একটা বক্তব্য বেশ জোরেসোরে প্রচার করা হচ্ছে- তাহলো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে নাকি ৫০ সম্পাদকের অনেকে স্বাক্ষর করেননি। এমন হতেই পারে। ইউনূসের পক্ষে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের তালিকা ধরে খুঁজলেও এমন পাওয়া যাবে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ ধরনের বিবৃতি সংগ্রহের বিষয়াদি যারা জানেন তারা এভাবে লিখবেন না। সমমনাদের এমন অনেক বিবৃতির সম্মতি নেওয়া হয় ফোনে বা ইমেইলে। অথবা সংগ্রাহকেরা মনে করেন, ইনি তো আমাদের লোক। নিশ্চয় তার নাম উল্লেখ করলে অমত করবেন না। মোটকথা পক্ষের বিবৃতি বিপক্ষের বিবৃতি দুটিই আয়োজনকৃত। এতে স্বাক্ষর নিয়ে এক’দুজনের ভিন্নমত পাওয়া গেলেও ইউনূস ফেরেশতা হয়ে যাবেন না বা তিনি কোনো ফেরেশতা নন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ডক্টর কামাল হোসেন এরা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে এমন একটি নজির বের করতে পারবেন না যে এই দুজন নিজস্ব আন্তর্জাতিক যশ-খ্যাতি বা প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য কিছু আনার চেষ্টা করেছেন বা দূতিয়ালি করেছেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে যখন মার্কিন বাজারে সমস্যা দেখা দেয় তখন বিজিএমইএ নেতারা ড. ইউনূসের কাছে সহায়তা চাইতে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের কথা শুনেছেন। মিটিমিট হেসেছেন। কিছু করেননি। নিজস্ব ব্যবসা ছাড়া তারা আর কিছু বোঝেন না। এর চাইতে মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ায় যে শ্রমিক কাজ করে তারা দেশকে অনেক সৎ আন্তরিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা টাকা দেশে পাঠান। আর ইউনূসরা টাকা বিদেশে পাচার করেন।
নিজের স্বার্থে ড. ইউনূসের মার্কিন কংগ্রসম্যানদের দিয়ে চিঠি লেখানো নতুন কিছু নয়। গ্রামীণফোনের ইনকামিং চার্জ যখন সরকার বাতিল করে তখনও ইউনূস মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠি আনিয়েছেন। চিঠিতে তারা লেখেন, ইউনূস আমাদের বন্ধু। তাকে যেন দেখে রাখা হয়! ইনকামিং চার্জ বন্ধ করায় লাভ হয়েছে সাধারণ গ্রাহকদের। কংগ্রেসম্যানদের দেখিয়ে ইউনূস সরকারকে ভয় দেখাতে চেয়েছেন। শেখ হাসিনা এসব থোড়াই কেয়ার করেন। ইউনূস যে কোনো সৎ মানুষ নন, তা তিনি কোর্টে হেরে যাবার পর আয়কর পরিশোধ করে প্রমাণ করেছেন।
স্বৈরাচার এরশাদ আমলে একবার ড. কামালকে আটক করা হয়। এরশাদের সামরিক শাসনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বিরোধিতার শাস্তি ছিল সাত বছরের জেল। ড. কামালকে আটকের খবর পেয়ে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার এরশাদের অফিসে ফোন করে জানতে চান, ড. কামালের শরীর কেমন আছে। এরশাদ ওই ফোন রিসিভ করেননি। কিন্তু হেনরি কিসিঞ্জার ফোন করেছেন, ওই খবরেই এরশাদের অফিস কাঁপতে শুরু করে! ড. কামালকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখানেও এরশাদের সঙ্গে হাসিনার পার্থক্য। শেখ হাসিনা যা খুশি তা করেন না। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী বলে কারও ফোনকে পরোয়া করেন না। ]
লেখক : ফজলুল বারী – অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক