পাবনা সদরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আফসানা আখতার। স্বামী স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাকরি করেন। ৮ বছরের সংসার তাদের। একমাত্র সন্তানের বয়স তিন বছর। পরিবারের আর কোনো সদস্য থাকেন না তাদের সঙ্গে। ফলে সন্তানকে নিয়ে হিমশিম খেতে হয় আফসানাকে। স্থায়ী একজন গৃহসহায়িকা রয়েছেন বাসায়। তার কাছেই সন্তানকে রেখে আফসানা বিদ্যালয়ে যান।
আফসানা বলেন, বাচ্চাকে এভাবে বাসায় রেখে স্কুলে গিয়ে কাজে মন বসানো কঠিন। স্কুলেও বাচ্চাকে রাখার ব্যবস্থা নেই। শুনেছি বাচ্চাদের রাখার জন্য ঢাকায় ডে কেয়ার সেন্টার আছে। এরকম জায়গা পেলে বাচ্চাকে নিশ্চিন্তে রেখে স্কুল করতে পারতাম।
সারাদেশে আফসানার মতো লাখ লাখ কর্মজীবী মা রয়েছেন, যাদের পরিবারে বাড়তি কোনো সদস্য নেই বলে সন্তানকে নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হয়। তারা না পারেন সন্তানকে সঙ্গে রাখতে, না পারেন সন্তানকে নিশ্চিন্তে কোথাও রেখে যেতে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ধরনের কর্মজীবী মায়েদের জন্যই সমাধান হয়ে আসতে পারে ডে কেয়ার সেন্টার তথা শিশুদের জন্য দিবা পরিচর্যা কেন্দ্র, যার সংখ্যা দেশে একদমই অপ্রতুল।
এ পরিস্থিতিতেই কর্মজীবী মায়েদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের ৬০টি জেলায় ৬০টি নতুন ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করবে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই উদ্যোগে ডে কেয়ার সেন্টারগুলোতে জায়গা হবে চার মাস থেকে শুরু করে ছয় বছর বয়সী শিশুদের।
সরকারের আশা, মায়েরা তাদের সন্তানদের এসব ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে কর্মস্থলে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবেন। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এরই মধ্যে এর একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পটি মূল্যায়নের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এ উদ্যোগে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন কর্মজীবী মায়েরা এবং নারী অধিকার কর্মীরা।
দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় তাদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে এবং তাদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতাকে কর্মমুখী করতে না পারলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব না বলে মনে সরকার। সে কারণে বিভিন্নভাবে সরকার নারীদের কর্মমুখী করতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণও বেড়েছে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশাতেও এখন নারীরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে।
নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, এ অবস্থায় জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ও সার্বিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। এরই একটি অংশ হিসেবে এবার দেশের ৬০টি জেলায় ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ৯৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ডে কেয়ার সেন্টারের প্রকল্প প্রস্তাবনাটি নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ৬০টি ডে কেয়ার সেন্টারের মধ্যে ৪০টি স্থাপনের দায়িত্বে থাকবে মহিলাবিষয়ক অধিদফতর, বাকি ২০টি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় মহিলা সংস্থা। তবে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প এলাকাগুলোকে এভাবে বিভক্ত করার যৌক্তিকতা নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা হবে।