1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ঐতিহাসিক শিক্ষা আন্দোলন ও আজকের বাস্তবতা

কাজী ফারুক আহমেদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের ৬০ বছর পূর্তি আজ। সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ম্ফূর্ত ব্যতিক্রমী আন্দোলন গড়ে তোলেন। আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট হয়েই শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর পাকিস্তান শিক্ষা বিভাগের সচিব ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর প্রাক্তন শিক্ষক এসএম শরীফকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন। শিক্ষার উন্নয়নে শরীফ কমিশনের অর্থসংস্থান সম্পর্কিত প্রস্তাব ও মন্তব্য ছিল- ‘শিক্ষা সস্তায় পাওয়া সম্ভব নয়।’ তারা মনে করে, অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুল ও নামমাত্র বেতনের মাধ্যমিক স্কুল স্থাপনের জন্য সরকারের ওপর নির্ভর করাই জনসাধারণের রীতি। শরীফ কমিশনের যে সুপারিশ বাষট্টির ছাত্র আন্দোলনকে তীব্রতর করে তা হলো, ২ বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্সকে ৩ বছর মেয়াদি করার সুপারিশ। ছাত্রসমাজ শরীফ কমিশনের প্রতিবেদনকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতি হিসেবে চিহ্নিত ও মূল্যায়ন করে। শিক্ষা সংকোচনমূলক গণবিরোধী এ প্রতিবেদন তারা প্রত্যাখ্যান করে।

ছাত্ররা আগে থেকেই আইয়ুব খান তথা সামরিক আইনবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন। এমন একটা অবস্থায় শরীফ কমিশনে গণবিরোধী সুপারিশ ছিল ভিমরুলের চাকে ঢিল ছোড়ার মতো। তারা অত্যন্ত সাংগঠনিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের ছাত্ররা স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। প্রথম আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঢাকা কলেজ থেকে। ৩ বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্সের বিপক্ষে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সর্বপ্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। ডিগ্রির ছাত্র প্রতিবন্ধী এমআই চৌধুরী এ আন্দোলনের সূচনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজিকে অতিরিক্ত বোঝা মনে করে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন শুরু করে। ওই সময় আমি ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং আন্দোলনের একজন সংগঠক ছিলাম। শিক্ষা কমিশনের কয়েকটি সুপারিশের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন গড়ে ওঠে। কয়েক মাস ধরে চলা এ আন্দোলন শুরু করেছিল ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে একের পর এক ধর্মঘট, ক্লাস বর্জন ও অনশন ধর্মঘট চলছিল। সেই ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যে মিছিল হয়, তাতে শুধু ছাত্রছাত্রীরাই অংশ নেয়নি; এর পাশাপাশি কলকারখানার মজুর, রিকশাচালক, মাঝিরাও মিছিলে শরিক হয়।

১৯৬২ সালের সে আন্দোলন নিয়ে আসে প্রগতিশীলতা। বাইরের কোনো মহলের প্রভাব ছাড়াই ছাত্রছাত্রীরা এ আন্দোলন শুরু করেছিল।

বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশে শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সমাজে বৈশিষ্ট্যগত লক্ষণীয় রূপান্তর ঘটেছে। ষাটের দশকে উচ্চশিক্ষা সীমিত ছিল স্বল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় বেশিরভাগেরই প্রবেশগম্যতা ছিল না। বর্তমানে সাক্ষরতার হার শুধু নয়; উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সম্প্রসারণ, বিশেষায়িত শিক্ষা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরি হওয়া বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই সঙ্গে শিক্ষার কারিকুলাম ও পাঠদান ব্যবস্থায় সূচিত হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।

শিক্ষার্থীকে পাঠদানের ক্ষেত্রে শারীরিক শাস্তি প্রদান যেখানে শতাব্দীকাল ধরে অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত ছিল; ২০১১ সালে তা বন্ধের জন্য সরকারি নির্দেশনা জারি হয়। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের পাঠদান ব্যবস্থা পৃথক থাকলেও ছেলেমেয়েরা এখন একসঙ্গে, এক প্রতিষ্ঠানে, এক শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। সহশিক্ষা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা যেখানে মান ও মনমানসিকতায় ছিল অপাঙ্‌ক্তেয়, এখন তা অধিকতর সামাজিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। উচ্চশিক্ষার দরজাও এখন এ শিক্ষার জন্য উন্মুক্ত।

এক সময় আমাদের দেশে শিক্ষার উন্নয়ন বলতে দালান-কোঠার উন্নয়ন বোঝাত। স্কুল অথবা গৃহে অথবা উভয় স্থানে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় বিদ্যমান প্রতিকূল পরিবেশ, নিরানন্দ পাঠদান পদ্ধতি যেমন গ্রাহ্যের মধ্যে আসেনি; তেমনি পাঠদানকারী শিক্ষকের প্রাপ্য আর্থসামাজিক মর্যাদার সোপান ছিল বিবেচনার বাইরে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয় ক্ষেত্রে অবস্থার পরিবর্তন হলেও এখনও কাঙ্ক্ষিত করণীয়ের তালিকা কম দীর্ঘ নয়।

উল্লেখ্য, সমন্বিত শিক্ষা আইন, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন, পিএসসির আদলে শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা চালুর মতো প্রত্যাশা এখনও বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। সেই সঙ্গে সংবিধান ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে সরকারি-বেসরকারি, গ্রাম-শহর, নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রাসঙ্গিকতায় শিক্ষায় করণীয় রয়েছে উল্লেখ করার মতো। ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার নির্দেশনায়, তাঁর সরকারের উদ্যোগে শিক্ষকদের প্রস্তাবমতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান করে নিতে পারলেও মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ছোবল থেকে মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির সুরক্ষায় বাধা কোনো অংশে কম নয়। সে জন্য বেশি করে চোখ-কান খোলা রাখা অনস্বীকার্য।

শিক্ষায় নারীর অগ্রযাত্রা নজর কাড়লেও কর্মমুখী শিক্ষা ও শিক্ষার উচ্চস্তরে নারীর অগ্রযাত্রা নিশ্চিতকরণে অনেক কিছু করার আছে। এ কথা স্পষ্ট, মুক্তিযুদ্ধের পথ ধরে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন ও অর্জন সম্ভব হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে। তবে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো অপরিহার্য। ওইসিডি পরিচালিত প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন ব্যবস্থা যুক্ত করা আবশ্যক। গত ৫০ বছরে শিক্ষায় অর্জনগুলো ধরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার গুণগত বিস্তার ও অর্থায়নে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সব উৎসের সদ্ব্যবহার, সর্বোপরি যুগোপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন ও অপচয়ের সব ফাঁকফোকর বন্ধ করা সময়ের দাবি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জনের পরও যখন প্রশ্ন ওঠে- যেসব কারণে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, তা থেকে আমরা কি পুরোপুরি মুক্ত হতে পেরেছি; তখন আত্মানুসন্ধান ও বিশ্নেষণের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। দিন কয়েক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণের অব্যাহত দোর্দণ্ড প্রতাপ ও শিক্ষা খাতে জনগণের সংখ্যানুপাতিক সুবিচার প্রাপ্তি, ন্যায়পরায়ণতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সীমাবদ্ধতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। শিক্ষা ও প্রযুক্তির বিকাশে ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও উল্লিখিত সীমাবদ্ধতা যে কাঙ্ক্ষিত অর্জনের রাশ টেনে ধরছে; তাতে সন্দেহ নেই।

শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ করে শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী মানুষ শিক্ষা দিবসে প্রতিকূলতা ও বৈরী পরিস্থিতিতে অর্জনকেই প্রাধান্য দেবেন বলে আশা করি। অতিমারি করোনায় শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। কিন্তু আমি অতিমারির মধ্যেও শিক্ষায় অর্জন ও সৃষ্ট নতুন সম্ভাবনাগুলো উৎসাহিত ও প্রণোদিত করার পক্ষে। অতিমারিতে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে শিক্ষায় সৃজনশীল রূপান্তরের লক্ষ্য সামনে রেখে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে শিক্ষকতা পেশার মর্যাদা বৃদ্ধি, পাঠদান ব্যবস্থা যুগোপযোগীকরণ ও শিক্ষায় ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সংকট উত্তরণ এবং শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই শিক্ষা দিবসের সার্থকতা।

লেখক : অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ – জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য
principalqfahmed@yahoo.com


সর্বশেষ - রাজনীতি

নির্বাচিত