সাহাদাত হোসেন পরশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে একটি কোচিং সেন্টারের সংশ্নিষ্টতা পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। ওই কোচিং সেন্টার থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ডিভাইস। রাজধানীর ফার্মগেটকেন্দ্রিক ওই কোচিং সেন্টার ও জালিয়াতিতে জড়িতদের নাম তদন্তের স্বার্থে জানাতে রাজি হননি তদন্তসংশ্নিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে ওই কোচিং সেন্টারের সংশ্নিষ্টতার তথ্য পাওয়ার পরপরই বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে বিষয়টি টের পেয়ে জড়িতরা গা-ঢাকা দিয়েছে। সিআইডির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল রোববার সমকালকে এসব তথ্য জানান। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের এই চক্রের সঙ্গে এরই মধ্যে একটি কোচিং সেন্টারের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। পুরো চক্রটিকে ধরার চেষ্টা চলছে। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গত শুক্রবার গ্রেফতার তিনজনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি। গ্রেফতার তিনজন হলেন- ঢাবি ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন, মহিউদ্দিন রানা ও পরীক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ রাফী। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গত শনিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামুন ফলিত রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী এবং রানা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। এ ঘটনায় রানাকে এরই মধ্যে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষা চলাকালে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে পরীক্ষার্থী রাফিকে আটক করা হয়। ওই সময় তাদের কাছ থেকে বিশেষ ধরনের ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতিতে জড়িত থাকায় শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের দশটি কেন্দ্র থেকে ১২ জনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদণ্ড দেন।
সিআইডির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, গ্রেফতার মামুন ও রানার মোবাইল ফোনসেট পরীক্ষা করে প্রশ্ন ফাঁসের অনেক আলামত পাওয়া গেছে। চলতি বছর অনুষ্ঠিত ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নপত্রের উত্তর তাদের মোবাইলে রয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বেশ কয়েকজনের ব্যাপারে ওই মোবাইল ফোনসেট থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। মামুন ও রানার মোবাইল সেটে এ-সংক্রান্ত বেশ কিছু এসএমএসও পেয়েছে পুলিশ। তিনজনের কাছ থেকে জব্দ তিনটি মোবাইল ফোনসেটের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া গ্রেফতার একজন সম্প্রতি একটি ব্যাংকে মোটা অঙ্কের টাকা জমা দিয়েছেন। সিআইডির ধারণা, প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ওই টাকা নেওয়া হয়। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে এখনও গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি অভিযুক্ত ব্যক্তি।
তদন্তসংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, মামুন ও রানা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা মূলত ‘রিত্রুক্রটকারী’। টাকার লোভে গত বছর থেকে প্রশ্ন ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়ান তারা। এই চক্রে বিভিন্ন ধাপে শতাধিক ব্যক্তি কাজ করছিল। কারও দায়িত্ব ছিল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস সরবরাহ করা। সিআইডি বলছে, পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা যে ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করে তা ‘নিরাপত্তা’ সরঞ্জাম হিসেবে পরিচিত। ব্লুটুথ, লিসেনিং কিট, এটিএম কার্ডের মতো দেখতে ছোট ছোট এ ধরনের ডিভাইস কোনো বিশেষ চক্র শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ডিভাইস বিক্রির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের নামও জানা গেছে।