1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দৃষ্টি এখন নিরাপত্তা পরিষদে

জিএম আরিফুজ্জামান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১

সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সুরক্ষা এবং অধিকার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৭৬তম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রস্তাবটি। এ ঘটনা বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার একটা বড় অর্জন বলা যেতেই পারে। কারণ, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবারের রোহিঙ্গা সুরক্ষাবিষয়ক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে বেশি দেশের সমর্থন পাওয়া গেছে। ইইউ, ওআইসি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ১০৭টি দেশ প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এ প্রস্তাবে কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রণয়নে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ; বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর; কীভাবে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় সে লক্ষ্যে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়নের বিষয়গুলোকে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান এবং আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা জেনোসাইডবিষয়ক চলমান বিচার প্রক্রিয়ার ওপর বিশেষ দৃষ্টিপাত বিষয়ে প্রস্তাবটিতে আলোকপাত করা হয়েছে। এ প্রস্তাব অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একটা মাইলফলক হতে পারে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ কণ্টকাকীর্ণ হয়ে আছে কিছু প্রশ্নের বেড়াজালে।
সাধারণভাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কোনো গৃহীত প্রস্তাবের ওপর ভর করে কার্যকরী বা জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে প্রস্তাবটি মিয়ানমারের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে সেটা দেখার বিষয়। বিগত চার বছরে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কঠোর নীতি এবং প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়া; সাম্প্রতিক প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে সন্দেহ থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন দেশ বা সংস্থাকে নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রস্তাব পাসের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রেশার গ্রুপের সমর্থন আদায় খুব জরুরি। এটা অজানা নয়, মিয়ানমারের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে চীন। স্পষ্টত রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধান বিষয়ে বরাবরই চীন মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। যদিও চীন বাংলাদেশকে বারবার আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবিক পক্ষে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সমর্থন না পেলে সংকট দীর্ঘায়িত হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের রয়েছে বিরাট প্রভাব। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান বিষয়ে তাদের দিক থেকে তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বিষয়টি আঞ্চলিক রাজনীতিতে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে পরিচিতি লাভ। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেশার গ্রুপ যথাক্রমে- চীন, ভারত, রাশিয়ার জোরালো সমর্থন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ চ্যালেঞ্জ।
রোহিঙ্গা শব্দটি বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের রয়েছে কঠোর বিরোধী মনোভাব। তারা ১৯৮২ সালের বার্মার নাগরিকত্ব আইনের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পরিচয়কে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এ ধরনের মনোভাব রেখে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ? ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার একটা আধা সামরিক এবং আধা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অং সান সু চির নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছিল। তার সরকার কিছুটা উদারনৈতিক সরকার হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সেই সময়েই অং সান সু চিকে দেখা যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা বলতে। আন্তর্জাতিক আদালতের তার দেওয়া বক্তব্যে পাওয়া যায় রোহিঙ্গাদের প্রতি কঠোর বিরোধী মনোভাব। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তারা ছিল বরাবরই কট্টর বিরোধী। রোহিঙ্গাদের অধিকার হরণ এবং বাস্তুচ্যুতির দায় চাপানোর রুট হিসেবে আরসাকে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবহার করার অপকৌশল রয়েছে। মিয়ানমার সরকার ২০১৭ সালের ঘটনার জন্য আরসাকে দায়ী করে আসছে।
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা, ২২ অক্টোবর কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনা সংকটের নতুন মাত্রা। আরসার পরিচিতি এখন কি স্বাধীনতাকামী সংগঠন, নাকি সন্ত্রাসী সংগঠন, নাকি মিয়ানমার সরকার দ্বারা রোহিঙ্গাদের সমস্যা তৈরির একটা বাহিনী- এসব নিয়ে রয়েছে অনেক কথা। অভিযোগ আছে, আরসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন বর্তমানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য যেন ক্যাম্প বা ভাসানচরের পক্ষ থেকে কোনো আন্দোলন বা ভয়েস উত্থাপিত না হয়, এ বিষয়ে তৈরি করেছে ভীতির রাজত্ব। নিঃসন্দেহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রস্তাবটি আগামীতে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান এবং তাদের প্রত্যাবর্তনের একটা শক্তিশালী দলিল হিসেবে প্রভাব রাখবে। তবে অবলোকিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান এবং তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়, এ জন্য হাঁটতে হবে এখনও অনেক পথ।

লেখক: জিএম আরিফুজ্জামান, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। gmarif.cgs@du.ac.bd


সর্বশেষ - রাজনীতি