লেখাটি যখন শুরু করছি, তখন বিশ্ব মিডিয়ায় তাক লাগানো খবর হলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মাত্র ৪২ বছরের যুবক ঋষি সুনাক। এটি এক নতুন ইতিহাস শুধু নয়, নতুন পথে ইতিহাসের যাত্রা শুরুর পূর্বাভাস। একসময় ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসককুলের বাড়ি ও ক্লাবের প্রধান ফটকে বড় বড় করে লেখা থাকত ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। আজ মাত্র ৭৬ বছরের মাথায় এসে বিপুল সম্ভাবনাময় ভারতীয় এক যুবক ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে শুধু প্রবেশ নয়, সেখানকার প্রধান শীর্ষ কর্মকর্তা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী নামক রথের গোল চাকা কত দ্রুত ঘুরছে। পৃথিবীতে কিছুই স্থির ও স্থায়ী নয়। তাই ভূ-রাজনীতির চলমান রথের ঘূর্ণায়মান চাকার নিচে পড়ে কোন দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র কখন পিষ্ট হবে, আর কারা বেঁচে থাকবে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সে দেশের মানুষ এবং সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সততা, মেধা ও ধীশক্তির ওপর।
সবাই মুখে বলে যুদ্ধ চাই না। তার পরও যুদ্ধ হয়েছে। এখনো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। দুর্বল রাষ্ট্র কখনো যুদ্ধ বাধায় না, প্রকৃতপক্ষেই যুদ্ধে জড়াতে চায় না। কিন্তু বড় শক্তিগুলোর মধ্যে সংঘটিত দ্বন্দ্ব-প্রতিযোগিতায় পক্ষে-বিপক্ষে টানাটানির সমীকরণে ছোট ও মাঝারি রাষ্ট্রগুলোর জন্য দ্বন্দ্বে রত শক্তিগুলো থেকে সমদূরত্ব এবং নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, শক্তিগুলোর দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে ‘ক্রসফায়ারের’ শিকার হওয়ার মতো ছোট ও মাঝারি রাষ্ট্রগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়ে, অস্তিত্ব হারায়। এ রকম এক পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হয়েছে আজকের ইউক্রেন। ইয়েমেন ও আফগানিস্তানের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কেউ ভাবেনি ইউরোপে আবার বড় আকারের যুদ্ধ হবে। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তবে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ক্রিমিয়া রাশিয়া কর্তৃক দখল ও সংযুক্তি হওয়ার পর অন্য এক সহযোগী দৈনিকে আমি লিখেছিলাম, এ এক বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি হলো, ইউক্রেনকে আর রক্ষা করা যাবে না। বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের নাগরিক হিসেবে শুরু থেকেই আমি আমার লেখায় ও বক্তব্যে রাশিয়ার এই আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছি।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এখন এমন এক বিপজ্জনক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে পারমাণবিক ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাকে কেউ এখন আর অমূলক বলছে না। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির মেরুকরণে নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বিচক্ষণ ও তাক লাগানো ঘটনাটি ঘটিয়েছেন সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমান। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের সংকটে যখন সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব কাবু, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব পারস্পরিক স্বার্থরক্ষায় এক নিবিড় চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি রাজতন্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করার বিনিময়ে ভবিষ্যতে যেকোনো সংকটে জ্বালানি তেল সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান করে সৌদি আরব। তারপর মাঝেমধ্যে কোনো কোনো কারণে মনোমালিন্য হলেও চুক্তির বরখেলাপ কোনো পক্ষই করেনি। সৌদি আরবে এখনো মার্কিন সেনাবাহিনী রয়েছে। সৌদি ঘনিষ্ঠ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনেও মার্কিন সেনাবাহিনী রয়েছে। গত জুন মাসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরব সফরে এসে যুবরাজ সালমানের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করে গেলেন। কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ সফরের জের কাটতে না কাটতেই যুবরাজ সালমান রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেক প্লাসের সভায় সিদ্ধান্ত নিলেন বিশ্বব্যাপী তেল উৎপাদন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল হ্রাস করা হবে।
জ্বালানিসংকটে অস্থির দেশগুলোর জন্য মাথায় বাজ পড়ার মতো ঘটনা। এর ফলে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সূত্রে আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর সব দেশেই মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলো ত্রিমুখী চাপে পড়বে। প্রথমত, জ্বালানিসংকটে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হবে। দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের মধ্যে চরম অস্থিরতা তৈরি হবে। বাংলাদেশসহ যাদের রপ্তানির বেশির ভাগ পশ্চিমা বাজারের ওপর নির্ভরশীল, তাদের রপ্তানি হ্রাস পাবে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে।
নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন, যেটি মধ্যবর্তী নির্বাচন নামে পরিচিত। সে জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল তেল উৎপাদন হ্রাস করার সিদ্ধান্ত যেন অন্তত একটি মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই অনুরোধ যুবরাজ সালমান রক্ষা করেননি। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সৌদি আরবকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। অনেকে বলছেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সৌদি আরব স্পষ্টতই ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ অবলম্বন করেছে। সৌদি যুবরাজের এমন নাটকীয় ইউটার্নের আসল মরতবা কী, তা বোঝার জন্য আরো কয়েকটি দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে সৌদি রাজতন্ত্রের জন্য প্রধান হুমকি ইরানের মোল্লা রেজিমের প্রভাব আরববিশ্বে, বিশেষ করে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লেবাননে যেভাবে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এত তাড়াতাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের প্রটেকশন বলয়ের বাইরে সৌদি রাজপরিবার যেতে পারবে কি না, তা দেখার বিষয়।
আমার নিজস্ব বিশ্লেষণ বলছে, পরিস্থিতির সুযোগে স্মার্ট চাল দিয়েছেন যুবরাজ সালমান। তাঁর লক্ষ্য হতে পারে—প্রথমত, পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহাল করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন ইরানকে নতুন করে কোনো ছাড় না দেয়, আপস না করে। দ্বিতীয়ত, যুবরাজ হয়তো এই প্রতিশ্রুতি চাইছেন যে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে মার্কিন প্রশাসন যেন আর কোনো কথা না বলে। তৃতীয়ত, ৯/১১-এর ঘটনায় জড়িত বেশির ভাগ সন্ত্রাসী সৌদি নাগরিক ছিল বিধায় ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শেষ প্রান্তে সৌদি আরবের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে মার্কিন কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। সুতরাং জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক প্রশাসন যেন পুনরায় সেই দাবি উত্থাপন না করে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ভূ-রাজনীতির হিসাবে দাতা হাতেম তাঈয়ের কোনো স্থান নেই। নাথিং ইজ ফ্রি ইন দিস ওয়ার্ল্ড। যুবরাজ পশ্চিমা বিশ্বের ওপর আরো চাপ সৃষ্টির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
২৩-২৪ অক্টোবর সৌদি আরব সফর করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। সফরের শেষ প্রান্তে প্রেসিডেন্ট রামাফোসা ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস (BRICS —ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না ও সাউথ আফ্রিকা) শীর্ষ সম্মেলনের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরব ব্রিকসের সদস্য হবে। এটা হলে ভূ-রাজনীতির মেরুকরণে বড় পরিবর্তন ঘটবে। সংগত কারণে সৌদি আরবের পথ ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনও ব্রিকসের সদস্য হবে। অন্যদিকে এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে ২০২৩ সালে ইরান ও আর্জেন্টিনা ব্রিকসে যোগদান করবে। তুরস্ক এবং মিসরও ব্রিকসের সদস্য হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্রিকসকেন্দ্রিক উল্লিখিত মেরুকরণ যদি সত্যি হয়, তাহলে সেটি পশ্চিমা বিশ্বের সাতটি উন্নত দেশ নিয়ে গঠিত জি-৭ (আমেরিকা, কানাডা, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেন) গ্রুপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। বিশ্বব্যবস্থার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের কর্তৃত্ব আরো হ্রাস পাবে। তবে এ ব্যাপারে এখনো শেষ কথা বলার সময় আসেনি।
সব কিছু নির্ভর করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি ও তার পরিণতির ওপর। এই যুদ্ধ চলমান বিশ্বব্যবস্থার জন্য বড় ঝাঁকুনি সৃষ্টি করেছে, যার ঢেউ অনেক দূর গড়াবে। তখন কোন রাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে সেটি এখনই বলা না গেলেও এটি বলা যায়, বিশ্বব্যবস্থা আর আগের মতো থাকবে না। আলোচ্য মেরুকরণে উদীয়মান শক্তি ভারতের অবস্থান কী হবে, সেটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলবে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাদপসরণ, তালেবানের ক্ষমতা দখল এবং তারপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষে ভারতের যে ভালো এক টানাপড়েন চলছে, তা একদম স্পষ্ট। গত জুন মাসের ৪ তারিখে মিডিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্কর বলেছেন, ইউরোপের সমস্যা মানেই সেটি বিশ্বের সমস্যা, আর বিশ্বের অন্যান্য স্থানের সমস্যা ইউরোপের সমস্যা নয়, এ চিন্তা থেকে ইউরোপকে বের হতে হবে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফরকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, গণতান্ত্রিক পশ্চিমা বিশ্ব বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানালেও প্রতিবেশী সামরিক ডিক্টেটর শাসিত দেশে অস্ত্র বিক্রিতে দ্বিধা করেনি। ড. জয়শঙ্কর স্পষ্টতই পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
একটু আগেই বলেছি, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ কিভাবে শেষ হবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে ভবিষ্যতে বিশ্ব পরিস্থিতি কী রূপ ধারণ করবে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য দু-একটি দৃশ্যের ওপর সামান্য আলোকপাত করেই লেখাটা শেষ করছি। প্রথমত, সব পক্ষের জন্য ‘উইন উইন’ একটা সমঝোতায় যুদ্ধটা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত করার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন পয়েন্ট অব নো রিটার্ন পর্যায়ে চলে গেছেন। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্বের যদি একতরফা জয় হয়, তাহলে কী হতে পারে। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, রাশিয়া পুনরায় ভঙ্গুর ও দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হবে। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ রাশিয়াকে দিতে হবে। পুতিন ক্ষমতাচ্যুত শুধু নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁর বিচারও হতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার না করে প্রেসিডেন্ট পুতিন এমন ভয়ংকর বিপর্যয় মেনে নেবেন কি? বড় প্রশ্ন। তৃতীয়ত, রাশিয়া একতরফাভাবে জয়ী হলে ইউক্রেন রাষ্ট্র বলে আর কিছু থাকবে না। পশ্চিমা বিশ্বের জন্য ভবিষ্যতে চীনকে মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং পশ্চিমা বিশ্ব সেটা হতে দেবে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া আট মাসের মাথায় এসে মাঠের যুদ্ধ পরিস্থিতি যেখানে এসেছে, তাতে সামরিক বিজয়লাভ রাশিয়ার জন্য কোনোভাবেই আর সম্ভব নয়।
তাহলে দাঁড়ালটা কী? ‘উইন উইন’ সমাধান হবে না এবং একতরফাভাবে কোনো পক্ষের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কী হবে, তা কেউ সঠিকভাবে বলতে না পারলেও পারমাণবিক যুদ্ধ বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা কেউ বাদ দিতে পারছে না। তাই সব দেশের জন্যই এখন ‘ইয়া নফসি, ইয়া নফসি’র সময় এসে গেছে। বাংলাদেশকে আগামী এক বছরের জন্য অন্তত জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা এখনই জরুরি ভিত্তিতে ভাবা উচিত। বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ভূ-রাজনীতির বিভাজনে কেউ ছাড় দেওয়ার মনোভাবে না থাকায় বিশ্বব্যবস্থা আজ ভেঙে পড়েছে। এই ভঙ্গুর বিপর্যয়কর অবস্থা ঠেকাতে জাতিসংঘও অসহায় হয়ে পড়েছে। ৭৭তম অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পারস্পরিক আস্থার জায়গা চুরমার হয়ে গেছে, বৈষম্য এখন বিস্ফোরণোন্মুখ এবং বিশ্ব এখন এক জ্বলন্ত চুল্লিতে পরিণত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ’ মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে হলে এই বিপজ্জনক ট্রেন্ড থামাতে হবে।
লেখক : মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) – রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।