শস্য ও মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলে অবাধে চলছে শামুক নিধন। অপরিকল্পিতভাবে শামুক নিধনের ফলে বিলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরতাও হ্রাসের শঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকেই চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শামুক শিকার করা হচ্ছে। আর এ সমস্ত শামুক পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাঁস ও মাছের খামারে সরবারহ করা হচ্ছে।
বাড়তি আয়ের জন্য প্রতিদিনিই নৌকা নিয়ে বের হন শামুক শিকারিরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মই জাল, হেসি জাল ও হাত দিয়ে শামুক সংগ্রহ করে নৌকায় ভর্তি করেন তারা। পরে সেসব শামুক তাড়াশ উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের দীঘি সগুনা বাজার, হামকুড়িয়া বাজার, মান্নাননগর চৌরাস্তায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শামুক ব্যবসায়ীরা বস্তা ভর্তি শামুক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শিকারিরা প্রতি বস্তা শামুক পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি করেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাঁস ও মাছের খামারিদের কাছে প্রতি বস্তা ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি করেন।
শামুক শিকারি বিলনাদো গ্রামের আব্দুর রহমান প্রামাণিক বলেন, বর্ষা মৌসুমে হাতে তেমন কোনো কাজকর্ম থাকে না। তাই মই জাল ও হেসি জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করেন তারা। পানি কম হলে হাত দিয়েও শামুক ধরা যায়। ব্যাপারীদের কাছে ১১০-১২০ টাকা বস্তা বিক্রি করেন।
শামুক ব্যবসায়ী রিন্টু হোসেন বলেন, বর্ষাকালে চলনবিলে প্রচুর শামুক পাওয়া যায়। বিলপাড়ের মানুষেরাই বিভিন্ন আকারের শামুক সংগ্রহ করেনে। এসব শামুক আমরা কিনে হাঁস ও মাছের খামারিদের কাছে বিক্রি করি। দিঘিসগুনা বাজার থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ বস্তা শামুক বিক্রি হয়। এখান থেকে গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিরা নিয়ে যান।
এদিকে অপরিকল্পিতভাবে চলনবিলের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম অনুষঙ্গ নিধনের ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য হারানোর শঙ্কা করছেন অনেকেই। হুমকির মুখে পড়বে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সেই সঙ্গে ফসলি জমির উর্বরতাও হ্রাস পেতে পারে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, বিলের প্রতিটি জলজ উদ্ভিদ ও প্রতিটি প্রাণী একে অন্যের পরিপূরক। একটি প্রাণী বা উদ্ভিদের ঘাটতি হলে অপর একাধিক উদ্ভিদ বা প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে এ বিলে শামুকটাকে বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে। কিছু টাকার জন্য মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে চলনবিল আরও বিপর্যস্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রকৃতির সৃষ্টি চলনবিলকে রক্ষা করতে হবে। এর খাল-বিল-জল রক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে চলনবিলের প্রতিটি প্রাণী ও উদ্ভিদকে রক্ষা করতে হবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুলন্নাহার লুনা জানান, বর্ষার শেষে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ শামুক মারা যায়। মৃত শামুক মাটিতে মিশে কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কিন্তু শামুক নিধন প্রতিরোধে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো দিক নির্দেশনা নেই। তারপরও পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে দিক থেকে বিষয়টি দেখা হবে।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, শামুক পানিকে ফিল্টার করে। এগুলো বড় মাছেরও খাদ্য। জলের মধ্যে শামুকের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি অতিরিক্ত হলে সেগুলো নিধন করাও যেতে পারে। তবে চলনবিলে কত শামুক স্টক রয়েছে, তা জরিপ করে সেভাবেই আহরণ করা দরকার।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেজবাউল করিম বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।