1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল: বন্দরে সম্ভাবনার আরেক দুয়ার

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

জেটিস্বল্পতায় জাহাজ বার্থিংয়ের সুযোগ বাড়াতে নিজস্ব অর্থায়নে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল তৈরি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও অপারেটর নিয়োগ জটিলতায় টার্মিনালটি এত দিন চালু করা যায়নি। অবশেষে সেই অপেক্ষা এখন কাটতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করার পর শিগগিরই চালু হবে টার্মিনালটি।

এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে খুলতে যাচ্ছে সম্ভাবনার আরেকটি দুয়ার। এই টার্মিনালটি চালু হলে তেলবাহী একটিসহ মোট তিনটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়বে পাঁচ লাখ টিইইউস। কমবে বহির্নোঙরে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময়। টার্মিনালটি বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় স্বল্প সময় ও স্বল্প ব্যয়ে জাহাজ আনা-নেওয়ার সুবিধা বাড়বে। সব মিলিয়ে এই টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ১৭ শতাংশ।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কোন প্রক্রিয়ায় সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়েকে টার্মিনালটি পরিচালনা করতে দেওয়া হবে তা ইতোমধ্যেই নির্ধারিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে যেকোনো দিন রেড সি গেটওয়ের সঙ্গে চুক্তি করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দর কর্তৃপক্ষের এক প্রকৌশলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, চলতি সপ্তাহে চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চুক্তি স্বাক্ষর করার পরও চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রেড সি গেটওয়ে চার মাস সময় পাবে। এই চার মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংযুক্ত করবে। সেই হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হলে আগামী মার্চ মাসে টার্মিনালটি পুরোদমে চালু হতে পারে।

এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ টার্মিনাল নির্মাণ হয় ২০০৭ সালে। ওই সময় বন্দরের সিসিটি টার্মিনালের পাশে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল। টার্মিনালটি ২০১৫ সালে উদ্বোধনের পর এখন নতুন করে বন্দরের বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরও একটি নতুন টার্মিনাল। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি যুক্ত হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে ১৭ শতাংশ। বন্দরের বহরে যুক্ত হবে নতুন চারটি জেটি। এর মধ্যে তিনটি কন্টেইনার জেটি এবং একটি তেল খালাসের ডলফিন জেটি। কন্টেইনার টার্মিনালটিতে থাকবে মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, ফুয়েল স্টেশন স্বতন্ত্রভাবে চলতে সক্ষম এমন সব সুযোগ-সুবিধা। টার্মিনালটিতে রাখা যাবে ছয়টি কন্টেইনার।

জেটিস্বল্পতার কারণে জাহাজ বার্থিংয়ের গতি আনতে বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলী মোহনা থেকে একটু দূরে ড্রাই ডক ও চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের মাঝামাঝি ৩২ একর জায়গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় নির্মিত এই টার্মিনালটি ২০১৭ সালের ১৩ জুন প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল বন্দর। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় দফায় ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এক বছর সময় বাড়ানো হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলেও অপারেটর নিয়োগ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজে অপারেট করবে নাকি সেখানে বাইরের অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হবে এটি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দেয়। পরে কন্টেইনার টার্মিনালটি চালু করতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল’ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। একই সময়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটিসহ বন্দরের চারটি টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ মার্চ অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি টার্মিনাল পরিচালনায় আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে।

ওই সিদ্ধান্তের আলোকে সৗদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক পোর্টের বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) পতেঙ্গা টার্মিনালের অপারেটরের দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে। বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওটি) ভিত্তিতে পতেঙ্গা টার্মিনাল অপারেশনের কাজ পেতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২২ বছরের জন্য পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল। নিজেদের অর্থে যন্ত্রপাতি কিনে ২২ বছরের জন্য এই টার্মিনাল পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। কোন প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনালটি অপারেট করবে সেটিও ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে রেড সি গেটওয়ে পতেঙ্গা টার্মিনাল অপারেট করলেও বন্দর ট্যারিফ, রিভার চার্জ, নিরাপত্তার বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষই দেখবে। এই হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য অপারেটরদের মতো জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করবে। এর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লভ্যাংশ শেয়ার করবে। প্রাথমিকভাবে চুক্তির সময় বন্দর কর্তৃপক্ষকে ২০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। রেড সি গেটওয়ের কাছ থেকে আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটি যাছাই-বাছাই করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রস্তাবনার আলোকে বেশ কয়েক দফায় রেড সি গেটওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। বৈঠকে তাদের সঙ্গে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছি। আমাদের পক্ষ থেকে যেসব দাবি-দাওয়া ছিল, সেগুলো অধিকাংশ আমরা আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে অনুমোদন পেলে তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। এরপর টার্মিনাল চালু হতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে।’


সর্বশেষ - রাজনীতি