1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শ্রাবণের সর্বস্বান্ত ভোরে ছিঁড়ে ফেলা রক্তজবা শেখ রাসেলকে যা বলার ছিলো

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩

প্রিয় শেখ রাসেল,

আজ তোমার জন্মদিন। আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিও। তোমার শিশু হৃদয়ের অস্পষ্ট চোখে দেখা সবুজ বাংলার প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। শরৎকালের প্রকৃতি তোমার মতোই কোমল, শান্ত, স্নিগ্ধ ও উদার। শরৎ আমাদের নানা রঙের ফুলে রাঙ্গিয়ে দেয়। শরৎ শুধু কাশফুলেই নয়, শাপলা, শালুক, জবা, পদ্ম, জুঁই, কেয়া, শিউলি, কামিনী, মালতি, মল্লিকা, মাধবী, ছাতিম, দোলনচাঁপা, বেলি, জারুল, নয়নতারা, ধুতরা, ঝিঙে, শ্বেতকাঞ্চন, রাধুচূড়া, বোগেনভেলিয়াসহ কত রকমের ফুলে যে রাঙ্গিয়ে দেয়, তা তুমি দেখে যেতে পারনি! তুমি আরও দেখে যেতে পারনি এ সব ফুলে পাতা কুড়ানি শিশুরা কীভাবে তাদের কৈশোর স্মৃতিময় করে তোলে! তুমি আমাদের অদেখা দেবশিশু, কলি থেকে ছিঁড়ে ফেলা রক্তজবা, তোমার বেঁচে থাকার আকুতি আমাকে কাঁদিয়েছে।

পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও কলমযোদ্ধা বার্ট্রান্ড রাসেলের নামে তোমার নাম। কিন্তু তুমি তার লেখনী পড়ে যেতে পারনি। তুমি জেনে যেতে পারনি তোমার পিতা, আমাদের দুঃখী জনকের হাতে গড়া দেশটায় আমরা কেমন আছি, আমরা তাঁকে কত ভালোবাসী!

মুক্তিযুদ্ধে তোমার দুই সহোদর সেনা অফিসারকে বীরের মতো লড়তে দেখে তুমি সেনা হতে চেয়েছিলে। তোমার হত্যাকারীর গায়ে সেনা ইউনিফর্ম দেখে তোমার কেমন লেগেছিল? তুমি জেনে হয়তো কাঁদবে রাসেল, তোমার নামে একটা সেনানিবাস হয়েছে, তোমার হত্যাকারীদের সেনা পদবিও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই রাতের নির্মমতায় তোমার সেনা হওয়া হয়ে ওঠেনি আর, কিন্তু বাংলার অকুতোভয় সেনাদের মাঝে তুমি অমর হয়ে থাকবে।

রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে জুলিয়াস সিজারকে হত্যার বর্ণনাটি পৃথিবীর সবচাইতে নিষ্ঠুর বলে গণ্য করেন কেউ কেউ। কিন্তু সিজারকে মারার সময় কোনো শিশুকে মারেনি হত্যাকারীরা। সিজারকে মারার সময় কোনো গর্ভবতী নারীকেও মারেনি খুনির দল। বাড়ির কাজের লোক, এমনকি বেড়াতে আসা অতিথিকেও সেই রাতে তারা নির্মমতার শিকার করেছিল সিজারের প্রতি নিষ্ঠুরতাকে অতিক্রম করে। এমন নিষ্ঠুরতা দেখেও তুমি বাঁচতে চেয়েছিলে, মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিলে। ঘাতকের দল চিরতরে তোমার মায়ের পাশে তোমাকে কবর দিয়ে দিল! তৃষ্ণার্ত হয়ে জল চেয়েছিলে, পেলে না, আমাদের ভাসিয়ে গেলে নোনাজলে।

মুক্তিযুদ্ধে হেরে যাওয়ার গ্লানি ছিল পাকিস্তানপন্থি অফিসারদের। তুমি কি ভাবতে পেরেছিলে রাসেল, এই বয়সী একটা শিশুর উপরেও তারা যুদ্ধে হেরে যাওয়ার নিষ্ঠুর পৈশাচিক প্রতিশোধ নেবে? তোমার বিশ্বাস ছিল, তোমাকে ওরা মারবে না। কী নাম ছিল সেই সেনার? আমরা জানতে পারিনি। তারও নিশ্চয়ই এক বা একাধিক শিশু জন্মেছিল! সেই শিশুর একটুখানি হাসির জন্য সেও নিশ্চয়ই অপেক্ষার ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরত! সেই শিশুরা কি আজ বড় হয়েছে? তারা কি তাদের খুনি পিতাকে ভালোবাসে? আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়।

গুলিতে ছিন্নভিন্ন, আমাদের না ফোঁটা রক্তজবা শহীদ শেখ রাসেল। শ্রাবণের সর্বস্বান্ত ভোরে তোমাকে আমরা হারিয়েছি। তুমি কি এখনো সাইকেল চালাতে ভালোবাস? কিংবা লেকে মাছ ধরে সেগুলো আবার জলে ছেড়ে দিতে এখনও ভালোবাস? তোমার কি এখনও প্রিন্সস্যুট পরতে মন চায়? এখনো কি জার্মানিতে চলে যাওয়া তোমার হাসুপার জন্য তোমার মন খারাপ হয়? কেন যে তোমার হঠাৎ জন্ডিস হয়েছিল তখন, তোমার হাসুপা তোমাকে আর নিতে পারল না হিংস্র পশুদের থাবা টার্গেট থেকে! তোমার কোমলপ্রাণ হৃদয় কি এখনও প্রশ্ন করে খুনি মোশতাককে, ‘শিশুরা তো রাষ্ট্রপতি হয় না, তাও কেন আমাকে মারলে?’

আজ তোমাকে স্মরণ করি, এই লোকায়ত বাংলার দুরন্ত শিশুদের মাঝে তোমাকে খুঁজি। তুমি শান্তিতে থেকো ভাই।

ইতি,

তোমাকে না দেখার বেদনায় কাতর একজন ছাত্রলীগ কর্মী। তোমার হাসুপা ও কামাল ভাই ছাত্রলীগ করতেন, তুমিও কি সদ্য কৈশোরে গিয়ে তাদের মতোই মিছিলে নেতৃত্ব দিতে?

লেখক : হামজা রহমান অন্তর – কলামিস্ট, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও ছাত্রনেতা,  উপ-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।


সর্বশেষ - রাজনীতি