ্য হবে। থানকুনি পাতা কান্ড ও বাচ্চার জন্ম হয়ে কি কি আলৌকিক বলে মারা যাওয়ার হাস্যকর বোগাজ গল্প নাহয় নাই বললাম।
যখন রোগটা তারা স্বীকার করে নিলো তখন বলতে শুরু করলো এই রোগের টিকা কাজ করবে না, এখানে মাইক্রোচিপ বসানো আছে তথ্য পাচারের জন্য। সাইড ইফেক্ট হবে, আবার টিকা নিলে ঈমান থাকবে না। কাল্পনিক চরিত্র মামুন মারুফের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের সাক্ষাৎকার কিংবা কাল্পনিক মুসলিম বিজ্ঞানী ফাইজারের গালগল্প সবই ছিলো করোনা মোকাবেলায় স্বভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে থামিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। কিন্তু শেখ হাসিনার ম্যাজিকাল নেতৃত্বে তাদের সেসকল ষড়যন্ত্র সফলতার মুখ দেখে নি।
শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক সাফল্যের দৃষ্টান্ত যথাসময়ে অক্সফোর্ডের টিকা সরবরাহের পদক্ষেপ। বাংলাদেশ গত সেপ্টেম্বরে চিন থেকে টিকা আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছিল। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শর্তে বিনামূল্যে টিকা দেয়ার লক্ষ্যে চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু ৫ অক্টোবর চিন যৌথ বিনিয়োগের শর্ত আরোপ করে এবং সিনোভ্যাক্স টিকার আনুমানিক মূল্য ধরা হয় ৩০ ডলার বা প্রায় আড়াই হাজার টাকা।
অক্সফোর্ডে আবিষ্কৃত টিকা সুলভ মূল্যে পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে টিকা প্রস্তৃতকারী প্রতিষ্ঠান তথা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়। ভারতে উৎপাদিত ও পরীক্ষিত বলে সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের কাছে ভারত সরকারের চেয়ে কিছুটা বেশি মূল্যে বিক্রি করবে স্বাভাবিক বিষয়। বাংলাদেশে টিকা দেয়ার খরচ হবে আনুমানিক ৫ ডলার। বাংলাদেশ সরকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ডোজ ফ্রি টিকা বিতরণ করবে, যা ৫ ডলারেই কেনা হবে। অন্যদিকে সেরাম ইনস্টিটিউট সেই টিকা বাজারে বিক্রয় করবে ১৩ ডলারে। কিন্তু এ নিয়েও প্রথম আলো সহ একটি গোষ্ঠী যারা শুরু থেকেই অপপ্রচার চালিয়েছিলো তারা আবার অপপ্রচার চালাতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
কোভিড-১৯ এর মূল্য নিয়ে অপপ্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ভারতের তুলনায় অন্য যে কোনও দেশে কম দামে করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়া গেলে সেখান থেকেই কিনবে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে দর যাচাই করে টিকা কেনা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সব মহল সতর্ক অবস্থানে আছেন যাতে দেশের স্বার্থ রক্ষা করে সরকার যথাসময়ে টিকা আমদানি করতে পারে।
করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ ও যথাসময়ে টিকা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানানোর মতো উদারতা না থাকতে পারে, কিন্তু বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অপপ্রচার অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমাদের সতর্ক থাকবে হবে দেশবিরোধী গুজব প্রচারকারীদের বিষয়ে, যারা এই মহামারী পরিস্থিতির শুরু থেকেই শান্তি, সুন্দর ও কল্যানের বদলে অশান্তি, অসুন্দর ও অকল্যাণকর ব্যাপারে জড়িত ছিলো।
- লেখক – হামজা রহমান অন্তর, সহ-সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।