1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ইউরেনিয়াম যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩

একটার পর একটা মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে পুরো পৃথিবীকে অবাক করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পর জাতির পিতা রাশিয়া ও ফ্রান্সের সাথে আলোচনা শুরু করলেও সেটা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি। তিনি না পারলেও তারই কন্যা তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করছে অবশেষে । বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই সফল হলো বাংলাদেশ। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ইতোমধ্যেই প্রথম ইউনিটের জন্য রাশিয়া থেকে এসেছে ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আজ দুপুরে এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ঐতিহাসিক এই গ্র্যাজুয়েশনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৩৩তম ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। আর আমরা এখন নিউক্লিয়ার ক্লাবের গর্বিত সদস্য।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করলে দেশের আর্থসামাজিক তথা নাগরিক জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে দেশের জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাত প্রধানত গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার মজুদ আমাদের দেশে অত্যন্ত সীমিত। ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশকে আমদানী নির্ভর তরল পেট্রোলিয়ামের উপর বহুলাংশে নির্ভর করতে হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করার ফলে পেট্রোক্যামিক্যালস জাতীয় শিল্পদ্রব্য তৈরিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, কৃষির জন্য সার উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এলপি গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। তেল ও কয়লা আমদানিতে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা ব্যয় হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে বটে, কিন্তু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। কৃষিকাজ এবং নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা সর্বোপরি দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য আমাদের আরও অনেক বেশি বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োজন। এসব বিষয় বিবেচনা করে বর্তমান সরকার একটি উপযুক্ত জ্বালানী-মিশ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। যা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুকেন্দ্র।

১৯৬১ সালে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মার তীরে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রজেক্ট হাতে নেয়। বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করলেও বেশি দূরে এগোতে পারেনি। ১৯৭৭-১৯৮৬ সালে মেসার্স সোফারাটাম পরিচালিত ফিজিওবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে যৌক্তিক বলে বিবেচিত হয় প্রজেক্টটি। কিন্তু বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয় নি। পরে আবার ১৯৮৭-১৯৮৮ সালে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের দুটি কোম্পানি দ্বিতীয়বার ফিজিবিলিটি স্টাডি করে। তখন ৩০০-৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদিত হলেও সেটি তখন আলোর মুখ দেখেনি। তারপর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আবার প্রকল্পটি শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালের পর আবার প্রজেক্টের কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার ভার পেলে আবার শুরু হয় কাজ। এবার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি দায়িত্ব পেয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেন।
২০১৩ সালে শেখ হাসিনা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৭ সালে ১০৬২ একর জমির উপর পূর্ণোদ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুটকেন্দ্রটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে। এই কাজের অর্থ থেকে যাবতীয় কাজে সহায়তা করছে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু রাশিয়া। রুপপুরের এই পারমানবিক চুল্লি নির্মিত হয়েছে রাশিয়ায়। ভিভাআর-১২০০ মডেলের এই রিয়্যাক্টরে পরমাণু জ্বালানি পুড়িয়ে মূল শক্তি উৎপাদন হবে এবং ২৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রথমে ১২শ মেগাওয়াট ও পরবর্তীতে সমপরিমান উৎপাদন সম্ভব হবে।

সাধারণত নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। কিন্তু আমরা মাত্র ৮ বছরের মধ্যেই উৎপাদনে যেতে পারবো আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। তার ১০ মাস পর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে নিউক্লিয়ার প্রকল্পটি। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩০৯২৯১ কোটি টাকা। এটা বাংলাদেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প। এটার ফলে বাংলাদেশ তার সক্ষমতার পরিচয় তুলে ধরেছে বিশ্বের দরবারে।

সামনের দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ-এর চাহিদা মেটাতে এই পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প ভূমিকা রাখবে। পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প। প্রকল্পটি নিয়ে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র চলেছে । দুর্নীতির ধুয়ো তোলা হয়েছে বার বার। যা দুদকের তদন্তে মিথ্যা বলে প্রতিয়মান হয়েছে। বিভিন্ন বাঁধা ও চড়াই-উৎরাই পার হয়ে অবশেষে দীর্ঘ ৬২ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুনে ও ২৬০০০ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে প্রকল্পটি শেষের পথে।

লেখক : পৃথিবী আলম রাজ – শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি