1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার সর্বশেষ অস্ত্র হলো অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, যেটি ব্যর্থ হলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। আমাদের দেশে এই অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার রোগীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা পর্যালোচনা করলে জানা যায়, অসংখ্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা সেই বিভীষিকাময় সময় দেখতে পাব, যখন কোনো রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না এবং লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাবে।

অ্যান্টিবায়োটিক আসলে কি, কেনইবা স্বাস্থ্যকর্মীরা এর অপব্যবহার নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। অ্যান্টিবায়োটিক হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক ওষুধ, যেটি ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ব্যাকটেরিয়ার বংশ বিস্তার রোধ করে এবং সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।

অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা তখনই হারায় যখন ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স [Antimicrobial Resistance (AMR)] বলা হয়।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হলে করোনার চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে এবং আশঙ্কা করা হয় যে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে এক কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

বাজারে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। যেসব ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক রোগের জন্য দায়ী, সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো জিন মিউটেশন ও জিন পরিবর্তনের প্রভাবে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায় যে, সম্প্রতি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার (এনআইএলএমসি) ১২টি সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন বয়সী রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে সংক্রামক রোগে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক সমূহের কার্যকারিতা শীর্ষক গবেষণার আংশিক ফলাফল প্রকাশ করেছে।

এই নমুনা সমূহের জিনোম সিকুয়েন্স (জিনের বংশগতির তথ্য) করে জিনের মিউটেশন এবং জিনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় বলে জানা যায়। এছাড়া ব্যাকটেরিয়ার লক্ষাধিক রেজিস্ট্যান্স জিন ও শনাক্ত করা হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্স হওয়ার কারণ কী এবং এর থেকে মুক্তির উপায় কী? ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্সের প্রধান কারণ হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। বর্তমানে চিকিৎসকরা যেকোনো সাধারণ রোগে (সর্দি-কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া প্রভৃতি) অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপত্রে দিচ্ছে। ফলে ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ব্যাকটেরিয়াগুলো ওই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী করছে।

এছাড়া আমাদের দেশে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির অনুমতি না থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা রোগীদের কাছে তা বিনা ব্যবস্থাপত্রে বিক্রি করছে। ফলে রোগীরা দ্রুত রোগ সারানোর জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিনছে এবং দুই তিনদিন খেয়ে ভালো হওয়ার উপক্রম হলে সম্পূর্ণ কোর্স সম্পন্ন না করে ওষুধ ছেড়ে দিচ্ছে।

এর ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো দুর্বল হচ্ছে কিন্তু মরছে না। পরবর্তীতে তারা আরও শক্তি সঞ্চয় করে ওই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। চিকিৎসকরা অনেক সময়ই নির্দিষ্ট মাত্রার অতিরিক্ত ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করছে। ডোজ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের গাফিলতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সম্প্রতি শিশুদের নমুনা পরীক্ষাতেও অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে। ২০২২ সালে আমার দেড় বছরের শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ঢাকার একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসক তাকে যে মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করেন তা তার ওজনের তুলনায় অনেক বেশি।

একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আমি জিজ্ঞেস করায় তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া বাবা-মাও রোগ দ্রুত নিরাময়ের জন্য সন্তানকে নিজ পছন্দে দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করছে, যা ব্যাকটেরিয়াকে রেজিস্ট্যান্স হতে সহায়তা করছে।

অ্যান্টিবায়োটিক রোগীর সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই আমাদের সকলেরই অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার রোধ করতে হবে, যাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স-এর প্রবণতা কমানো সম্ভব হয়। এইক্ষেত্রে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরছি—

এক. চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করা এবং অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির সময় কোর্স সম্পূর্ণ করার জন্য তাগিদ দেওয়া।

দুই. ওষুধের ডোজ সমন্বয় ও প্রায়োগিক বিষয়ে অভিজ্ঞ হচ্ছে ফার্মাসিস্টরা। তাই হাসপাতালগুলোয় ‘এ’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা, যারা অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ সমন্বয় বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারে।

তিন. ওষুধ কোম্পানির ওষুধ প্রমোশন নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। কোম্পানিগুলো যাতে কোনোভাবে নিম্নমানের অ্যান্টিবায়োটিক বাজারজাত করতে না পারে সেই ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।

চার. ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে সংস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে হাসপাতাল ও রিটেল ফার্মেসিগুলোয় নজরদারি আরও বৃদ্ধি করতে পারে।

কয়েক দশকে অ্যান্টিবায়োটিকের নতুন মলিকুল আবিষ্কৃত হয়নি, পুরোনো মলিকুলের জেনারেশন পরিবর্তন করে বাজারজাত করা হচ্ছে। সুতরাং অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বিষয়ে প্রশাসনিক নজরদারির পাশাপাশি দেশে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, অন্যথায় অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে।

লেখক: ড. আ. স. ম. মঞ্জুর আল হোসেন – সহকারী অধ্যাপক, ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগ; নির্বাচিত সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি