1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

চাঁদপুরে বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদনে সফল উদ্যোক্তারা

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩

চাঁদপুরে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছেড়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) সারের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে এই জেলার কৃষকেরা এখন ব্যাপক হারে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার শুরু করেছেন। ফলে জেলার বিভিন্নস্থানে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের উৎপাদন। মাটির উর্বরা শক্তি বাড়িয়ে চাষে উপকারিতা পাওয়া এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় জেলায় কৃষকরাও দিন দিন কম্পোস্ট সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। অনেক কৃষি উদ্যোক্তাই এখন বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করছেন।

এরই মধ্যে চাঁদপুর জেলায় ১৪ জন কৃষি উদ্যোক্তা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করে এখন বাণিজ্যিকভাবে সার উৎপাদন করছেন। তাদের পাশাপাশি নতুনদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, জমিতে অতিমাত্রায় বালাইনাশক, আগাছানাশক, কৃত্রিম রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দিন দিন মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে ভূমিকা রাখছে কেঁচো সার। রাসায়নিক সার ব্যবহারে বিনষ্ট মাটির উর্বরতা শক্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম এই ভার্মি কম্পোস্ট।

কৃষি উদ্যোক্তারা জানান, পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করতে অর্ধ পচা গোবর, শাকসবজির ফেলে দেওয়া অংশ, অথবা পচা কলাগাছ একসঙ্গে মিশিয়ে সেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। কেঁচো সেসব ময়লা খেয়ে মলত্যাগ করে ও বংশবিস্তার করে। কেঁচোর মলই মূলত জৈব সারে পরিণত হয়। জৈব সারে পরিনত হতে সময় লাগে ১ থেকে দেড় মাস। তারা বিভিন্ন নার্সারি, কৃষক এবং দোকানদারের মাধ্যমে এই জৈব সার বিক্রয় করেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নে কাঠের পোল এলাকার শহীদুল্লাহ পাটোয়ারীর ছেলে তরুণ উদ্যোক্তা ফয়সাল পাটোয়ারী শুভ (৩২)। তিনি চাকরির পাশাপাশি একটু বাড়তি আয়ের আশায় কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদনের জন্য উদ্যোগ নেন। তার এ সার কোম্পানির নাম দেন পাওয়ারী জৈব সার কোম্পানি লিমিটেড। এ সার উৎপাদন করে মাত্র ৪ মাসের মধ্যে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। বর্তমানে ফয়সাল পাটোয়ারী শুভর উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৭ থেকে ৮ টনের বেশি কেঁচো সার বাজারজাত করা হয়। এতে তিনি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন।

তরুণ উদ্যোক্তা ফয়সাল পাটোয়ারী শুভ জানেন, তার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। পরে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৩নং কল্যাণপুর ইউনিয়নের রঙ্গের গাঁও এলাকায় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন জন্য পরিত্যক্ত ৮ শতক জমি ভাড়া করে আটটি হাউজ নির্ধারণ করেন। চলতি বছর মার্চ মাসে সাত লাখ টাকা খরচ করে ৫০ হাজার কেঁচোসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ নিয়ে এই প্রোজেক্ট চালু করেন।

নিজের পরিশ্রমের ফলে মাত্র চার মাসে ব্যাপক সফলতা পান এ উদ্যোক্তা। ওই বছরের জুলাই মাসে তিনি বিক্রয় শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় ৩টি রিং, আটটি হাউজ রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে ৭-৮টন জৈব সার উৎপাদন হয়। পাইকারি মূল্যে প্রতি কেজি জৈব ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। শ্রমিকদের পাশাপাশি বিক্রয় সরবরাহের জন্য দুইজন এসআর (সেলম্যান) আছেন। তারা বিভিন্ন নার্সারি, কৃষক এবং দোকানদারের মাধ্যমে আমরা এই জৈব সারটি বিক্রয় করে থাকি। ৫৫-৬০ হাজার বিক্রয় হয়। তাদের বেতন দেওয়ার পর ফয়সালের মাসে গড়ে ২৫ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা লাভ হয়।

ফয়সাল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সার উৎপাদনের জন্য যখন গুরুত্ব দিলেন। তখন থেকে এ বিষয়ে আমার খুবই আগ্রহ জাগে। তবে খরচ অনুযায়ী কম দরে বিক্রয় হয় এই সার। এক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী ও কৃষি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সরেজমিনে উদ্যোক্তা ফয়সাল পাটোয়ার শুভর ভার্মি কম্পোস্ট প্রজেক্টে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গা জুড়ে প্রায় ৩টি রিং,আটটি হাউজ রয়েছে। যার ১৪ ফুট লম্বা পাশে ১০ ফুট নিয়ে তৈরি করেছেন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্র। এতে পুরোনো গোবর আর রেড বেঙ্গল কেঁচো দিয়ে রিংও হাউজগুলো ঢেকে রেখেছেন। প্রতিটি হাউজে ১ লাখ এবং রিংয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার কেঁচো রয়েছে। কেঁচো গুলো হাউজ এবং রিংয়ের গোবর খেয়ে মলত্যাগ করে। এই মল চা পাতার মতো হালকা আর ঝুর ঝুর হয়ে হাউজ এবং রিংয়ের ওপর দিকে উঠতে থাকে। প্রথম দেড় মাস পর প্রতি হাউজে দেড় টন এবং রিংগুলো থেকে ২৫ -৩০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি হয়।

স্থানীয় কৃষক সোহেল খান বলেন, শুভ আমাদের গ্রামের ছেলে তার কাছ থেকে জৈব সার নিয়ে কলা বাগানে দিছিলাম সঙ্গে লাল শাক খেতেও দিছি। কলা ও শাকের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে যে খরচ হতো তার থেকে অনেক কম খরচ হয়েছে।

এদিকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল গ্রামের আবুল কালামের ছেলে জাকির হোসেন ভুঁইয়া সোহাগ (৩১) নামে এক যুবক টারকি পালন ছেড়ে ২০১৯ সালে দশ কেজি কেঁচো ক্রয় করে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। এখন তিনি ব্যাণিজিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছেন। ব্যাণিজিকভাবে বিক্রয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশনের আবেদনও করেন তিনি।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজন। এর কারণ হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা। আমার উপজেলার জাকির ও শাকিল নামে দুই যুবক অগ্রগামী কৃষক। তারা এধরনের জৈব সার উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। আমাদের মাধ্যমে তারা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছে। প্রশিক্ষণের পর তারা নিজেরাই বুঝতে পেরেছে এই সার ব্যবহারে ফলে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা লাভবানও হচ্ছে। তারা এখন চিন্তা করছে ব্যাণিজিকভাবে এটি চাষ করবে। তাই তারা বড় পরিসরে কাজ করা জন্য পরিকল্পনা করছে। এ জন্য আমরা তাদের পাশে আছি। ইতোপূর্বে তাদের দেওয়া দুটি স্যাম্পল পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। এগুলোর ফলাফল ভালো এসেছে। তাদের খামারগুলো সরকারিভাবে নিবন্ধনের জন্য কাজ করা হচ্ছে। আমি তরুণ উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করছি এ পেশায় এগিয়ে আসার জন্য। কারণ এগুলো লাভজনক চাষ।

চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন রায় বলেন, ফয়সাল পাটওয়ারী একজন কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলায় ব্যাণিজিকভাবে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কেঁচো সার এক ধরনের জৈব সার। এটি ব্যবহার করলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অধিক ফলন, নিরাপদ ফসল এবং সবজি উৎপন্ন হয়। আমরা আশাবাদী উদ্যোক্তা ফয়সালের মতো এমন উদ্যোগে এগিয়ে আসবে বেকার যুবকরা। তারা নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে। আমরা তাদের সহায়তা দেব।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী জানান, জেলার বিভিন্নস্থানে পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদনে ১৪ জন উদ্যোক্তা আছেন। তাদেরকে উদ্বুদ্ধকরণের কারণে আরও নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের কারণে নতুন উদ্যোক্তারাও লাভবান হচ্ছে। ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রাকৃতিকভাবে খুবই নিরাপদ। মাটির গুনাগুণ রক্ষার্থে কাজ করে। জৈব সার বৃদ্ধিতে ভার্মি কম্পোস্ট ভালো ভূমিকা রাখে। যে সব নতুন নতুন উদ্যোক্তা এ পেশায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করছে, তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে পুরাতন উদ্যোক্তাদের কেঁচো সংগ্রহ করে নতুন উদ্যোক্তাদের নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


সর্বশেষ - রাজনীতি

নির্বাচিত

আটলান্টিকে নিখোঁজ সাবমেরিনের পাঁচ আরোহী আর বেঁচে নেই!

বুস্টার ডোজ : ফাইজার নয় দেওয়া হবে মডার্না

বিশ্ব ইজতেমা থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব

চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা-গবেষণার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে : শেখ হাসিনা

মুসলমানরা কেন পিছিয়ে পড়ল তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন: শেখ হাসিনা

শিক্ষকতা ছেড়ে লাল মাটিতে কফি চাষে সাফল্য

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির ইছামতি তীরে হচ্ছে বিশেষায়িত শিল্পপার্ক

বিমানবন্দরে প্রবাসীদের লাগেজ হয়রানি কবে বন্ধ হবে!

বিএফ-৭: হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার পরামর্শ পরামর্শক কারিগরি কমিটির

তিন থেকে চার টাকায় নিত্যপণ্য দিচ্ছে হ্যাপিনেস স্টোর