1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সবার উপরে মানুষ সত্য

গোপাল অধিকারী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২

পৃথিবীটা বিচিত্র। বিচিত্র মানুষ। কেউ অমানবিক হয়ে মানবিকতার ছদ্মবেশ ধারণ করেছে, কেউ বা অমানবিক পরিচয় গর্বের সাথে দিচ্ছে, কেউ বা মানবিক হয়ে আড়ালেই রয়ে গেছে। পৃথিবীতে প্রতিদিন কতই না অমানবিক ঘটনা ঘটছে। কখনও কোমলমতি শিশুর জায়গা হচ্ছে পরিত্যক্ত স্থানে। অমানবিক মানুষগুলো নিজের অজান্তেই ভুল করছে আর তার মাশুল দিচ্ছে স্রষ্টাপ্রদত্ত অসহায় শিশু। কখনও বা একটি সন্তানের জন্য দেশ-বিদেশ চিকিৎসার জন্য ছুটছে সন্তানপ্রিয় বাবা-মা। তাদের চোখে-মুখে মলিন চেহারা। একটি সন্তান যেন তাদের পরম আরাধ্য। কখনও বা এই সন্তানের জন্যই বাবা-মা ছাড়ছে ঘর। কখনও বা ছাড়ছে পৃথিবীর মায়া। এই অমানবিক ঘটনাগুলো যে ধর্মে যে জাতিতেই হোক না কেন নিঃসন্দেহে তা মানবিক নয়। অবশ্যই তা কারো কাম্য নয়, কাম্য হতে পারে না।

আমরা শুধু ধর্মের দোহায় দিয়ে অনেক সময় নিজেকে হিংস্র করে তুলি কিন্তু আমাদের পাশে, আমাদের সাথে একই ধর্মের অনেকেই রয়েছে অমানবিক তা কিন্তু ভেবে দেখি না, বুঝতে পারছি না বা চেষ্টাও করছি না। আবার অন্য ধর্মের অনেকেই আমাদের সাথে না থাকলেও সে যে আমাদের চেয়ে মানবিক তাও কিন্তু ভেবে দেখি না, বুঝতে পারছি না বা আমাদেরই অমানবিক মানুষগুলো বুঝতে দিচ্ছে না।

সম্প্রতি শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব। এই বছর এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও এই উৎসবের দিনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার প্রতিবেদন আমি দেখি নাই। আমার মনে হয় কেউই দেখে নি। যা আমাদের মানবিক মানুষেরই পরিচয় তুলে ধরেছে। পূজা আসলেই কেমন যেন অনুভূতি তৈরি হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়। এই বছর পূজাটি কেমন হবে? ভালভাবে সম্পন্ন করতে পারবো তো ইত্যাদি ইত্যাদি। এই শঙ্কাটা স্বাভাবিকই বলা যায় কারণ প্রতিবছরই তো কোন না কোন মন্দিরে প্রতিমা ভাংচূরের ঘটনা ঘটছে। একটি বছর পর সবচেয়ে বড় উৎসব যেখানে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হওয়ার কথা সেখানে শঙ্কা তৈরি করা নিঃসন্দেহে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য কাম্য হতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ একটি বিচিত্র দেশ যেখানে নানান জাতির বসবাস। সেখানে রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের ব্যর্থতাই প্রকাশ পায়।

অন্যদিকে এই উৎসব আসলেই একটি গোষ্ঠী নিজেদের ধর্ম কায়েম করার সময়, স্বার্থহাসিলের সময় বা একটি অস্থিতিশীলতা তৈরির সময় মনে করে প্রতিমা ভাংচূর করতে লিপ্ত হয়। আর এই কাজটি করতে গিয়ে তারা শুধু শঙ্কায় তৈরি করে না, রাষ্ট্রের আইন, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও অসাম্প্রদায়িতক চেতনা ক্ষুন্ন করে। অথচ কোন ধর্মে প্রতিমা ভাংচ’র করতে হবে করলে সওয়াব হবে এমন কথা লেখা আছে বলে আমার জানা নেই। সুতরাং যারা এমন চিন্তা করে বা অন্য ধর্মের যারা ইসলামকে নিয়ে কটাক্ষ করে তারা মানুষ হিসেবে মানবিক এ কথা ভাবার কোন অবকাশ নেই। তাদের দ্বারা সমাজের বা রাষ্ট্রের কোন উন্নয়ন, শৃঙ্খলা বা সমৃদ্ধি হবে বলেও মনে হয় না।

বরগুনার পাথরঘাটায় বিয়ের দাবিতে বাবা নিরঞ্জন চন্দ্র শীলের (৬৫) সঙ্গে তর্কের একপর্যায়ে টেবিলের পায়া দিয়ে আঘাত করেন ছেলে নেপাল চন্দ্র শীল (৩০)। গুরুতর আহত অবস্থায় নিরঞ্জন চন্দ্রকে দ্রুত নেওয়া হয় হাসপাতালে। বেলা একটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাথরঘাটা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। বাবা নিরঞ্জন চন্দ্র শীল বিয়ে ও জমি লিখে দেওয়ার ব্যাপারে অগ্রসর না হওয়ায় সকালে নেপালের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয়।

খাগড়াছড়ির রামগড়ে রুমা বেগম (৬০) নামে এক গর্ভধারানী মাকে পিঠিয়ে হত্যা করেছে পাষন্ড ছেলে মো. ইব্রাহিম (৩৫)। এই বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামগড়ের চৌধুরীপাড়ায় ৫নং পৌর ওয়ার্ড (জেলখানার পিছনে) এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সে বাড়িতে এসে মায়ের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে মা রুমা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় পাষন্ড ছেলে। এরপর সে তার মাকে এলোপাতারি আছাড় মারতে থাকে। এতে তার নাক, মুখ ও মাথা থেঁতলে যায়। অধিক রক্ত ক্ষরণে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।

উপরের প্রতিবেদনে দেখা যায় একটি সনাতন ধর্মাবলম্বী সন্তান যে পাপকর্মটি করেছে একটি মুসলমান ধর্মাবলম্বী সন্তানও একই কাজ করেছে। তাহলে তাদের মধ্যে ধর্মের গুণে কেউ ক্ষমা করবে বলে আমার মনে হয় না। কোন সমাজই তাদের এই অপরাধকে মেনে নিবে বলে মনে হয় না। সুতরাং আমরা বলতেই পারি অপরাধ সবসময় অপরাধ। তাই বলা হয় অপরাধের কোন ধর্ম নেই। আর অপরাধীকে প্রশ্রয় দিতে নেই। আজ যদি তারা মানবিক মানুষ হতো তাহলে এমন জঘন্য কাজ করতে পারত না। সুতরাং মানবিক মানুষ কিন্তু আগে হতে হবে।

সকলের জন্ম-মৃত্যু একই রকম। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ তাতে নেই কোন অভিন্ন। মায়ের পেটে দশ মাস দশ দিন কারো বা কম বেশি কিন্তু জন্ম একই নিয়মে । জন্ম থেকেই কেউ বড় হয়ে আসে না। আসে না অমানুষ বা হিংস্র হয়ে। যেদিন একটি সন্তানের আগমন ঘটে সেদিন সকলের জন্যই শুভকর। একটি বাবা-মায়ের অনেক সাধনা ও সুখের ফলশ্রুতি সন্তান। কিন্তু বড় হওয়ার পর পর তৈরি হয় ভেদাভেদ। কেউ বা হচ্ছে মানুষ, কেউ বা মানবিক মানুষ কেউ বা অমানুষ। অথচ সৃষ্টি কর্তা জগতের কল্যাণের জন্যই সকলকে সৃষ্টি করেছেন।

ইসলামের ভাষায় আশরাফুল মাখলুকাত অথ্যাৎ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সনাতন ধর্মেও আছে জীবসেবা বড় সেবা। জগতের সকল ধর্মেই জীবসেবা, অন্যের ক্ষতি না করা, পরোপকারসহ বিভিন্ন মানবিক গুণাবলীর কথা সুন্দরভাবে বলা হয়েছে। তারপরও থেমে নেই হিংসা-বিদ্বেষ বাদ যায় নি সংঘাত। তাইতো কখনও মাকে খুন করে সন্তান হচ্ছে শিরোনাম কখনও বা পিতাকে হত্যা করছে জগতের সবচেয়ে পরম পাওয়া সন্তান। মানুষের এই অমানবিকতার কারণে কখনও পশু হচ্ছে শিরোনাম। অথচ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।

সবকিছুই সৃষ্টি শুভর জন্য। তবুও অশুভর আগমন ঘটে, ঘটেছে, ঘটবে। জীবনে যেমন সুখ-দু:খ রয়েছে তেমনি জগতেও থাকবে শুভ ও অশুভ। তবে অশুভর বিদায়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ অশুভ কখনও কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না। সবসময় অশুভর পরাজয় ঘটে। শুভর আগমন কেউ কখনও রুখতে পারবে না। যেমনটা পারে নি সকল ধর্মে, সকল দেশে যুগে যুগে, সময়ে সময়ে। ধর্ম থাক ধারণের জায়গায়। পৃথিবীতে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলের আগমন ও প্রস্থান এক। ব্যবধান শুধু নামাজ-পূজায়। একই আকাশে একই বাতাসে লালিত-পালিত হয়ে আমার চিন্তা আলাদা হতে পারে না। আমার ধর্ম আলাদা হতে পারে। তাইতো যুগে যুগে সকল নবী-মণীষী মানবতার কথাই বলেছেন। জীবসেবার কথায় বলেছেন। হানাহানি ও সংঘাতের পথ ছেড়ে শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শান্তির ঐক্যমতে পৌছাতে পারলে প্রতিটি দিনই আমার জন্য হবে সুদৃঢ়।

আজ মেয়েরা বাইরে নিরাপদ থাকছে না। হিংস্র হায়েনাদের ভয়ে গন্তব্যে পৌছাতে পারছে না। কোন ধর্মই তাদের হিংস্রতাকে রুখতে পারে নি। কিন্তু আজ যদি তারা মানবিক মানুষ হতো নিশ্চিত তারা এ জঘন্য কাজ করত না। তাদের দ্বারা ধর্ম কলুষিত হতো না। তাঁদের দ্বারা জাতি লজ্জিত হতো না। মানবিক চেতনাবোধ কখনও অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে না। কখন মাথা বিক্রি করে না। কখনও প্রলুব্ধ হয় না। একটি গাছ লাগালে যেমন তার ফুল বা ফল নতুন করে কেনা লাগে না ঠিক তেমনি একজন মানবিক মানুষ রক্ষা করতে পারে ধর্মকে, সমাজকে, জাতিকে। তাই সবার আগে মানবিক মানুষ হতে হবে। এই মানবিকতায় সকল অপকর্ম, অধর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। তাতেই ধর্মও রক্ষা হবে। রক্ষা হবে সমাজ, গোষ্ঠী, রাষ্ট্র। আসুন মানবিক মানুষ হতে সকলে হই সচেষ্ট।

একটি ঘটনা আমাদের অনেক পরিবর্তন করতে পারে। প্রতিদিন এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে যা দেখে মুহূর্তে আবেগকে তাড়িত করে। সকল আঁধার পেরিয়ে কালবেলার শুভক্ষণে এই লেখাটি দিয়েই জাগ্রত করতে চাই মানবিকতা ক্ষণে ক্ষণে, যুগে, যুগে।

লেখক : গোপাল অধিকারী – সাংবাদিক ও কলামিস্ট


সর্বশেষ - রাজনীতি