গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যাওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্টের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সমালোচনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘গত ১৪ ডিসেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস যেভাবে মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পক্ষের স্বার্থসিদ্ধির সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তা উদ্বেগজনক।’
বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে কয়েকটি দেশের কূটনীতিকগণ যেভাবে বক্তব্য রাখছেন ও অংশগ্রহণ করছেন তা দৃষ্টিকটু ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। তারা বিদেশি কূটনীতিকদের শিষ্টাচার বজায় রেখে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ও সমাজের সকল শ্রেণি-গোষ্ঠীর মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া এ বিবৃতি পাঠান।
এতে বলা হয়, গণমাধ্যমে সূত্রে জানা যায়-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মান্যবর রাষ্ট্রদূত বিএনপি সমর্থিত ‘মায়ের ডাক’ নামক একটি সংগঠনের আহ্বানে ২০১৩ সালে একজন বিশেষ ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ শুনতে ঢাকা শহরের একটি বাড়িতে উপস্থিত হন। একই সময়ে খবর পেয়ে ‘মায়ের কান্না’ নামক সংগঠনের কর্মীরা তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তাকে অবহিত করার জন্য একটি স্মারকলিপি প্রদানের চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। মায়ের কান্না নামক সংগঠনটি সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল জিয়ার সময়ে ১৯৭৭-৭৮ সালে বিচারের নামে হত্যা ও গুমের যে ঘটনা ঘটেছে এতে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের মানবাধিকার রক্ষার আবেদন নিয়ে রাষ্ট্রদূতের স্মরণাপন্ন হয়েছিলো। এদের কথা শুনতে অপারগতা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দ্বৈত আচরণের বহিঃপ্রকাশ, যা দুঃখজনক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পরিতাপের বিষয় পশ্চিমা দেশগুলো যেমন-যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকারের কথা বলে। অথচ তারাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের স্বঘোষিত খুনি ও একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি যেকোনো ধরনের মানবধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার।
তারা আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা শিক্ষকসহ দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা, ৭১’র গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিভিন্ন সামরিক শাসনামলে হত্যা ও গুমের যে ঘটনা ঘটেছে আমরা সেসব বিষয়েও মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ যারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষার দাবি করেন তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য দাবি করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিদেশি কূটনীতিকদের শিষ্টাচার বজায় রেখে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ও সমাজের সকল শ্রেণি-গোষ্ঠীর মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে।