1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ওপরে শিম নিচে মাছ চাষে স্বাবলম্বী কয়েক গ্রামের মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩

ভরতভায়না থেকে কেশবপুর বাজার পর্যন্ত সড়কের বেশিরভাগ এলাকার রাস্তার পাশে শিমগাছে বেগুনি ও সাদা ফুলের সমারোহ ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। গাছের নিচে দেখা যায়, ছোট-বড় জলাশয়। জলাশয়ের পাড়ঘেঁষে এখন শুধু শিমগাছের লতা ঝুলছে। কোনও কোনও জলাশয়ের পাড়ে দেখা মিলবে লাউ কিংবা কুমড়াগাছ।

ভরতভায়না, সন্যাসগাছা, ভেরচি ও বুড়লি গ্রাম যশোরের কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নের মধ্যে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ জলাশয়ে (ছোট-বড় পুকুর) মাছ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আবাদ করেছেন নানা সবজি। রবি মৌসুমে এই অঞ্চলের জলাশয়ের পাশঘেঁষে শোভা পাচ্ছে শিমগাছ।

সন্যাসগাছা গ্রামের কৃষক আফসার সরদার বলেন, ‌‘শিমগাছগুলো পরিচর্যা করছি। এখন ফলন এসেছে। এই সময়ে বেশি যত্ন করতে হয় গাছের। বাজারে শিমের বেশ দাম।’ আফসার সরদার জলাশয়ের পাশে ৩০০ মান্দা (মান্দা হচ্ছে কয়েকটি গাছের সমষ্টি, যা একই স্থানে লাগানো থাকে) শিমগাছ লাগিয়েছেন।

গত সপ্তাহে প্রতি কেজি শিম বিক্রি করেছি ১১০ টাকা কেজি দরে উল্লেখ করে এই কৃষক আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে বাজারে শীতকালীন সবজি উঠছে, এজন্য দামও কমছে। গত মাসে বৃষ্টির আগে এই শিম বিক্রি করেছি ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে। সেসময় ক্ষেত থেকে সর্বোচ্চ ৩২ কেজি শিম তুলেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘এখন শিমের একটাই শত্রু, সেটি হলো কালোমাকড়। গাছের পাতার নিচে এই মাকড় লেগে পুরো পাতার রস খেয়ে ফেলে। এতে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই ওষুধ ছিটানো লাগছে।’

কৃষি বিভাগের লোকজন পরামর্শ দিতে আসেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আসেন। দুই-একটা ওষুধের নাম বলে যান। কিন্তু তা দিলেও কাজ হয় না।’

পাশের গ্রাম ভরতভায়নার বাসিন্দা লাভলু হোসেন বলেন, ‘ঘেরের পাশে আমার দেড়শ মান্দা আর ১০ কাঠা জমিতে রয়েছে শিমগাছ। সবমিলিয়ে চার শতাধিক মান্দা। মাসখানেক আগে ১৯০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করেছি। এখন ধীরে ধীরে দাম কমে আসছে। গত দুই দিন ধরে ১১০ টাকা দরে শিম বিক্রি করছি।’

তবে গাছে কালোমাকড় খুব সমস্যা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটু আগে ডিলারের কাছ থেকে পাইন ও আশামিল ৭২ নামে দুটি ওষুধ এনেছি। এগুলো গাছে প্রয়োগ করবো।’

সন্যাসগাছা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার পাঁচশ’ মান্দা গাছ রয়েছে। ঘের রয়েছে ৪৬ শতক জমিতে। ঘেরে চিংড়ি ও সাদা মাছ যেমন, রুই-কাতলা চাষ করছি। ঘেরের পাড়ে কিছু লাউগাছ আছে। গত মাস থেকে প্রতি দিন লাউ বিক্রি করছি। ১০-১৫টি লাউ প্রতিদিন তুলি। প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। দুই দিন আগে ১৮ কেজি শিম বিক্রি করেছি ১১০ টাকা কেজি দরে। এবার সর্বোচ্চ ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। সপ্তাহখানেক হলো কুমড়ার ফলন শেষ হয়েছে। দুই হাজার টাকার বেশি কুমড়া বিক্রি করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিন মাস পরপর মাছ ধরে বিক্রি করি। গত সপ্তাহে ১৫ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ঘেরের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করেন। এতে সবাই স্বাবলম্বী হয়েছেন।’

গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আফজাল হোসেন বলেন, ‘গৌরীঘোনা, সুফলাকাটি, মঙ্গলকোট ইউনিয়নের মানুষ ঘেরের পাশে সবজি চাষ করেন। এই অঞ্চলে যেমন মাছের উৎপাদন ভালো তেমননি সবজিরও। বর্তমানে শিম চাষ হচ্ছে বেশি। এছাড়া লাউ, পালংশাক, কুমড়া ও টমেটোর আবাদ হয়। সবজি ও মাছ চাষ করে এসব গ্রামের প্রায় সবাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।’

কেশবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রিমা আক্তার বলেন, ‘পুরো যশোর জেলা সবজি চাষে এগিয়ে। এর মধ্যে কেশবপুরে বেশি সবজি চাষ হয়। আগাম সবজি হিসেবে গৌরীঘোনা ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন এগিয়ে। এখানে বর্তমানে বেশি শিম চাষ হচ্ছে। কিছুদিন আগে আমরা গিয়েছিলাম তরমুজ চাষ দেখতে। এসব জায়গায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজের আবাদও ভালো হয়।’

শিমগাছে কালোমাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়ে রিমা আক্তার বলেন, ‘আসলে কালোমাকড় বলে কিছু নেই। অন্য কোনও পোকা কিংবা মাছি কিনা, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি। তাকে নমুনা আনতে বলেছি। আগে দেখি, তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিন মৌসুমের মধ্যে এই উপজেলায় খরিপ-১ এ ৭৫০ হেক্টর, খরিপ-২ এ ৮৪১ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে কমবেশি ৯৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে খরিপ-১ এ গৌরীঘোনা ইউনিয়নে সমতল ও ঘের মিলিয়ে ১৩৫ হেক্টর, খরিপ-২ এ ১৬৩ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে ১৭০-১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। পর্যায়ক্রমে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

কেশবপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, ‘সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, গৌরীঘোনা ইউনিয়নে ছোট-বড় ১৪৫২টি ঘের রয়েছে, যার আয়তন ৭৬০ হেক্টর। সুপলাকাটিতে ১২১৬টি ঘেরের আয়তন ১৩৩০ হেক্টর। গত বছর গৌরীঘোনা থেকে মাছের উৎপাদন হয়েছে দুই হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন এবং সুফলাকাটি থেকে চার হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে কেশবপুর উপজেলায় মোট উৎপাদন ৩৬ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গলদা চিংড়ি দুই হাজার ১৯২ মেট্রিক টন, আর বাগদা চিংড়ি ২৫২ মেট্রিক টন। চিংড়ি মাছের ৭০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হয় গৌরীঘোনা ও সুপলাকাটি ইউনিয়নে।


সর্বশেষ - রাজনীতি