1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রবীন্দ্রনাথের আর্জেন্টিনা এবং মধুসূদনের ফ্রান্স!

হামজা রহমান (অন্তর) : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২

যুদ্ধবাজ সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নামে দেশটি বেশি পরিচিত হলেও শিল্পসাহিত্যের বিস্তার ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ফ্রান্সের খ্যাতি জগৎ জুড়ে। আমাদের সনেট প্রবর্তক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বর্ণবাদিতার শিকার হয়ে ইংল্যান্ড ছেড়ে ১৮৬০ সালে চলে গিয়েছিলেন ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে। সেখানে চরম দারিদ্রতায় স্বদেশের প্রতি তীব্র আকুলতা থেকে তিনি রচনা করেন তার জগৎবিখ্যাত সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা ‘কপোতাক্ষ নদ’। ফ্রান্স দেশটি যে বর্ণবাদবিরোধী সেটা তাদের বৈচিত্রময় বহুজাতিক জাতীয় ফুটবল দলের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়।

আমাদের ‘জন কিটস’ খ্যাত আরেক অকালপ্রয়াত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার কবিতায় স্মরণ করেছেন ফ্রান্সকে। তিনি লিখেছেন,
“ধূসর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালী,
স্নিগ্ধ ইতালী থেকে ছুটে গেছি বিপ্লবী ফ্রান্সে
নক্ষত্র নিয়ন্ত্রিত নিয়তির মত
দুর্নিবার, অপরাহত রাইফেল হাতে;
-ফ্রান্স থেকে প্রতিবেশী বর্মাতেও।”

ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালে আজ ফ্রান্সের মুখোমুখি আর্জেন্টিনা। লাতিনের সবুজ এই দেশটির রোসারিও শহরে জন্মেছিলেন বিপ্লবী চে গেভারা। বিপ্লবের পথপ্রদর্শক যদি বাস্তিল দূর্গের পতনকারী ফরাসি বিপ্লব হয়, তবে চে গেভারা একাই এক মহাবিপ্লবের নাম। চে’র শহরেই জন্মেছেন ফুটবলের রাজপুত্র, কিংবদন্তি লিওনেল মেসি, আজকের ম্যাচে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।

চে গেভারার মতো মহাবিপ্লবীর দেশ আর্জেন্টিনা, ম্যারাডোনা, মেসির মতো ফুটবল ঈশ্বরের দেশ আর্জেন্টিনা, ট্যাঙ্গো নৃত্যের মূর্ছনায় মাতানো দেশ আর্জেন্টিনা, বিশ্ব সাংস্কৃতিক ইতিহাসে সমৃদ্ধ দেশ আর্জেন্টিনা, একইসঙ্গে বর্ণবৈষম্যের অন্ধকার ইতিহাসের দেশও আর্জেন্টিনা। এই দেশের জাতীয় ফুটবল দলে কখনো দেখা যায়না কোনো কৃষ্ণাঙ্গকে।

আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৪ সালে পেরু এবং মেক্সিকো ভ্রমণের পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে আর্জেন্টিনায় যাত্রাবিরতি করে। এখানে আতিথিয়েতা গ্রহণ করেন আর্জেন্টাইন নারীবাদী নেত্রী, লেখিকা ও বুদ্ধিজীবী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাড়িতে। ওকাম্পো পড়াশোনা করেছেন প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থাৎ ফ্রান্সে। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ১৯১৪ সালে গীতাঞ্জলি ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয় এবং সেই অনুবাদ পড়েই ওকাম্পো রবীন্দ্র গুণমুগ্ধ হয়ে পড়েন। ওকাম্পোর এই বাড়ীতে প্রায় ২ মাস ছিলেন রবীন্দ্রনাথ এবং এসময় ৩০টি কবিতা রচনা করেন।

“আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী…” রবীন্দ্রনাথের জগৎবিখ্যাত এই গানটি তিনি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে নিয়েই লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ভিক্টোরিয়া শব্দের বাংলা অনুবাদ করে রেখেছেন ‘বিজয়া’। বলার অপেক্ষা রাখেনা তীব্র বন্ধুত্বপূর্ণ, কেউ কেউ বলেন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো তাদের মধ্যে। ভারতবর্ষে ফেরার পথে ওকাম্পোর বাড়ীতে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত চেয়ারটি তিনি সযত্নে জাহাজে তুলে দিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের আর্জেন্টিনা নাকি মধুসূদনের ফ্রান্স, কে হাসবে শেষ হাসি? আজকের খেলায় যে দলই জিতুক, আমরা যেনো আমাদের বিশ্বমানবতা ও বিশ্বনাগরিকগণের মাঝে সৌহার্দপূর্ণ ইতিহাস ভুলে না যাই।

লেখক : হামজা রহমান (অন্তর), কলামিস্ট ও ছাত্রনেতা 


সর্বশেষ - রাজনীতি