1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বছরের শেষ চমক মেট্রো রেল

এম নজরুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২

অবশেষে রাজধানীবাসীর অপেক্ষার অবসান হলো। ২৮ ডিসেম্বর বুধবার উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের উত্তরা পার্ক মাঠে জনসমাবেশে অংশ নিয়ে মেট্রো রেলের উদ্বোধন ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর স্টেশনে এসে কাটলেন ট্রেনের টিকিট, ওড়ালেন পতাকা, চড়লেন ট্রেনে। রাজধানীর নগরজীবনে স্বস্তির বার্তা নিয়ে যাত্রা করল দেশের প্রথম মেট্রো রেল।

বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা ট্রেন চলাচল করবে। মাঝের কোনো স্টেশনে আপাতত ট্রেন থামবে না। আগামী ২৬ মার্চ থেকে সব স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে।
গত জুনে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলাম। বাংলাদেশে মেট্রো যুগে প্রবেশের ইতিহাসেরও সাক্ষী হলাম।

এজাতীয় অনুষ্ঠানে গেলে আমি মানুষের মনের ভাষা পড়তে চেষ্টা করি। তাদের উজ্জ্বল মুখ দেখে প্রতিক্রিয়া বুঝতে চেষ্টা করি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বললেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক, আজ বাংলাদেশ তথা ঢাকায় আমরা দিতে পারলাম, সংযোজিত করতে পারলাম। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। ’ মেট্রো রেল উদ্বোধনের ফলে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে চারটি মাইলফলক ছুঁলো বাংলাদেশ। প্রথমত, মেট্রো রেল নিজেই একটি মাইলফলক। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ প্রথম বৈদ্যুতিক যানের যুগে প্রবেশ করল। তৃতীয়ত, ডিজিটাল রিমোট কন্ট্রোল যান এটি, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি ধাপ। চতুর্থত, বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন যানের যুগে প্রবেশ করল।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। গড়ে উঠবে সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা। দেশের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু নিছক একটি বড় সেতু নয়, এটি দুঃসাহসী একটি স্বপ্নের নাম। যমুনা সেতু উত্তরবঙ্গ থেকে ‘মঙ্গা’ শব্দটি দূর করে দিয়েছে। এটিই যমুনা সেতুর একটি পরোক্ষ সুফল। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে পর্যটনকেন্দ্র। ঢাকা থেকে সরাসরি সেখানে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যাবে। পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমবে। বাড়বে বাণিজ্যিক গতি। লক্ষ্যে স্থির, বিপদে অবিচল থাকলে পাহাড়সম বাধাও যে ডিঙানো যায় তার বড় নজির পদ্মা সেতু প্রকল্প। ঠিক একইভাবে মেট্রো রেলও নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, দেশের প্রথম উড়াল মেট্রো রেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। মেট্রো রেলে অল্প সময়ে অধিক সংখ্যায় যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে ছোট যানবাহনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমবে। জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার বহুলাংশে কমে যাবে। ঢাকা মহানগরীর যাতায়াতব্যবস্থায় ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ হবে। মহানগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। যানজট বহুলাংশে কমবে। যানজটের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা সাশ্রয় হবে।

মেট্রো রেল সম্পূর্ণ বিদ্যুত্চালিত বিধায় কোনো ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হবে না। ফলে বায়ুদূষণ ঘটার আশঙ্কা নেই। মেট্রো রেল অল্প সময়ে অধিক সংখ্যায় যাত্রী পরিবহন করবে বিধায় ছোট যানবাহনের ব্যবহার বহুল সংখ্যায় কমে যাবে। এতেও জ্বালানির ব্যবহার কমবে। এটা বায়ুদূষণ কমাতে ভূমিকা রাখবে।

মেট্রো রেল হাজার হাজার কর্মঘণ্টা সাশ্রয় করবে, যে সময় উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখা যাবে। অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে নিরাপদ ও সর্বনিম্ন দুর্ঘটনার যোগাযোগ মাধ্যমে পরিণত হবে মেট্রো রেল। মেট্রো রেল ব্যবহারের কারণে রাস্তায় যানবাহনের চাপ কমবে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য মূল ঢাকায় বসবাসের ওপর চাপ কমবে। এতে ঢাকা শহর আগের চেয়ে আরো বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।

ঢাকার মেট্রো রেলের প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শোকের ঘটনাও। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের কিছুদিন পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হন। ওই সাত জাপানি নাগরিকের মধ্যে ছয়জন ছিলেন দুটি মেট্রো রেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রো রেল ডিপোতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে সরকার।

কোনো উন্নয়নই এক প্রান্তিক নয়। অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ে। মানুষের কর্মসংস্থান হয়, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। আর তার জন্য একটি শুভ সূচনার প্রয়োজন। মেট্রো রেল হাজার হাজার কর্মঘণ্টা সাশ্রয় করবে। মেট্রো রেলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও নতুন আবাসন গড়ে উঠছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে।

চলতি বছরের শেষ দিকে এসে দেশের রাজনীতিতে কিছুটা হলেও অস্থিরতা দেখা যায়। বছরজুড়েই অর্থনীতি ছিল আলোচনায়। ঠিক এমন একটি সময়ে মেট্রো রেল বছর শেষের চমক। উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক।

লেখক : এম নজরুল ইসলাম – সভাপতি, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ।


সর্বশেষ - রাজনীতি