1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ড. ইউনূসের ‘শান্তিতে নোবেল’ ও কিছু প্রশ্ন

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিশ্বের ডিনামাইট আবিষ্কারক সুইডেনের আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল ২১ অক্টোবর ১৮৩৩ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহল্ম জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ ইতালির ইম্পেরিয়া প্রদেশের সানরেমো ইউনিয়নে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার সব সম্পতি আগামী দিনে যারা জনকল্যাণে কিছু আবিষ্কার করবে তাদের পুরস্কারের জন্য উইল করে যান। এই কারণে প্রতি বৎসর ১০ ডিসেম্বর তার নামে বিশ্বের সম্মানিত আন্তর্জাতিক মানের নোবেল পুরস্কার ১০ ডিসেম্বর বিতরন করা হয়। ১৯০১ সালে প্রথম এই নোবেল পুরস্কার বিতরণ করা শুরু হয়।

এখন আসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছ্যারের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রসঙ্গে। নব্বই দশকের কোনো একসময় স্টকহল্ম বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎকালীন চার্জ দা অ্যাফেয়ার্স এর সাজুল আলম সাহেবের বাসভবনে এক নৈশভোজে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউনূস স্যারের সাথে আমার সাক্ষাত হয়। এই সময় আমি আলাপে আলাপে স্যারকে বলেছিলাম, আপনার গ্রামীণ ব্যাংকের মাইক্রোক্রেডিট আবিষ্কার নিশ্চয়ই একদিন বাংলাদেশের জন্য নোবেল প্রাইজ নিয়ে আসবে। উত্তরে তিনি সেদিন আমাকে বলেছিলেন, আমি যা নিয়ে কাজ করি এগুলো নোবেল প্রাইজের আওতায় পড়ে না। তাই আমি কোনোদিন নোবেল প্রাইজ পাবো না। তিনি আরও বলেন, যে বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয় আমার কাজ তার আওতায় পরে না। অবশ্য সে অনেক দিন আগের কথা। জানি না প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের এই কথাগুলো এখন মনে আছে কি না। তবে সেদিন স্যারের কথাটা না বুঝতে পারলেও পরবর্তী সময়ে আমি যাচাই করে তার সত্যতা পেয়েছি।

সুইডেনের আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল যিনি নাকি নোবেল পুরস্কারের স্রষ্টা তিনি তার উইলে লিখেছেন এমন ব্যক্তিদের এই পুরস্কার প্রদান করা হবে যারা পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, শরীরবিদ্যা বা ওষুধ, সাহিত্য এবং শান্তি কাজে ভূমিকা রাখবে। হয়তো এই কারণেই সেদিন ইউনূস স্যার আমাকে এই কথাগুলো বলেছিলেন। তবে আমি স্যারকে বলেছিলাম আপনার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মাইক্রো ক্রেডিট কি শান্তির আওতায় পড়ে না? তিনি সেদিন হেসে হেসে আমার কথাটা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে যিনি নিজেই একদিন বললেন নোবেল প্রাইজ পাওয়ার শ্রেণীতে তার মাইক্রো ক্রেডিট গ্রামীণ ব্যাঙ্ক পড়ে না তাহলে ২০০৬ সালে তিনি কেমন করে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন? এখানে উল্লেখযোগ্য যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একমাত্র নরওয়ের নোবেল কমিটি থেকে দেওয়া হয়। আর যে টেলিনুর কোম্পানিকে জড়িয়ে ড. ইউনূস স্যারের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে তার মালিক নরওয়ে। তবে এবিষয়ে যথেষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে তার শান্তি পুরস্কারের পেছনে নরওয়ের টেলিনুর ও আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের লবিং এর নাম খুব বেশি করে আসছে। এছাড়া নরওয়ের নোবেল শান্তি পুরস্কারটি অনেকাংশে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিবেচনা করা হয় বলে অনেকে মনে করেন। ড. ইউনূস স্যারের মামলা নিয়ে বর্তমানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ভূমিকা কি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে?

শান্তি পুরস্কার কাদের দেওয়া হবে সে সম্পর্কে স্বয়ং আলফ্রেড নোবেল নিজেই তার উইলে উল্লেখ করে গেছেন। তিনি ১৮৯৫ সালে তার উইলে লিখেছেন যারা শান্তির জন্য মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ ভালো কাজ করে, মানবতাকে সর্বাধিক উপকার করবে, যারা জনগণের ভ্রাতৃত্বের জন্য সবচেয়ে বেশি বা সেরা কাজ করবে, এছাড়া স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি কিংবা হ্রাস ও শান্তি কংগ্রেস গঠন ও প্রচারে ভূমিকা রাখবে তাদের জন্য যেন এই শান্তি পুরস্কার বিতরন করা হয়। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার কি এই শ্রেণিতে পড়েন? স্যারের আবিষ্কৃত গ্রামীণ ব্যাংকের মাইক্রো ক্রেডিট শান্তি কায়েমে বাংলাদেশ সহ বিশ্বে কি কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে?

নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিরা সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। অন্যায় তারাও করতে পারেন। ক্ষমতার অপবেবহার দুর্নীতি, নির্যাতন শোষণ তারাও করতে পারেন। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার মধ্যে শান্তি অর্জনের প্রচেষ্টার জন্য ২০১৯ নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। আবি আহমেদ এর নাম নরয়ের নোবেল শান্তি কমিটি কর্তৃক ঘোষণা করার সময় বলা হয় তিনি শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সূচনা করেছেন, যা অনেক নাগরিককে একটি উন্নত জীবন এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের আশা দিয়েছে। আসলেই কি তাই? অবশ্যই নয়।

প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আজ সারা ইথিওপিয়ায় যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছেন। দেশটিতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং সহিংসতার প্রাদুর্ভাব তার সংস্কার নীতি আজ বাধাগ্রস্ত। তার ইথিওপিয়ান পিপলস রেভোলিউশনারি ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট চার-দলীয় জোট ভেঙ্গে একটি একক দল গঠন করে। ২০১৯ সালে টিগরিয়ানরা এই জোটের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে টিগরিয়ান পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট নামে নিজস্ব দল গঠন করে। এই বিভক্তিটি ক্ষমতার লড়াইয়ের সূচনা বিন্দু হয়ে ওঠে। শুরু হয় ইথিওপিয়ান সামরিক বাহিনির সাথে টিগরিয়ান বাহিনির শসস্ত্র যুদ্ধ।

ইথিওপিয়ার টিগ্রে রাজ্যে যেখানে তাদের নিজস্ব শাসন সেখানে প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এর সরকারের সাথে ক্ষমতার লড়াইয়ে ইথিওপিয়াকে পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। এখন সেখানে কোন শান্তি আসা তো দুরের কথা প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ সরকারের সামরিক বাহিনি অর্থাৎ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এর সাথে টিগরিয়া সৈনিকদের মুখামুখি যুদ্ধে এখন নিহত হচ্ছে অসংখ্য নিরিহ জনতা। ইথিওপিয়া সরকারের সাথে টিগরিয়া জনগনের শান্তি এখন অনেক দূরে। অনেকে বলছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ একদিকে ইরিত্রিয়ার সাথে শান্তি চুক্তির কারনে যেমন পেয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার ঠিক তেমনি অন্যদিকে এখন দেশের উত্তরে টিগরিয়ান প্রদেশে গৃহযুদ্ধ সাথেও তিনি দৃঢভাবে যুক্ত। অথচ নোবেল শান্তি কমিটি আবি আহমেদ আলীকে দিয়েছে নোবেল শান্তি পুরষ্কার।

মিয়ানমারের অং সান সু চি তার দেশে গণতন্ত্র আনার লক্ষে সামরিক বাহিনির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য দীর্ঘদিন গৃহবন্দি ছিলেন। ১৯৯১ সালে এই কারণে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু মুক্তি পেয়ে পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালে অং সান সু চি ক্ষমতায় এসে দেশের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার নেতৃত্ব দেন। এই কারণে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার কেড়ে নেওয়ার জন্য ৩০০,০০০ এরও বেশি নাম সংগ্রহ করে নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু শান্তি পুরস্কার ফেরত দাবি করা কি সম্ভব? হয়তো নয়। বর্তমানে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা পুনরায় তাকে গৃহ বন্ধি করে রেখেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আসছে কর ফাঁকি ও শ্রমিকদের মজুরি না দেওয়ার অভিযোগ। এই দুইটি অভিযোগ নিয়ে তিনি এখন আইনি লড়াই করছেন বলে জানা যায়। আদালতে তার পক্ষে কাজ করার জন্য তিনি নিজস্ব ডিফেন্ডার নিযুক্ত করেছেন। তবে ইতিমধ্যে তিনি শ্রমিকদের পাওয়ানা মজুরীর কিছু অংশ পরিশোধ করেছেন বলে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটি মামলার বাদী শ্রমিক ইউনিয়ন আর অপরটির বাদী ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারকে এখন তার ডিফেন্ডারের মাধমে প্রমাণ করতে হবে তিনি নির্দোষ। এখানে বিশ্ব নেতাদের বিবৃতিকে ব্যবহার করা কততুকু যুক্তিসঙ্গত তার উত্তর একমাত্র তিনি নিজেই দিতে পারবেন।

কোনো মামলা চলাকালীন সময়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে মামলা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশের নামকরা ব্যক্তিরা যেভাবে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস স্যারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন তাতে কিছুটা হলেও মামলায় প্রভাব ফেলতে পারে। একটা চলমান মামলা নিয়ে দলবেঁধে বিশ্বনেতাদের বিবৃতি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আইনের উপর কি হস্তক্ষেপ করা নয়? এর পেছনে কি তাহলে কোনো কারণ আছে? মামলার বাদী উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে না পারলে অভিযোগ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেকসুর খালাস পাবেন অথবা তার ডিফেন্ডার অভিযোগের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ সামনে না আনতে পারলে অপরাদের দায়ে তার শাস্তির আদেশ আসবে। এইতো আইন। বাংলাদেশের আদালতের প্রতি যদি কারো আস্থা না থাকে তাহলে প্রয়োজনে এই মামলাকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে আসার সুযোগ আছে। সুতরাং আগে থেকেই সরকার তাকে হয়রানি করছে, নির্যাতন করছে এমন কথা বলা যুক্তিসঙ্গত নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিরোধী দলের একজন নেতা ও সুশীল সমাজের কারো কারো এমন ধরনের উক্তি আমাকে অবাক করেছে বৈকি।

লেখক : মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু – নির্বাচিত বিচারক স্টকহল্ম(সিভিয়া) আপিল কোর্ট


সর্বশেষ - রাজনীতি