1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে সফল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ সরকার ৩৯ বছর আগে জাতিসংঘের নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) অনুমোদন করেছে। কিন্তু অনুমোদনের সময় সনদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধারায় দেওয়া আপত্তি এখনও প্রত্যাহার করেনি। নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, বৈষম্য বিলোপ করতে চাইলে এই দুটি ধারা অনুমোদন দরকার। তবে বাংলাদেশ বেশকিছু কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে— যেগুলো নারীর বৈষম্য দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। দিবসের এবারের থিম ‘সিড’র আলোকে অভিন্ন পারিবারিক আইন বাস্তবায়ন।’

সিডও সনদে মোট  ধারা ৩০টি। এগুলো তিন ভাগে বিভক্ত। ধারা ১ থেকে ১৬ নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন সম্পর্কিত, ধারা ১৭ থেকে ২২ সিডও ও এর কর্মপন্থা ও দায়িত্ববিষয়ক এবং ধারা ২৩ থেকে ৩০ সিডও ও এর প্রশাসন-সংক্রান্ত। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালে এই সনদে সই করে। কিন্তু সিডও সনদ বাংলাদেশ অনুমোদন করলেও তা পরিপূর্ণভাবে করেনি। বাংলাদেশ সরকার সিডও সনদের ধারা-২, ১৩(ক), ১৬.১(গ) ও ১৬.১(চ)— এই ধারাগুলোতে আপত্তি জানিয়ে তা অনুমোদন করেনি। পরবর্তী সময়ে সরকার ১৩(ক), ১৬.১(চ) অনুচ্ছেদ থেকে আপত্তি তুলে নেয়।

সিডও এর অনুচ্ছেদ ৫ বলছে, শরিক রাষ্ট্রগুলো পুরুষ ও নারীর মধ্যে কেউ উৎকৃষ্ট অথবা কেউ নিকৃষ্ট, এই ধারণার ভিত্তিতে কিংবা পুরুষ ও নারীর চিরাচরিত ভূমিকার ভিত্তিতে যেসব কুসংস্কার, প্রথা ও অভ্যাস গড়ে উঠেছে, সেগুলো দূর করার লক্ষ্যে পুরুষ ও নারীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচরণের ধরন পরিবর্তন করতে চেষ্টা করবে। একইসঙ্গে মাতৃত্বকে একটি সামাজিক কাজ হিসেবে যথাযথভাবে বিবেচনা এবং সব ক্ষেত্রে শিশুদের স্বার্থই মূল বিবেচ্যবিষয়— এ কথা স্মরণ রেখে সন্তান-সন্ততির লালন-পালন ও উন্নয়নে পুরুষ ও নারীর অভিন্ন দায়িত্বের স্বীকৃতির বিষয় যাতে পারিবারিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

গত ৩০ আগস্ট বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে মায়ের অভিভাবকত্বের পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা আছে, শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম (এসআইএফ) সংশোধনের মাধ্যমে ‘বাবা’ অথবা ‘মা’ অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম যুক্ত করতে হবে। রায়ে সব ফরম সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। তাই এ রায়ের ফলে ‘বাবা’ অথবা ‘মা’ অথবা ‘আইনগত অভিভাবকে’র যে কারও একজনের নাম দিয়ে ফরম পূরণ করা যাবে।

একইসময়ে ধর্ষণের শিকার নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ (দুই আঙুলের মাধ্যমে পরীক্ষা) পদ্ধতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, ডাক্তাররা ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি (মেডিকো-লিগ্যাল) পরীক্ষার সনদে ধর্ষণের বিষয়ে মতামত দেবেন, কিন্তু কোনোভাবেই অমর্যাদাকর শব্দ, যেমন- অভ্যাসগতভাবে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত ব্যবহার করতে পারবেন না। ধর্ষণের শিকার নারীকে তার অতীতের যৌন সম্পর্ক সম্পর্কে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন না।

নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশে মানব-উন্নয়নে নারীর প্রত্যক্ষ ভূমিকার কারণে জেন্ডার গ্যাপ বা লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসের ক্ষেত্রেও আগের তুলনায় দেশের অবস্থান ইতিবাচক, যার প্রতিফলন ঘটেছে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদনে। দেশের শতকরা ৪৬ ভাগ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশই নারী। চাকরি ও আত্মকর্মসংস্থান দুই ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় নারী পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে উঠে এসেছে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামে ৫০ দশমিক ৮৯ ও শহরে ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ নারী শ্রমশক্তি।

কেন বাংলাদেশ কেবল উত্তরাধিকারে সমতা অংশটাকে অনুমোদন দিতে পারছে না প্রশ্নে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিন্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘প্রথম কারণ ধর্ম। আমাদের দেশে কোনও ধর্ম নারীকে সমানাধিকার দেয়নি। ফলে যতক্ষণ বিশ্বজনীন মানবাধিকার ফলো করবে না, যতক্ষণ মানুষের মনন ধর্ম দ্বারা আবৃত, ততক্ষণ ধর্ম ব্যবসায়ীরা ভুল ব্যাখ্যা দেবে এবং সমানাধিকার নিশ্চিত করা যাবে না।’

এত বছরেও কেন দুটো ধারা রহিত করে রাখা হলো প্রশ্নে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘আন্দোলন যত শক্তিশালী হওয়া দরকার ছিল, ততটা করা সম্ভব হয়নি। অ্যাডভোকেসির জায়গায় আমরা শক্তিশালী ছিলাম। তারপরেও যতটা এগোনো দরকার ততটা হয়নি, চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

এই রোধ করে রাখাটা নারী আন্দোলনের বিষয় না, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার বলে মনে করেন নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর। তিনি বলেন, ‘এটা অনুমোদন হয়েছিল সামরিক শাসনামলে। সামরিক সরকার সবসময় ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত অনেক গণতন্ত্রকামী মানবাধিকারকর্মী কখনোই নারী অধিকারের জায়গায় মুখ খোলেন না।’ তিনি বলেন, ‘নারীর ওপর যত নির্যাতন তার মূল কারণ হলো— অর্থনৈতিকভাবে নারীর সাবলম্বী না হওয়া। এটা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারীকে দুর্বল করে রেখেছে। এই যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, এটার বিষয়ে কথা না বলেই এতদিনেও ধারা দুটো মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশের অর্জন মোটেই কম না।’


সর্বশেষ - রাজনীতি