1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সাম্প্রদায়িকতার বীজ থেকে মহিরুহ যেন তৈরি না হয়

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার জন-মানসের সিরিয়াস সাইকোএনালিসিস হওয়া দরকার। এটা উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের ভাবা উচিত। কারণ, ধীরে ধীরে এটা সাম্প্রদায়িক রূপ নিচ্ছে এবং বৈরি প্রতিবেশিতে পরিনত হচ্ছে। আমার নিজের কিছু সাইকোএনালিসিস আছে, কিন্তু এতো কম পরিসরে তা বোঝানো মুশকিল হবে। কিছু গালিগালাজও শুনতে হবে। তবু কয়েকটা

কথা বলিঃ
এক। আপনাদের মনে আছে কি না আমি একবার লিখেছিলাম যে আমি উনিশটা বিয়ের সফল ঘটক, নিজেরটা ধরলে কুড়ি টা। কিন্তু বিয়ের পর কিছু দম্পত্তি খুব ভাল থাকা সত্বেও আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছে কোন ঝগড়া বা কারণ ছাড়া। কেন এমন করলো তাঁরা তা জানতে এক হার্ভার্ড মনোবিজ্ঞানীর শরনাপন্ন হই। তিনি ব্যাখ্যা করলেন- এঁরা যখন নিজেদের সুখী জীবনের জন্য মনে করে অন্য কারো অবদান আছে তখন কৃতজ্ঞ হবার পরিবর্তে নিজের ইগোর জন্যে ডিনায়েলে চলে যায়। তাই সামনে এলেই তো মনে পড়ে, তা এড়াতে নিজেরা দূরত্ব তৈরি করে। আর যাঁরা ভাল মানুষ তাঁরা মনে রাখে ও কৃতজ্ঞ হয় এই অবদানের জন্যে।

এই গল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের বাঙালির সম্পর্ক কী? তা হলো এই বিয়ের মতোই যখনই তারা মনে করে যে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে নিজেরা যুদ্ধে জড়িয়েছে, মিলিয়নস মানুষদের আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক লবি করেছে যা না করলে বাংলাদেশ কে আজ প্যালেস্টাইনের মতো ধুকে ধুকে মরতে হতো তখন কিছু মানুষ নিজেদের ইগোর কাছে ছোট হয় এবং অকৃতজ্ঞের মতো ডিনায়েলে ভোগে, ইন্ডিয়া বিরোধিতা করে।

দুই। ইন্ডিয়া নিজের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে কিন্তু বিশাল ঝুঁকিও নিয়েছে। এই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না, এমন কী ইন্ডিয়াও কিছু করতে পারতো না যদি না শেখ মুজিবের মতো নেতা, ১৯৭১ সালের বিশ্বে চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা নিয়ে ভোটে জিতে, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ কে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে না যেতেন। সুতরাং এটা ইন্ডিয়ার জন্যেও বিশাল রাজনৈতিক বিজয় ও লাভ। চিরশত্রু পাকিস্তানকে ভেঙে দূর্বল করার সুযোগও বাংলাদেশ এনে দিয়েছিল- তাই পারফেক্ট ম্যারিজ বলা যায় বিশ্ব রাজনীতিতে। (আমার ইংরেজিতে লেখা ছোট্ট প্রবন্ধ আছে এটা নিয়ে)। সুতরাং ইন্ডিয়ারও মনোভাব এমন হওয়া উচিত না যে এই স্বাধানতা বাংলাদেশ কে উদ্ধার করে দেয়া। বরং মিউচুয়াল বেনিফিশিয়াল। কিছু পলিটিক্স ও পলিসি সেই বিগ বসের মতো বৈরিতা তৈরি করছে।

তিন। কিছু মানুষ এখনো পাকিস্তানপন্থী। এরা এতোটাই ধর্মান্ধ যে শুধু মুসলমান শুনলেই তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে। দুখের বিষয় হলো অপ্রিয় হলেও সত্যি যে এভাবেই মুসলমানদের মানস তৈরি হয়। ধর্মগ্রন্থেও বিধর্মীদের নিয়ে প্রচুর ভাল কথা বলা যেমন আছে তেমনি মন্দও বলা আছে। বিশেষ করে পৌত্তলিক পুজা নিয়ে। এইদল কোন কারণ ছাড়াই ইন্ডিয়া বিরোধী ধর্মের কারনে।

চার। বিগত সরকারগুলো কেউ কেউ আন্তর্জাতিক অস্ত্রব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত হয়ে ব্যাপক অস্ত্রসস্ত্র ইন্ডিয়ার নানান বিচ্ছিন্নতাবাদী দল যেমন গূর্খা, নাগা, মিজোদের ইন্ধন যুগিয়েছে যা ইন্ডিয়ার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। অন্যদিকে ইন্ডিয়াও শান্তিবাহিনির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাশকতায় ইন্ধন যুগিয়েছে। এই বৈরিতা কিছু মানুষের মধ্যে স্থায়ী দাগ কেটে দিয়েছে।

পাঁচ। বর্তমান সরকারের প্রতি ভারতের প্রকাশ্য সমর্থন অটোম্যাটিক্যালি বিএনপি-জামাত সমর্থকদের নাখোশ করেছে এবং তা খেলার মধ্যেও প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।

ছয়। ইন্ডিয়ার বর্তমান সরকারের হিন্দুত্ববাদী নীতি ও কোন কোন প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপরে অত্যাচার, বানিজ্য ও পানি সম্পদের ওপরে আধিপত্য একটি শ্রেনী কে চিরশত্রুতে পরিনত করেছে। এরা ভারত বিরোধিতা করবেই।
সাত। সদ্য বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলায় ইন্ডিয়ার সমর্থকদের বিপক্ষ অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। যা বহু নিরপেক্ষ বাংলাদেশিদের হতাশ করেছে এবং বাধ্য করেছে ভারত বিরোধী হতে।

উপসংহারঃ এগুলো ছাড়াও হয়তো আরো কারণ আছে। কিন্তু দুটো প্রতিবেশি দেশ আরো সিমবায়োটিক হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষজনেরও বিশ্বরাজনীতি বুঝতে হবে। ভারত একটি বিরাট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। আমেরিকাও ভারতকে চটাবে না, কারণ চিন কে ঠিক রাখতে ইন্ডিয়াকে দরকার। আবার বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান সবার জন্যেই দরকারি। পাকিস্তান এরমধ্যেই ব্যর্থ গণতন্ত্র ও অর্থনীতিতে রূপ নিয়েছে। জঙ্গিবাদ বা ধর্মীয় উন্মত্ততা ধ্বংস করতে এদেরকে উস্কে দেবে পশ্চিমা শক্তিরা। তাই বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার জনগণের ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরালো থাকা উচিত নিজেদের পারস্পরিক স্বার্থে। এই সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে একমাত্র উপাদান- সাম্প্রদায়িকতা! অতএব সাধু সাবধান! খেলা নিয়ে বিরোধ ও বৈরিতাকে খাটো করে দেখবেন না। এটাই হয়তো সেই সাম্প্রদায়িকতার প্রথম বীজ যা থেকে মহিরুহ যেন তৈরি না হয়!

লেখক : সেজান মাহমুদ – বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান সাহিত্যিক, গীতিকবি, ছড়াকার কলামিস্ট এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানী, অধ্যাপক ও ডিন ফর একুইটি, ইনক্লুশন, এন্ড ডাইভার্সিটি। ফ্রাঙ্ক নেটার স্কুল অব মেডিসিন, কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটি, কানেকটিকাট।


সর্বশেষ - রাজনীতি