1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জেরুজালেমের ইহুদি ও নেবুচাদনেজার

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩

এখনকার ছেলেমেয়েরা বনিএম (BoneyM) শোনে কিনা জানি না। আমি যখন কিশোর তখন বাংলাদেশে বনিএম ছিল তুমুল জনপ্রিয়। টেলিভিশনে তখন ইংরেজি গান শুনতে পেতাম কদাচিৎ। সপ্তাহে একদিন একটা এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান ছিল বিদেশি গানের, সেখানে কয়েকটা গান হতো। এছাড়া গান শুনতে হতো ক্যাসেট প্লেয়ারে আর রেডিওতে। বনিএমএর ক্যাসেট বিক্রি হতো মুড়ি মুড়কির মতো। ওদের একটা গান তখন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল, নাম বাই দ্য রিভার্স অফ ব্যাবিলন। গানের প্রথম দুই লাইন ছিল By the rivers of Babylon, there we sat down/Yeah, we wept, when we remembered Zion.

প্রথম প্রথম এই গানের অর্থ বুঝতাম না। ইংরেজি গানের কথা বুঝতে অসুবিধা হতো। ক্যাসেটের কভারের সঙ্গে বাড়তি কাগজজুড়ে দিয়ে সেটাতে গানের কথাগুলো প্রিন্ট করে দেওয়া থাকতো, সেখান থেকে পড়ে এর অর্থ উদ্ধার করেছি। আমার সুবিধা ছিলো, সত্যেন সেনের পাপের সন্তান ও নগরীর ইতিকথা এসব আমার পড়া ছিল স্কুলে থাকতেই। এই গানের কথাগুলোর অর্থ উদ্ধার করতে আমার বেশি সময় লাগেনি- এটা হচ্ছে ইহুদীদের গান, পিতৃভূমি জেরুজালেম থেকে শত শত মাইল দূরে বৈরি ব্যাবিলন শহরে নির্বাসিত ইহুদীদের গান, ইহুদিদের কান্নার গান।

গল্পটা আপনারা জানেন- গল্প নয়, ইতিহাস। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ছয়শ বছর আগের কথা। জেরুজালেমে ইহুদিরা মোটামুটি শান্তি ও সমৃদ্ধিতেই বসবাস করছিল, ওদের বিশাল সুন্দর মন্দির ছিল নগরের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। এসময় ব্যাবিলনের শাসক ছিলেন ছিলেন রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সালে তিনি বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে জেরুজালেম আক্রমণ করলেন। বিশাল প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত জেরুজালেম অবরুদ্ধ করে রেখছিলেন নেবুচাদনেজারের বাহিনী- একসময় জেরুজালেম আর ঠেকাতে পারলো না, ব্যাবিলনিয় বাহিনী জেরুজালেম সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল সেবার। ওদের মন্দির কিছুই রক্ষা পায়নি।

আর জেরুজালেমের অধিবাসী ইহুদীদের কী হয়েছে? নেবুচাদনেজার শহরের প্রায় সকল ইহুদীকে গরু ছাগলের মতো বেঁধে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে সুদূর ব্যাবিলনে। ব্যাবিলন অতি সমৃদ্ধ নগরী, সম্ভবত সেই সময় পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত বিকশিত ও সুন্দর নগর। সেইখানে ইহুদীরা বাস করেছে দাস হিসাবে- দাসের জীবন যে স্বাধীন নয় এবং অতি কষ্টের জীবন সেকথা তো আর ব্যাখ্যা করে উদাহরণ ইত্যাদি দিয়ে বুঝাতে হবে না। সেই কঠিন সময়ে কখনো কদাচিৎ কিছু ইহুদী হয়তো জড়ো হতো একসাঠে রাতের বেলায়, ছোট একটা আগুন জ্বেলে আগুন ঘিরে বসে গাইতো ওদের নগর জেরুজালেম আর ওদের আরাধ্য ঈশ্বরের কথা স্মরণ করে, আর কাঁদতো।

প্রায় সত্তর বছর পর, পারস্যের সম্রাট সাইরাস যখন ব্যাবিলন দখল করে নেয় তারও বেশ কিছু পর, সম্রাট সাইরাসের এক ডিক্রী বলে ইহুদীরা আবার ফেরত আসে জেরুজালেমে, নতুন করে তৈরি করে ওদের নগর, ওদের মন্দির। ইতিহাসে ইহুদিরা পরিচিত ইসরায়েলি নামেই। আর ইসরায়েল ভূমি ওদের ধর্মে বিবেচিত হয়, প্রতিশ্রুত ভূমি হিসাবে। ইংরেজিতে যাকে বলে প্রমিজড ল্যান্ড। আপনারা হয়তো জানেন, ইহুদিদের প্রার্থনায়, যেটা অনেকটা মুসলিমদের নামাজের মতোই- প্রতিদিন তিনবেলা ওরা জেরুজালেমের কথা বলে। অনেকটা মুসলমানদের সূরা পাঠের মতো করে।

গানটার কথা হচ্ছিলো। শুধু বাই দ্য রিভার্স অফ ব্যাবিলনই নয়, পশ্চিমের গানে কবিতায় ও সাহিত্যে নানাভাবে ছড়িয়ে আছে ইসরাইলীদের দু:খ কষ্ট আর জেরুজালেম নিয়ে ওদের তীব্র অনুভূতি ও আবেগের কথা। বনিএম ছাড়াও বব মারলের কণ্ঠেও জনপ্রিয় হয়েছে ওদের গান। ইহুদিরা ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর নানা কোনায়, ইউরোপে এবং অন্যত্র সবখানে ওদেরকে নিগৃহীত হতে হয়েছে, নির্যাতন অবজ্ঞা ও ঘৃণা বিদ্বেষের শিকার হতে হয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। পৃথিবীর যেখানেই থাকুক, যতো কষ্টেই থাকুক, প্রতিশ্রুত ভূমির কথা, জেরুজালেমের কথা আর জেরুজালেমে ওদের আরাধ্য ঈশ্বরের কথা ওরা কখনো ভুলে যায়নি।

না, এখন যে যুদ্ধটা চলছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সেটা নিয়ে এই পোস্ট নয়। কেননা এই যুদ্ধে আপনি চট করে ইসরায়েল বা হামাসের মধ্যে কোনো একটা পক্ষ অবলম্বন করবেন হিসাবটা অতো সহজ নয়। আমার মনে পড়লো সেই গানটির কথা, মনে পড়লো ইহুদীদের প্রতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঘটে যাওয়া বৈষম্য অন্যায় অত্যাচার ও অবিচারের কথা। এজন্যে ভেবেছি, সেই গানের কথাটা তরুণ বন্ধুদের জন্যে আরেকবার বলি। শুনবেন আরেকবার গানটি- By the rivers of Babylon, there we sat down/Yeah, we wept, when we remembered Zion.

লেখক : ইমতিয়াজ মাহমুদ – আইনজীবী


সর্বশেষ - রাজনীতি