৩৫ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ১৮ হাজার কোটি টাকার নতুন রেলপথ উদ্বোধনের পাশাপাশি আরও ১৭ হাজার কোটি টাকার গভীর সমুদ্র বন্দরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনে ১১ নভেম্বর কক্সবাজার যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই সফরেই মহেশখালীর মাতারবাড়িতে অন্তত ৬০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হতে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে উঠছে মহেশখালী।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাতারবাড়িতে একেবারে সাগর ঘেঁষে তৈরি হয়ে গেছে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও। এতেও সাগর থেকে মাটি এনে তৈরি করা হয়েছে নতুন ভূমি। এরই মধ্যে (গত মাসে) শুরু হয়েছে এখানে গড়ে উঠা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরীক্ষামূলক উৎপাদন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ নভেম্বর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পুরো এ বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গড়ে ওঠেছে জাপানের সহযোগিতায়।
জানা গেছে, ৩৫ হাজার কোটি টাকার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ১৮ হাজার কোটি টাকার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নতুন রেলপথ উদ্বোধনের পাশাপাশি আরও ১৭ হাজার কোটি টাকার গভীর সমুদ্র বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে ১১ নভেম্বর কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ নভেম্বর মহেশখালীতে একটি জনসভা করবেন। জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বহুদিন থেকে যে গভীর সমুদ্র বন্দর চেয়েছিলাম, তার সফল বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সেখানে এরই মধ্যে পোর্ট নির্মিত হয়েছে, গড়ে ওঠেছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এ সবকিছুকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে একটি গভীর সমুদ্র বন্দরও, যার মধ্যদিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে মহেশখালী সংযুক্ত হবে। এতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক পরিবর্তনে মহেশখালীর এ মাতারবাড়ি ভূমিকা রাখবে।’
গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিশ্চয়তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে কেটে যাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের দিনে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবেন তিনি। জাইকার সহযোগিতায় গড়ে উঠবে এ গভীর সমুদ্র বন্দর। অবশ্য এটি এখনো বন্দর হিসেবে গড়ে না উঠলেও গত সাত মাসে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে বিশাল আকৃতির ১০টি জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাহাজগুলো এখানে ভিড়বে। এরই মধ্যে ৮০ হাজার টনের একটি জাহাজ কয়লা নিয়ে এখানে ভিড়েছে। এরপর এক লাখ টনের জাহাজও এখানে আসবে। সেই লক্ষ্যে গভীর সমুদ্র বন্দরে প্রথম যে টার্মিনালটা চট্টগ্রাম পোর্টের পক্ষ থেকে হচ্ছে, সে ব্যাপারে একটি টেন্ডার করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে সরাসরি মালামাল এখানে আসবে এবং ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যাবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিপুল পরিবর্তন আনবে। এতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশের বাণিজ্যে মাতারবাড়ি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে ৮০ থেকে এক লাখ টনের জাহাজ আসতে পারবে। এটা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং গভীর সমুদ্র বন্দর।
তিনি আরও বলেন, শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র কিংবা গভীর সমুদ্র বন্দর নয়, মহেশখালীর মাতারবাড়ি এবং তার আশপাশে গড়ে ওঠেছে গভীর সাগরে জাহাজ থেকে পাইপের সাহায্যে তেল সরবরাহ লাইনের পাশাপাশি একটি রিজার্ভার। একই সঙ্গে বাংলাদেশের একমাত্র এলএনজি ল্যান্ডিং স্টেশনের অবস্থানও এ মহেশখালীতে। নৌ এবং সড়ক পথের যোগাযোগের কারণে আগামীতে মহেশখালী এ অঞ্চলের বাণিজ্যের হাব হিসেবে গড়ে উঠছে।
