অবিভক্ত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু! ভারতবাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিলো কেন্দ্রীয় সরকার। এক্ষেত্রে বড়সড় পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে ভারতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন মোদি সরকার বলে নয়াদিল্লী সূত্রে খবর।
১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের ক্যাথে সিনেমা হলে আজাদ হিন্দ সরকারের ঘোষণা করেছিলেন নেতাজী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন নিজে। এর দুই দিন বাদে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এরপর ৩০ ডিসেম্বর আন্দামান- নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের শাসনভার জাপানের কাছ থেকে নিয়ে পোর্ট ব্লেয়ারের জিমখানা গ্রাউন্ড যা বর্তমানে নেতাজি স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত সেখানে উত্তোলন করেছিলেন ভারতের জাতীয় পতাকা।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জকে শহীদ এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে স্বরাজ হিসেবে উল্লেখ করে আজাদ হিন্দ বাহিনীর জেনারেল এ বি লোগানাথানকে গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। ভারতের ইতিহাসে এই অধ্যায়টি শুধুমাত্র একটি ঘটনা হিসেবে উল্লেখ ছিল। তবে বেশকিছু দিন ধরেই এই ঘটনাকে মান্যতা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
গত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্দামানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর দেওয়া ভাষণে নেতাজিকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এবার এই ঘটনাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার কাজ শুরু করে দিলো কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে নতুন করে সেজে উঠেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, যার ছাপ পড়েছে দিল্লির লাল কেল্লাতেও। নতুন করে সাজানো হয়েছে সেখানকার মিউজিয়ামগুলো। যার একটি উৎসর্গ করা হয়েছে নেতাজি ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর নামে। সেই মিউজিয়ামেই একাধিক জায়গায় নেতাজিকে অবিভক্ত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক জায়গায় প্রথম সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও তার মন্ত্রকের পরিচিতি দেওয়া রয়েছে। একটি অংশে নেতাজিকে অবিভক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করে সেই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া আছে। বড় করে সাজানো আছে নেতাজির শপথপত্র। আরেকটি অংশে রয়েছে ক্যাথে সিনেমা হলে নেতাজির আজাদ হিন্দ সরকারের ঘোষণাপত্র পাঠের ছবি।
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এই গ্যালারিতে নেতাজির ছবিকে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে অবিভক্ত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও। নেতাজিকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করাই নয়, মিউজিয়ামে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে কংগ্রেসের ত্রিপুরী ও হরিপুরা অধিবেশনের। যেখানে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর বিরোধের ঘটনার কথাও লেখা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে— পড়ুয়াদের পাঠক্রম, সরকারি বিভিন্ন নথিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও নেতাজিকে অবিভক্ত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা শুরু করবে কেন্দ্রীয় সরকার। এই মিউজিয়ামের বিষয়টি তার প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করছে ভারতের রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী ওহরলাল নেহরু।