1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গণতন্ত্রের ভাষা সহিংসতা নয়

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩

গত ২৮ অক্টোবরের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করে। আবারও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলে গেলো সংঘাত-সহিংসতার দিকে। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ইতিবাচকতা জরুরি। আমরা রাজনৈতিক দৈন্যদশা কিংবা বিভাজন থেকে বের হতে পারছি না। যারা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন তাদের কৌশলের অভাব রয়েছে অনেক। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার আশ্রয় নিলে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেউলিয়াপনার পরিচয় মেলে। রাজনৈতিক দলগুলো আর সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় জনসমর্থন আদায় করতে পারছে না, এমনটিই প্রতীয়মান হয় নানাভাবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ক্ষমতা বদলের জন্য নানা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি আদায়ের রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে দলটি কয়েকটি বড় ভুল করেছে। প্রথমত, তারা আন্দোলনের সময় যাচাইয়ে ব্যর্থ হয়েছে।

রাষ্ট্রের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কিংবা নিজেদের দলীয় স্বার্থ আদায়ে আন্দোলন যেকোনো রাজনৈতিক দলের বড় অস্ত্র। সেজন্য চাই উপযুক্ত সময়। সময়ে যেকোনো ঘটনাপ্রবাহ আন্দোলনে গতি দিয়ে থাকে। রাজপথে আন্দোলনরত অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের কোনো অংশের সঙ্গে তাদের সংস্পর্শ বা সংঘর্ষ অনেক সময় আরও বড় আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়। এমনটি আমরা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় দেখেছি। আমাদের মতো রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো ক্ষেত্রে অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণেই সচরাচর রাজনৈতিক আন্দোলন গতি পায়। ১৯৮৭ সালে আমরা এমন আন্দোলন দেখেছি। ১৯৯০ সালে ‘গণতন্ত্র মুক্তি’ আন্দোলনের সময়ও আমরা একই দৃশ্য দেখেছি। এবার যেমন অতীতেও তেমন আমরা দেখেছি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারের নামে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি ও সমমনারা অহিংস কিংবা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় তো নয়ই; বরং জনঅধিকার আদায়ের নামে আন্দোলন সহিংসতায় রূপ দিয়েছে। কিন্তু আমরা জানি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সহিংসতার বিন্দুমাত্র স্থান নেই। আমরা এও দেখছি, বিএনপি ও সমমনারা হরতাল-অবরোধের ডাক দিচ্ছে কিন্তু তাদের কর্মসূচি চলাকালে কিংবা এর পূর্বাপর যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ যত জীবনবৈরী ঘটনা ঘটছে এর দায় তারা না নিয়ে অন্যের ওপর চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে দায় স্বীকার করার অনেক নজির আমাদের সামনে রয়েছে। কারণ এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের সাংগঠনিক শক্তি কতটুকু এর জানান দেয়। চলমান হরতাল-অবরোধে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ ককটেলসহ কিংবা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন এবং তাদের দলীয় পরিচয়ও মিলেছে—এমন নজিরও আছে। তার পরও সংশ্লিষ্ট দলের নীতিনির্ধারকরা ভিন্ন সুরে কথা বলেন, যা স্ববিরোধিতা বই কিছু নয়।

সময় বদলেছে। মানুষের জীবনে গতি এসেছে। সবাই নিজের যাপিত জীবনের খুঁটিনাটি নিয়েই ব্যস্ত। অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতিই আমাদের এমন সুযোগসুবিধা করে দিয়েছে। এই যে সময় বদলেছে তা মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিএনপির সংঘাত-সহিংস আন্দোলন মানুষ এড়িয়ে চলেছে। সমাজ এগিয়ে চলেছে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার দিকে। ফলে সহিংস রাজনৈতিক পথ ভোঁতা অস্ত্রের মতো। তাছাড়া বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগছে। একটি আন্দোলন সফল ও বেগবান করতে যে ধরনের কর্মী প্রয়োজন তা বিএনপির নেই। নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতৃস্থানীয়দের বিষয়ে বিএনপির উচিত ছিল পর্যবেক্ষণ করা। পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অ্যাসেসমেন্ট করা হলে আন্দোলন চালু রাখার সক্ষমতা তাদের রয়েছে কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা আগেই গড়ে উঠত। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলনের প্রকৃতিই এমন যে, জনগণের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক সংকট ও মূল্যস্ফীতি। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে মোটেও সোচ্চার নয়। তাতে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি কতটা জনবান্ধব তা-ও স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এর বিপরীতে আমরা দেখছি, জনজীবনের এ সংকট নিরসনে কিংবা নিম্ন ও সাধারণ আয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে সরকার নানানরকম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিসর বাড়িয়েছে। সরকারের জনকল্যাণমূলক এ কর্মসূচিগুলোর কথা আন্দোলনকারীরা আমলে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।

মানুষ প্রত্যাশা করছে রাজনৈতিক মহল থেকে তারা একটি ভালো উত্তর পাবে। প্রত্যাশার কথা শুনতে পাবে। কিন্তু এখনও এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো আন্দোলন বিএনপি করেনি। তাদের আন্দোলন যে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তা এখন স্পষ্ট। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপির আন্দোলনের প্রতি তারা কোনো সহানুভূতি জানাচ্ছে না এবং আস্তে আস্তে তাদের আন্দোলন গতি হারিয়ে ফেলছে। অর্থাৎ সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। পরিস্থিতি যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়েছে। বরং জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। অতীতেও তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল। তখনও সফল হয়নি। এ থেকে দলটির শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। এমন প্রত্যাশাও আমাদেরও মধ্যে ছিল। শান্তিপূর্ণ, গঠনমূলক, যৌক্তিক এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দাবি আদায়ের আন্দোলন গণতন্ত্রের শোভা বর্ধন করে। কিন্তু সে পথ থেকে অনেকাংশে দূরে সরে যাওয়ায় এমনটি প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না।

জ্বালাও-পোড়াও কিংবা সহিংস রাজনৈতিক পন্থার আশ্রয় না নিয়ে বিএনপির উচিত ছিল নির্বাচন প্রক্রিয়ার ধারা অনুসরণ করে এগিয়ে আসা। কারণ নির্বাচন কমিশনের তরফে স্বচ্ছ নির্বাচনের নিশ্চয়তা যেমন বারবার দেওয়া হচ্ছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচনে স্বচ্ছতার ব্যপারে তার অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যক্ত করছেন। একই সঙ্গে আমাদের এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশিদের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ রয়েছে; যদিও এমনটি অনাকাঙ্ক্ষিত-অনভিপ্রেত। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের যারা নাক গলানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন তারা যেমন দেশ-জাতির জন্য কল্যাণকর কিছু করছেন না, তেমনি নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যও ভালো কিছু করছেন না। তারা যদি এখনও নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের পথ আরও সহজ হবে। তারা নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে লড়াই হবে। আর গণতন্ত্রে এমন লড়াই আমরা প্রত্যাশা করি। ভোটের লড়াইয়ে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তা উৎসবমুখর পরিবেশ গড়ে তোলে। নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে যত অভিযোগ রয়েছে তা প্রতিহত করার অনেক উপায় আছে। এখন প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগ। সামাজিক ও সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে দেশের যেকোনো প্রান্তে বসে যেকোনো খবর পাওয়া সম্ভব। শুধু দেশেরই নয়, গোটা দুনিয়ার খবর নেওয়াই সম্ভব। রাজনৈতিক কর্মসূচি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেকোনো দলের নিয়মতান্ত্রিকভাবে পালনের অধিকার স্বীকৃত। কিন্তু এ কর্মসূচির ভাষা কিংবা ধরন এমন হতে হবে যা জীবনবৈরী নয়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় সরকারের তো বটেই, পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের দায়ও কম নয়।

গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ অত্যন্ত জরুরি। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে জনগণেরই উপকারে আসে। জনতার স্রোতের কাছে সবাই নগণ্য। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনতার স্রোতই নির্ধারণ করে দেয় রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে কাজ করবে। দেশে রাজনৈতিক সংকট তীব্র হচ্ছে। সংকট তীব্র হওয়ার পেছনে বড় দুটি দলেরই দায় রয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। চলমান আন্দোলনের প্রক্রিয়া জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার পাশাপাশি জনদুর্ভোগও বাড়িয়ে চলেছে। তাই দেশ-জাতির কথা ভেবে সহিংস রাজনৈতিক পথ থেকে বিএনপিকে সরে আসতে হবে। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের মনে ভীতি জন্মেছে। মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে কোনো রাজনৈতিক দলেরই কর্মসূচি পালন কিংবা অধিকার আদায়ের নামে এমন কিছু করা উচিত নয়, যা জননিরাপত্তা তো বটেই দেশ-জাতির ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

আমাদের রাজনীতির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, যা জাতির গর্ব। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই রাজনৈতিক ইতিহাস ও আদর্শের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এ দায়িত্ব পালন করা উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদেরই। আমাদের রাজনৈতিক অর্জনের খতিয়ান অনেক দীর্ঘ-বিস্তৃত। সেই খতিয়ান কেন এবং কীভাবে শ্রীহীন হয়ে পড়ল, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রয়োজন। নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কাজেই নির্বাচনী পরিবেশ উৎসবমুখর হবে এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক এমন কোনো পরিস্থিতির যেন উদ্ভব হবে না, যাতে জননিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ে। সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে জননিরাপত্তায়। একই সঙ্গে রাজনীতির নামে অপরাজনীতির পথ রুদ্ধ করে দিতে হবে দেশ-জাতির ভবিষ্যতের প্রয়োজনে। সহিংসতা নয়, অহিংসা হোক রাজনীতিকদের মূল চেতনা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি জরুরি। পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। গণতন্ত্রে মতভিন্নতা থাকতেই পারে এবং এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু এ মতভিন্নতা কেন্দ্র করে এমন কোনো পরিস্থিতির যাতে উদ্ভব যেন না হয় যা সম্পদ, অর্থনীতিসহ জীবনযাপনের অন্যান্য অনুষঙ্গ কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। যারা আন্দোলন কিংবা অধিকার আদায়ের নামে সহিংস রাজনীরিত পথ ক্রমাগত প্রশস্ত করছেন তারাও জনকল্যাণের কথাই বলেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এমন বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কিংবা জিইয়ে রেখে কোনোভাবেই কি জনকল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব?

লেখক: ড. জিয়া রহমান – সমাজবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি