1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কলঙ্কিত ৭ নভেম্বর

ইবার্তা সম্পাদকীয় : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩

হত্যার শিকার তিন খ্যাতনামা বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর বিক্রম এবং এ টি এম হায়দার বীর উত্তম

৭ নভেম্বর, মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এদিনে, সিপাহী বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যা করা হয় তিন খ্যাতনামা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। মুক্তিযুদ্ধে কোনো সেক্টর কমান্ডার শহীদ না হলেও এদিন প্রথমবারের মতো কোনো সেক্টর কমান্ডারকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ দিনটি বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে। বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, সিপাহী বিপ্লবের নামে এদিন থেকে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যা প্রক্রিয়া। সিপাহী বিপ্লবের নামে হলেও সিপাহীদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মূলত ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলির মধ্যদিয়েই জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ তৈরি হয়। ৬ ও ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন বিপ্লবী গণবাহিনীর প্রধান কর্নেল (অব.) আবু তাহের।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাত্র ৭৮ দিন পর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় চার জাতীয় নেতাকে। এসব হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ৩ থেকে ৭ নভেম্বর সামরিক বাহিনীর মধ্যে একাধিকবার অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে।

১৯৭৫ সালের এদিনে সিপাহী বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যা করা হয় তিন খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধাকে। এরা হলেন- খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর উত্তম এবং এ টি এম হায়দার বীর বিক্রম। দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে অবস্থানকালে সকালে তাদের একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে দু’জন কোম্পানি কমান্ডার আসাদ এবং জলিল।

সাংবাদিক অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস এ ব্যাপারে লিখেছেন, ‘এছাড়াও এদিন উশৃঙ্খল জওয়ানরা একজন মহিলা ডাক্তারসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এমনকি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকেও এ সময় হত্যা করা হয়’।

লেখক গবেষক গোলাম মুরশিদ তার “মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর” গ্রন্থে লিখেছেন, শাফায়াত জামিল বিদ্রোহের খবর পেয়েও থেকে গিয়েছিলেন বঙ্গভবনে। কিন্তু যখন উশৃংখল বিদ্রোহী সেনারা শ্লোগান দিতে দিতে বঙ্গভবনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়- তখন তিনি সঙ্গীদের নিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। এতে তার পা ভেঙ্গে যায় এবং ভাগ্যচক্রে পরে ধরা পড়েন। তার জায়গা হয় সামরিক হাসপাতালে। তিনি বেঁচে যান।

এর আগে ৬ নভেম্বর ভোর রাতে গৃহবন্দি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যায় বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুকের ল্যান্সার বাহিনীর একটি দল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় যার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল সেই ল্যান্সার মহিউদ্দিন ছিল এই দলের নেতৃত্বে। তারা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসে কর্নেল রশিদের দুই নম্বর অ্যার্টিলারি রেজিমেন্টের দপ্তরে।

গোলাম মুরশিদ আরো বলেন, ‘মুক্তি পেয়েই জিয়াউর রহমান সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে (বিচারপতি আবু সাদত সায়েম) কথা না বলেই বেতারে ভাষণ দিতে চলে যান। ’৭১-এর ২৭ মার্চের মতোই সংক্ষিপ্ত ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর অনুরোধে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। একাত্তরের ২৭ মার্চ তিনি প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। পরে শুধরে নিয়েছিলেন। এবারও তিনি নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ঘোষণা করেন। পরে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছিলেন।’

পরবর্তীতে একে একে গণভোট, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন দিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করলেও, দেশের সর্বোচ্চ আদালত জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করেন। জিয়ার আমলে ২০টির বেশি অভ্যুথান হয়েছিল বলে বিভিন্ন তথ্যে পাওয়া যায়। এক হিসাবে প্রায় প্রতি তিন মাসে একটি করে অভ্যুথানের চেষ্টা হয়েছিল জিয়ার শাসন আমলে। অভ্যুথান দমনের নামে সেনানিবাসগুলোতে চালানো হয়ে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার ও সৈনিকদেরকে হত্যার পরিকল্পিত মিশন।

এ ব্যাপারে গোলাম মুরশিদ বলেন,  একটার পর একটা অভ্যুত্থান সেনাবাহিনীতে হতেই থাকে। প্রতিটি অভ্যুথানের পর বহু সেনা সদস্যকে তিনি ফাঁসিতে ঝোলান। অনেককে বিনা বিচারেও পাইকারিভাবে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিমান বাহিনীর অভ্যুথানের পর শত শত লোককে বিনা বিচারে অথবা সংক্ষিপ্ত বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। ফলে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, বিমান বাহিনীতে মাত্র ১১ জন কর্মকর্তা থাকেন। তাদের মধ্যে বিমান চালাতে পারতেন মাত্র তিনজন। মার্কাস ফ্র্যান্ডার মতে- এই অভ্যুথানের কারণে আড়াই হাজার সেনা সদস্য নিহত হয়।

সর্বশেষ ১৯৮১ সালের ৩০মে চট্রগ্রামে সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর মেজর জেনারেল মঞ্জুরসহ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিতর্কিতভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল এবং গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।


সর্বশেষ - রাজনীতি