1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও বিএনপির মামাবাড়ির আবদার

তাপস হালদার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে দেশবাসী ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। কখনও মুত্যুগুজব, কখনও বলা হচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, আবার কখনও শোনা যাচ্ছে তিনি মোটামুটি সুস্থ আছেন। এ প্রসঙ্গে ঈশপের একটি গল্প মনে পড়ে গেল। যদিও গল্পটি প্রায় সবাই জানে। এক মিথ্যাবাদী রাখাল বালক প্রতিদিন বাঘ আসছে, বাঘ আসছে বলে গ্রামবাসীকে মিথ্যে ভয় দেখাত। সত্যিই একদিন যখন বাঘ এল, সেদিন কিন্তু তার কথাকে আর কেউ বিশ্বাস করে এগিয়ে যায়নি। পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে।

বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতারা বলে আসছে- তিনি মারাত্মক অসুস্থ, জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, সরকার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে এসব অবান্তর গল্প শুনতে শুনতে জনগণ এখন ক্লান্ত। এখন তাদের কোন কথা সত্য আর কোনটি মিথ্যা সাধারণ মানুষ যথেষ্ট সন্দিহান।

খালেদা জিয়া যখন জেলে ছিলেন তখন বিএনপি থেকে দাবি করা হতো তাকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু তিনি মুক্তি পাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে চিকিৎসা নিচ্ছেন এভারকেয়ার হাসপাতালে (সাবেক অ্যাপোলো) আবার যখন নিজেরদের পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে তখন আবার নতুন উছিলা তুলেছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি যে রাজনীতি করছে সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তাদের নেত্রীর সুচিকিৎসার থেকে বেশি মনোযোগ রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করে সরকারকে বিব্রত করা। বিএনপির নেতারা সচেতনভাবে জানেন একজন দণ্ডিত আসামির বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ নেই। তারপরও তারা এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করতে চাইছে।

খালেদা জিয়া যে মামলায় দণ্ড ভোগ করছেন সেটা তো আওয়ামী লীগ সরকার করেনি। তারপরও বিএনপি অভিযোগ করে আসছে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সরকার তাদের নেত্রীকে কারাদণ্ড দিয়েছে। মামলার প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এতিমের টাকা আত্মাসাতের কারণে দুদক ২০০৮ সালের ৪ জুলাই এ মামলাটি করে। এ মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পুত্র তারেক রহমানও আসামি ছিলেন।

পিতা মারা গেলে পুত্র এতিম হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তারেক জিয়া নিঃসন্দেহে এতিম হন। কিন্তু মা যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান তখন কি আর ছেলেটা এতিম থাকে? ১৯৯১ সালে সৌদি আরব বাংলাদেশের এতিমদের সহায়তার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে’ সাড়ে ৪ কোটি টাকা দান করে। পরবর্তী সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল নামে ভুয়া দুটি ট্রাস্ট গঠন করে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমান।

জিয়া অরফানেজ মামলায় এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে হাইকোর্টে সাজা বাতিল চেয়ে আবেদন করলে উল্টো সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে দেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায়ও খালেদা জিয়াকে আরও ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।

খালেদা জিয়া কতটুকু অসুস্থ সে বিষয়ে সার্টিফিকেট দেবে চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা। গণমাধ্যমসূত্রে জানা যাচ্ছে, এভারকেয়ার হাসপাতালে বিশজনের চিকিৎসক প্যানেল বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। কিন্তু চিকিৎসকরা তার অসুস্থতা বিষয়ে মুখে কলুপ এঁটেছেন। প্রতিদিন বিএনপি নেতারা বলে যাচ্ছেন, খালেদা জিয়া জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। যে কথাটা বলার কথা চিকিৎসকদের, কিন্তু সেটি বলে যাচ্ছে ফখরুল সাহেবরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা এবিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব। বিএনপি নেত্রী কেমন আছেন সেটা জানার অধিকার জনগণের আছে। কিন্তু জনগণ তো দূরের কথা বিএনপির নেতাকর্মীরাই ধোঁয়াশার মধ্যে আছে, আদৌ তাদের নেত্রীর কী অবস্থা। বিএনপি নেত্রী এখন মুক্তভাবে জীবনযাপন করছেন। পরিবার ও দলের কিছু নেতা চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টতায় জড়িত। তারা ছাড়া সবাইকে অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে অন্ধকার রাখা হচ্ছে। এখানেই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির আভাস পাওয়া যায়।

খালেদা জিয়া এবারই প্রথম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমনটি নয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর ৬ অক্টোবর অসুস্থবোধ করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়। সেসময় এক মাসেরও বেশি হাসপাতালে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আবার অসুস্থবোধ করলে ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল পুনরায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মুক্তির আগপর্যন্ত সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মহানুভবতার কারণে করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে ২৫ মাস কারাভোগের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান বেগম খালেদা জিয়া। এরপর আরও তিনদফা সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তার মুক্তির ক্ষেত্রে শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না এবং দেশের পছন্দমতো যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন।

বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অজুহাতে মাঠ গরম করার দিকে বেশি তৎপর হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে আদৌ আন্তরিক মনে হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে বাধা থাকলেও বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা নেই। কিন্তু সেদিকে বিএনপির কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বিএনপি যদি প্রকৃতপক্ষেই খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার কথা ভাবত তাহলে তারা আন্দোলনের নামে জলঘোলা না করে চিকিৎসার দিকে আরও বেশি নজর দিত। কথায় কথায় আন্দোলনের হুমকি, সরকার পতনের কথা বলত না। সরকারের কাছে দেনদরবারের পাশাপাশি আইনগতভাবে প্যারোলে মুক্তির জন্য চেষ্টা করতে দেখতে পারত।

মির্জা ফখরুল বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নাকি স্লো পয়জনিং করা হচ্ছে। বেগম জিয়া ২১ মাস ধরে মুক্ত আছেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকেন। আর আশপাশে ঘোরাঘুরি করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আর ব্যক্তিগত পছন্দের চিকিৎসকরাই তাকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

তাহলে স্লো পয়জনিং যদি কেউ করে থাকেন তাহলে আপনজনদের মধ্যেই তো কেউ করেছেন। এখানে তো সরকারের করার কোনো সুযোগই নেই। আবার তিনি এ-ও বলছেন, খালেদা জিয়ার রোগনির্ণয়ের প্রযুক্তি দেশে নেই। এসব উদ্ভট কথা বলে তিনি জনগণের কাছে সার্কাসের জোকারে পরিণত হয়েছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে চিকিৎসা দেয়ার উদাহরণ কি আছে? নেই, সেটা জেনেও বিএনপি খালেদা জিয়াকে পুঁজি করে আন্দোলনের ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে।

বিএনপি-জামায়াতপন্থি কিছু কথিত বুদ্ধিজীবী টেলিভিশনে গলা ফাটাচ্ছে সরকারের উচিত মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো। যারা মানবিক হওয়ার কথা বলেন, তারা কি কখনও নিজেরা আত্মোপলব্ধি করেছেন যে, শেখ হাসিনা কতটা মানবিক হলে খালেদা জিয়াকে নির্বাহী ক্ষমতার বলে সাজা স্থগিত করে মুক্তভাবে চলাফেরা সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধু কি তাই? বেগম জিয়া যখন জেলে ছিলেন তখন তাকে দেখাশোনার জন্য ব্যক্তিগত গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেই এমন উদারতা দেখাতে পারেন।

যেসব বুদ্ধিজীবী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে উঠে পড়ে লেগেছেন তারা কি নিশ্চয়তা দিতে পারবেন খালেদা জিয়া বিদেশে থেকে চিকিৎসা শেষে আবার দেশে ফিরে আসবেন? বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান যিনিও একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি ১৪ বছর ধরে চিকিৎসার কথা বলে পালিয়ে আছেন।

বিএনপি নেতাদের তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, তিনি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন। তারেক রহমান এমন কী রোগে আক্রান্ত যে চৌদ্দ বছরে সুস্থ হতে পারেননি। এটা হলো রাজনৈতিক অসুস্থতা। খালেদা জিয়াও একবার দেশ ছাড়তে পারলে আর ফিরে আসবেন না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। তখন মা-ছেলে মিলে দেশের বিরুদ্ধে আরও জোরালোভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করবে।

বিএনপি নেতারা মায়াকান্না করলেও যার জন্য খালেদা জিয়ার এই পরিণতি তার সেই সুপুত্র তারেক রহমান একবারও মাকে দেখতে আসার আগ্রহ দেখাননি। অনেকে যুক্তি দেখান তিনি গ্রেপ্তার আতঙ্কে আসতে পারছেন না।

তারেক রহমান বিএনপির অন্যতম ‘শীর্ষনেতা’, তিনি কেন গ্রেপ্তারকে ভয় পাবেন? নৈতিকভাবে দুর্বল বলেই কারাগারকে ভয় পায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ঝড়ের রাতে প্রবল স্রোতে সাঁতার কেটে দামোদর নদী পার হয়ে অসুস্থ মার কাছে পৌঁছেছিলেন। আর তারেক রহমান অসুস্থ মাকে রেখে আরাম আয়েশ করে বেড়াচ্ছেন! এতেই বোঝা যায় মায়ের প্রতি তিনি কতটা উদাসীন! তিনি মাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন নাকি মায়ের ভালোবাসার টানে দেশে ফিরে আসবেন এখন সেটিই দেখার সময় এসেছে।

লেখক: তাপস হালদার, সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা। haldertapas80@gmail.com


সর্বশেষ - রাজনীতি