1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’

ড. মতিউর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২

জাতিসংঘের হাঙ্গার রিপোর্ট অনুসারে, ক্ষুধা সেই সময়কালকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যবহৃত শব্দ যখন জনসংখ্যা গুরুতর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়— অর্থাৎ অর্থের অভাবে খাদ্যে প্রবেশাধিকারের অভাব বা অন্যান্য অবস্থার কারণে তারা না খেয়ে থাকে।

জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের বেশি খাদ্য উৎপাদিত হয় কিন্তু মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ এখনও ক্ষুধার্ত। জাতিসংঘ বলছে এক দশক ধরে ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পর, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আবারো বাড়ছে। আর ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ার পেছনে মূলত তিনটি সংকট কাজ করছে— তা হলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারি।

বিশ্বব্যাংকের “World Population Report 2021” অনুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যা এখন প্রায় ৭.৮৭ বিলিয়ন বা প্রায় ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭.৯৭ বিলিয়ন বা প্রায় ৮০০ কোটি।

সম্প্রতি প্রকাশিত “The State of Food Security and Nutrition in the World” রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ক্ষুর্ধাত মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। প্রায় ২.৩ বিলিয়ন মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে, মাঝারি বা গুরুতর খাদ্য প্রাপ্তি সমস্যার সম্মুখীন। গুরুতর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন প্রায় ৯২৪ মিলিয়ন মানুষ।

জাতিসংঘের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের মূল্যবৃদ্ধি সারাবিশ্বের দেশগুলোকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেওয়ার অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা, অনাহার এবং ব্যাপক অভিবাসন একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’

UN World Food Programme এর প্রধান David Beasley বলেছেন, সর্বশেষ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ‘রেকর্ড ৩৪৫ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত মানুষ তীব্র অনাহারের দ্বারপ্রান্তে’। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার আগে এই সংখ্যা ছিল ২৭৬ মিলিয়ন। বর্তমানে যা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ২০২০ সালের গোড়ার দিকে অর্থাৎ কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে এই সংখ্যা ছিল ১৩৫ মিলিয়ন।

David Beasley আরও উল্লেখ করেছেন ‘এটি একটি সত্যিকারের বিপদ। কারণ সামনের মাসগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। তিনি উল্লেখ করেছেন বিশ্বের ৪৫টি দেশের ৫০ মিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে অবস্থান করছে।’

গত মার্চে প্রকাশিত ‘Global Hunger Index 2021’ প্রতিবেদন মতে, করোনা মহামারির প্রভাবে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্তের হারে উল্লম্ফন ঘটেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১১ কোটি ৮০ লাখ; শতকরা হিসাবে এ বৃদ্ধির হার প্রায় ১৮ শতাংশ।

বাংলাদেশে সরকারিভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করা না হলেও ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বেসরকারি গবেষণার ফলাফল দেখায় যে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে দারিদ্র্য হারে উল্লম্ফন ঘটেছে। এ হার দাঁড়িয়েছে ৩৫ থেকে ৪২ শতাংশে। এসব দরিদ্র মানুষের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে পরিসংখ্যান যাই বলুক অবস্থা যে ভয়াবহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সাম্প্রতিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা যে বাড়িয়ে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে সেসব দেশে যাদের দুর্বল মুদ্রা এবং খাদ্য আমদানির ওপর উচ্চ নির্ভরশীলতা, যেখানে সীমান্ত বন্ধ, সংঘর্ষ বা নিরাপত্তাহীনতা বাণিজ্য প্রবাহকে ব্যাহত করেছে এবং যেখানে আবহাওয়া চরমভাবে খাদ্য উৎপাদন/প্রাপ্যতা হ্রাস করেছে।

এই সামষ্টিক অর্থনৈতিক কারণগুলো সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের ক্রয়ক্ষমতার ওপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছে। উপরন্তু করোনা মহামারি সম্পর্কিত বিধিনিষেধের কারণে অনেকে চাকরি এবং আয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, সংঘাত এবং মহামারির মিলিত ত্রিবিধ সংকটের কারণে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার্ত মানুষের ধাক্কা সামলাতে সাহসী পদক্ষেপ’ প্রয়োজন। তারা বলছেন, অবিলম্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘাত বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তা করা, খাদ্য সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা, খাদ্যশস্য ও সবজি উৎপাদনের জন্য নগদ প্রণোদনা এবং পশুসম্পদ রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্ষুধার আকাশছোঁয়া মাত্রা প্রতিরোধ, সরকারগুলোকে সুরক্ষা প্রদান এবং বাণিজ্য প্রবাহিত রাখতে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে ক্ষুধা এবং অন্যান্য ধাক্কা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সহায়তা করার জন্য বিনিয়োগের জন্য উল্লেখযোগ্য নতুন অর্থায়নেরও প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই বুঝতে হবে যে যারা ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রার তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছে, সেই সাথে যারা খাদ্যের চাপে রয়েছে তাদের গুরুতর পরিণতি প্রশমিত করতে হবে।

জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য এবং টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা ও উৎপাদন বাড়াতে আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে বিশ্বব্যাপী ক্ষুর্ধাত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেলে তাদের ক্ষমতা, সম্পদ ও জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়বে। সুতরাং একটি জরুরি রাজনৈতিক সমাধান এখনই প্রয়োজন।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২ ও ৩ (এসডিজি-২ ও ৩) ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের বিলোপ ও ক্ষুধামুক্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে বর্তমান বাস্তবতা দেখায় যে, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। সুতরাং বিশ্বব্যাপী ক্ষুর্ধাত মানুষের সংখ্যা কমাতে বিশ্বনেতাদের সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কালক্ষেপণ মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

লেখক : ড. মতিউর রহমান – গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।


সর্বশেষ - রাজনীতি