মানুষ সবসময়ই পৃথিবীকে পোষ মানাতে চায়। মানুষ তার চারপাশের পরিবেশ, তার প্রিয়তম এবং প্রিয়জন সবাইকে পোষ মানাতে চায়, এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ভোরের আলো আর রাতের অন্ধকার কিংবা সূর্য অথবা আকাশের চাঁদ সবকিছুকেই পোষ মানাতে সে সদা সচেষ্ট।
কোন কিছুতে পোষ মানাতে পারলে তবে সে আত্মতুষ্টি লাভ করেন। নিজেকে সফল মনে করে অন্যদিকে সেইটা না পারলে মনে হয় নিজেকে পৃথিবীর সবচাইতে দুঃখী মানুষ। অর্থ্যাৎ মানুষ তার জীবনের সফলতার মাপকাঠি মনে করেন তিনি জীবনের কতটা চ্যালেঞ্জকে পোষ মানাতে সক্ষম হয়েছেন তা দেখে। আবার ব্যর্থতাও ঠিক একইভাবে নির্ধারণ করেন।
মানুষ তাঁর প্রয়োজন মতো সবকিছুতেই পোষ মানানোর যুদ্ধটাকে সে নিজের জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। বিনিদ্র অবস্থায় তো বটেই, অন্ধকারে ঘুমের মধ্যেও সে তার অধরা স্বপ্নকেও অবচেতন মনে পোষ মানানোর চেষ্টা করে থাকেন, যখন তিনি অপারগ হন তখন তাকে বলেন দুঃস্বপ্ন।
দিনের অন্ধকারে চেতন মনে পোষ মানানোর সংগ্রাম আর রাতের অন্ধকারে অবচেতন মনে স্বপ্নকেও পোষ মানানোর দুঃস্বপ্নের ঘোরে মানুষ তার জীবন বেলা ঘনিয়ে আনেন অনন্তকালের যাত্রায়। পরিশেষে এবং বেলাশেষে জীবনের হালখাতায় অপূর্ণ থেকে যায়।
মানুষ তার পুরো জীবনে পোষ মানানোর সফল অথবা ব্যর্থ সংগ্রামে হিসেবের খাতায় অনেক কিছুই পোষ মানাতে পারলেও তার নিজের হৃদয়কে পোষ মানাতে পারেন না। এটা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মানুষ তার নিজের হৃদয়কে যদি পোষ মানাতে পারতেন তবে পৃথিবীতে তার চালচলন ও কর্মতৎপরতায় অনেক ভিন্নতা থাকতো, অনেক সুকর্মে হয়তো নিয়োজিত থাকতেন, অপকর্ম থেকে দূরে থাকার সুযোগও হয়তো বেড়াতে পারতেন, কিন্তু প্রকৃতঅর্থেই হৃদয় তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। আর তাই বলা যায় হে হৃদয়! তুমি কার পোষা পাখি…।
মাঝে-মধ্যে প্রিয়জন কিংবা প্রিয়তমার পোষা পাখিতে রূপান্তর হয় মানুষের হৃদয়। যেথায় নিজের নিয়ন্ত্রণ একেবারেই থাকেনা! থাকেনা বলেই মানুষ প্রিয়জন বা প্রিয়তমা হারানোর বেদনসিক্ত ক্ষত মুছতে পারেন না। মুছতে পারেনি পৃথিবীর কোন মহামানব, অতিমানব কিংবা সাধারণ মানব। আর এটাই পৃথিবীর রূপ। বিধ্বস্ত হৃদয় হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘজীবি হওয়ার উপাদান।
লেখক : হাসান আল বান্না – কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক