1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ 

অজয় দাশগুপ্ত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

মুশকিলটা হচ্ছে, পন্ডিত ও সমালোচকদের গদ্য পড়ে মাথা ঝিমঝিম করে, কণ্ঠ শুকিয়ে আসে। কিন্তু তাঁর গদ্য পড়লে ঝকঝকে কোন গ্লাসে পানির মতো তৃষ্ণা মিটে এমন একটা অনুভূতি হয়। মুশকিলটা এই, অনেকে হাই হাই থট নিয়ে লেখেন বলেনও। কিন্তু যৌবনের শুরুতে নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার পাঠ করার পর গলার কাছে লেগে থাকা কাঁটার মতো সুখ দুঃখের অনুভূতিটা জন্মায় না। মুশকিল হচ্ছে, রাজনীতি না করে, মাঝে মাঝে মধ্যপন্থী হয়ে,নিন্দুকের ভাষায় বৈরী হয়ে তিনিই নাটকের এক তোতা দিয়ে রটিয়ে দিলেন, ‘তুই রাজাকার’। তাঁর লেখাতেই পড়লাম বাড়িতে এক নারীর ফোন কলে সাড়া পড়ে যাওয়ার গল্প। যিনি আসবেন বলে পুরো পরিবার অধীর আগ্রহে ছিল অপেক্ষমান। জাহানারা ইমামকে নিয়ে এমন গল্প কেউ লিখেছেন?

মুশকিল হচ্ছে, সামাজিক মিডিয়ার যুগে এতো জনপ্রিয় কচি, খোকা, বুড়োদের ভীড় কিন্তু ওই রকম একটা গল্প শুনি না। যেখানে তাঁর ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন এক বয়স্ক ভদ্রলোক। জাফর ইকবাল মনে মনে মহাখুশি। সবাই জানে বাচ্চা কিশোর তরুণ-তরুণী রাই তাঁর ভক্ত। এতোদিনে একজন ঝানু বয়স্ক এলেন দেখা করতে। ভদ্রলোক দেখা করতে এসে জাফর ইকবালের হাত বুকে ধরে আছেন। আহা! কী মায়া। পরপর হাতটা বুকে বুলিয়ে ছেড়ে দেওয়ার সময় বলেছিলেন, আহা রে হুমায়ূন আহমদের হাত ধরবার পারি নাই ,তাতে কি এটা তো তার আপন ভাইয়েরই হাত…!

সময় কাকে কোথায় রাখবে না রাখবে সে বিচারে আমার কী যায় আসে? অনেক কিছু অপছন্দ হলেও তাঁর লেখা টানে। তিনিই শিখিয়ে গেছেন বাংলাদেশের বই কিনেই কাউকে উপহার দেওয়া যায়। গুরুগম্ভীর মানুষে ভরা সমাজ। মনে করা হয় যে যতো গম্ভীর যতো রাশভারী তার ততো সম্মান। অথচ নিজেকে নিয়ে মজা করার মতো সেন্স অফ হিউমার কিংবা বোধ থাকে ক‘জনার? বাঙালি বিশেষত বাংলাদেশের লেখকেরা মজার কিছু লেখা দূরে থাক ঠিকমতো হাসেনও না। তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। তাঁর লেখায় পড়েছি, পিএইচডি করতে যখন আমেরিকায় ছিলেন গুলতেকিন পয়সা বাঁচানোর জন্য সেলাই ফোঁড় করতেন। হিসেব করে বাজার করতেন তারা। এমন সময় মেয়ের জন্মদিন। পিতাকে তো কিছু করতেই হয়। বাবা জানেন ছোট্ট মেয়েটি কি ভালোবাসে। নিয়ে আসা হলো আটা ময়দা। বাপ-বেটি মিলে সেগুলো মাখামাখি করেই পার হয়ে গেছিলো সুখময় স্মৃতি।

আমেরিকায় পড়াশোনার সময় একবার তাকে বক্তৃতা দিতে হয়েছিল ক্লাসে। নবীন বাঙালি ছাত্র। মেধাবীও বটে। নিজের মতো গড়গড় করে বলে গেলেন ফিজিক্সের কঠিন তত্ত্ব। থামার পর হাততালি ও জুটলো প্রচুর। তিনি তো খুশি, কথা বলতে দশবার তোতলানো মানুষের এমন ভাগ্য? প্রফেসর এক মেয়েকে প্রশ্ন করলেন, বলতো ওর বক্তৃতা থেকে কী বুঝলে? মেয়েটি হাসতে হাসতে বলেছিল, ও যে জানে ও পড়াশোনা করে তা ওর বডি ল্যাঙগুয়েজেই বুঝে গেছি। তবে ও বক্তৃতাটা ইংরেজিতে বললেই বুঝতে পারতাম আমরা। শুনে তার চোখ কপালে, শরীর বেয়ে ঘাম নামলো দরদর করে। এতোক্ষণ ইংরেজি বলার পর এই প্রাপ্তি?

এমন অনেক ঘটনা আছে তাঁর। লৌকিক অলৌকিক সব বিষয়ে রহস্যময় লেখা তাঁকে অন্য রকম করে রাখতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতে ঘুরছিলেন আমেরিকা প্রবাসী অধ্যাপক বন্ধুকে নিয়ে। গভীর রাতে দূর থেকে এগিয়ে আসতে থাকা ফকির টাইপের এক লোককে দেখে সালাম দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল তার। কিন্তু পাশে প্রবাসী বাঙালি বন্ধু। পাছে তাকে কুসংস্কারগ্রস্ত অনাধুনিক ভাবে তাই মনে মনেই দিলেন সালাম আলাইকুম। কী আশ্চর্য। হন হন করে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অর্ধনগ্ন ফকির কাছে আসতেই তার দিকে তাকিয়ে হাঁক দিলেন, ওয়ালাইকুম আস সালাম।

ব্যক্তিজীবনেও এমন অজস্র ঘটনা আছে তাঁর। মুক্তিযুদ্ধে নিহত জনকের কবর খোঁজার ঘটনা পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়। চমক দেওয়াই তার স্বভাব। কন্যার সাথে সম্পর্ক তখন অনেক দূরের। অভিনেত্রী গায়িকা শাওনকে বিয়ে করার পর দূরত্ব হয়ে উঠেছিল যোজন যোজন। কিন্তু তিনি তো অন্য ধরনের এক পিতা। মেয়ের বিয়েতে চমক দিতে এমন একজনকে নিয়ে গেলেন যাঁকে দেখে সবাই হয়েছিলেন অভিভূত। সে এক ইতিহাসও বটে। এপার বাংলার জনপ্রিয়তম লেখক বগলদাবা করে নিয়ে গেছিলেন বাংলা বাঙালির প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনিও সানন্দে হাজির ছিলেন সে রাতে।

কতো নিন্দা, কতো অপমান। কেউ কেউ বয়কটও করতেন। সস্তা লেখা, সস্তা নাটক এসবের অভিযোগ তো আছেই। কিন্তু তাঁর আগে কেউ পদ্মা পারের মানুষকে নিজেদের লেখকের বই উপহার দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে পারেননি। তাঁর বই দিয়েই কলকাতার লেখকদের একচ্ছত্র আধিপত্য কাটানোর শুরু। যতো কথাই বলি না কেন, তাঁর কারণেই ‘তুই রাজাকার’ কথাটা গালি হয়ে ফিরছে মুখে মুখে। জীবনব্যাপী বহু সংস্কার কুসংস্কারকে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন তিনি। যাঁর জন্ম অপয়া বলে খ্যাত তের তারিখে সে তেরো তারিখকেই তিনি করে দিয়েছেন খ্যাতিময়। মুখে যে যাই বলুক সবাই অন্তরে লালন করে তাঁর মতো প্রিয় হবার স্বপ্ন। যিনি মৃত্যুতেও এদেশের নেতা অভিনেতাদের হারিয়ে দিয়েছেন জনপ্রিয়তায়। শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ।

লেখক : অজয় দাশগুপ্ত – সাংবাদিক ও কলামিস্ট


সর্বশেষ - রাজনীতি