মোঃ আবু সালেহ্ মুসা, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ গ্রামবাংলার তরুনী নববধু ও কৃষানীদের কন্ঠে, “ও বউ চাল ভাঙ্গে রে, ঢেঁকিতে পা দিয়া, নতুন চাল ভাঙ্গে হেলিয়া দুলিয়া। ও বউ চাল ভাঙ্গে রে, ঢেঁকিতে পা দিয়া।” এরকম গান আর পাড়ায় মহল্লায় ও গ্রামগঞ্জে শোনা যায় না।
অগ্রাহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষক ধান কাটার সঙ্গে কৃষানীদের ঘরে ঘরে ঢেঁকির শব্দ শোনা যেতো। কিন্তু কালের পরিবর্তনে ঢেঁকি এখন ঐতিহ্যের স্মৃতি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে উপজেলার কোন গ্রামে ঢেঁকির আর ছন্দময় শব্দ শোনা যায় না। জানা যায়, এক সময় নতুন ধান ঘরে উঠার পর চাল গুড়া করা, আটা দিয়ে পিঠা ফুলি, ফিন্নি, পায়েশ তৈরি করার ধুম পড়ে যেতো। এছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পুঁজায় ঢেঁকিতে ধান ভেঙ্গে আটা তৈরির সময় গ্রামের বধুরা গান গাইতেন। চারিদিকে পড়ে যেতো হৈঁ-চৈঁ। কিন্তু কালের পরিবর্তনে ঢেঁকি যেন এখন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি। অথচ এক সময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি গ্রামীণ জনপদে চাল ও চালের গুড়া আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম ছিল। বধুরা কাজ করতো গভীর রাত থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত। এখন ঢেঁকির সেই ধুপধাপ শব্দ আর শোনা যায় না।
এখন ঢেঁকির ব্যবহার নাই বললেই চলে। ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত যে কি সুসাধু পুষ্টিকর ছিল তা এখন অনুধাবন করা যাচ্ছে কিন্তু তা এখন পাওয়া দুঃসাধ্য। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নাই সেখানেও ঢেঁকির ব্যবহার কমেছে। তবুও গ্রামের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কেউ কেউ সখের বেশে বাড়ীতে ঢেঁকি রাখলেও এর ব্যবহার করে না। এক সময় গ্রামীণ কৃষকেরা দারিদ্র নারীদের মুজুরী দিয়ে ঢেঁকিতে চাল ও আটা ভাঙ্গিয়ে নিতো। এভাবেই চলতো অনেক গরীব অসহায় মানুষের সংসার। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ঢেঁকি শিল্প হলেও গ্রামীণ জনপদে এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই। এক সময় ঢেঁকির বেশ কদর ছিল। যখন মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করতো। তেল-বিদ্যুৎ চালিত বিভিন্ন মেশিন দিয়ে গ্রামগঞ্জে গিয়ে ধান ভাঙ্গার কারণে ঢেঁকি আজ বিলুপ্ত প্রায়। এ ব্যাপারে লখড়া গ্রামের আবু সাইম বলেন, ঢেঁকি নিয়ে অনেক গান শুনেছি। এখন ঢেঁকি নেইতো গ্রামীণ জনপদে গানও নেই। কারিগাঁও গ্রামের গৃহবধু রমেনা বলেন, ঢেঁকিতে ভাঙ্গা আটা দিয়ে শীতকালে জামাই বরণ করতে পিঠা, পায়েশ, ভাপাফুলি তৈরি করে একসময় জামাই’র কদর করা হতো। এখন ইচ্ছা থাকলেও ঢেঁকিতে ভাঙ্গা আটা দিয়ে পিঠা বানানো যায় না কারণ ঢেঁকি খুঁজে পাওয়া যায় না।