1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের জাতিসংঘ সদস্যপদ প্রাপ্তির দিন

অধ্যাপক ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪। এই দিনটিতে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্র। সদস্য পদ লাভের এক সপ্তাহের মধ্যেই অর্থাৎ ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু জাতিসংঘে সদস্য পদ প্রাপ্তি খুব সহজ ছিল না। ১৯৭২ সালের ৪ অক্টোবর জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সদস্যভুক্তির পক্ষে মতামত দিলেও চীনসহ পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের সদস্য পদপ্রাপ্তির বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছিল।

বিশ্বের প্রায় সব জাতি রাষ্ট্রের সংগঠনের নাম জাতিসংঘ বা ইউনাইটেড নেশনস। রাষ্ট্রসংঘ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। এই সংগঠনের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আইন, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর করলে এই প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। উল্লেখ্য, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধোত্তরকালে ১৯২০ সালে সৃষ্ট ‘লিগ অব নেশনস’-এর স্থলাভিষক্ত হয় জাতিসংঘ। অর্থাৎ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ফলে লিগ অব নেশনস বিলুপ্ত হয়ে যায়। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পশ্চাতে উদ্দেশ্য ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যাতে যে কোনোরূপ যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করতে পারে। মূলত এরূপ উদ্দেশ্য থেকে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা। সমকালীন বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও জাতিসংঘের সাংগাঠনিক কাঠামোতে দেখা যায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ৫টি সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং চীন প্রভৃতি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী দেশ। বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র সংখ্যা ১৯৩। জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব পর্তুগালের নাগরিক আন্তোনিও গুতেরেস। বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বাংলাদেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। বিশেষ করে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর গুতেরেসের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে- যা এখনো সক্রিয়।

১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষ করে বাঙালি জাতির সঙ্গে জাতিসংঘের আন্তরিক সম্পর্কের গভীর ভিত্তি রচিত হয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়। মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শুধু মাত্র একটি মুক্তি আন্দোলন ছিল না সে যুদ্ধ ছিল এ দেশের মানুষের মানবাধিকারের সীমানা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এবং মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। তাই জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অন্তর্গত তাগিদ থেকেই প্রতিষ্ঠানটি পাকিস্তানি শাসকবর্গকর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। বিশেষ করে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে জাতিসংঘ। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ এ দেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য একটি তারবার্তা পাঠিয়েছিল সে সময়কার মহাসচিব উথান্টের নিকট। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ঢাকাস্থ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকেও বসেছিলেন নেতৃবৃন্দ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশে যে গণহত্যা সংঘটিত করে তা সমগ্র দুনিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বের খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দ এই পৈশাচিকতার নিন্দা জানান। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব উথান্টও পশ্চিম পাকিস্তানের এই পাশবিকতাকে ‘মানব ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর এই সরকারের প্রধান কাজই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বের জনমত, বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থন এবং স্বীকৃতি লাভ করা। এই লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকারের এক বিশেষ প্রতিনিধিকে ১৯৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৬তম অধিবেশনে প্রেরণ করা হয়। তারা অক্টোবর মাসে জাতিসংঘ প্লাজায় সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে এই বার্তা দেয় যে, বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতা পাকিস্তানের সঙ্গে আপোষ মীমাংসার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বক্তব্য পাঠানো হয়েছিল এবং এটি নিরাপত্তা পরিষদের দাপ্তরিক দলিল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি ছিল জাতিসংঘে বাংলাদেশের মানুষের বক্তব্য যা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রথম উপস্থাপন করা হয়। পূর্বেই ব্যক্ত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীদের সাহায্য প্রদানের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের মানবিক সম্পর্ক রচিত হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অমানবিক নির্যাতন ও গণহত্যার কারণে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। এত বিরাটসংখ্যক শরণার্থীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোনো একক দেশের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। জাতিসংঘ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল- একইভাবে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষেও। তবে, এটা পরোক্ষ হলেও মানবিক ছিল সন্দেহ নেই। আবার বাঙালির ইতিহাসের সেই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্ত ও দুঃসময়ে বাংলাদেশি শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতিসংঘে ভারতও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। শরণার্থীদের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে জাতিসংঘ বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানোর ফলে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কৌশলগতভাবেও লাভবান হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনসহ আরো কিছু দেশ বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ এবং ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব বলে বিশ্বব্যাপী প্রপাগান্ডা চালায়। কিন্তু জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তার ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক অবস্থানে ওঠে আসে। উপরন্তু, পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। সে সময়কার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার সদরুদ্দিন আগা খানসহ জাতিসংঘের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, ইউনিসেফ প্রভৃতি জাতিসংঘের অনু সংস্থা শরণার্থীদের জন্য কাজও করে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে জন আর কেলির নেতৃত্বে ইস্ট পাকিস্তান রিলিফ অপারেশন (ইউএনইপিআরও) ত্রাণ তৎপরতা শুরু করে। পরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের এই দায়িত্ব পান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পল ম্যাক্কি। সে সময় মুজিবনগর সরকার অভিযোগ করে যে, পাকিস্তানি সৈন্যরা ত্রাণ কার্যক্রমের অপব্যবহার করছে। পরে, ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর ত্রাণ পরিচালনার এই কাজকে পাকিস্তানি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে জাতিসংঘ নিজেই সর্বময় কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়। জাতিসংঘের এ উদ্যোগটিও ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গালে চপেটাঘাতের মতো। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বের মানবিক বিভিন্ন সংস্থার পরোক্ষ সহযোগিতাও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এরকমই একটি ঘটনা আমরা দেখি ১৯৭১ সালের জুন মাসে। বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে প্যারিসে পাকিস্তান এইড কনসোরটিয়ামের যে সভা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত নতুন সাহায্য দিতে দাতা গোষ্ঠী অস্বীকার করেছিল। বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তসুলভ বক্তব্য : ‘পূর্ব পাকিস্তান মূলত সরকারবিহীন অবস্থায় রয়েছে’- বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরো বেগবান করে তোলে। সে সময় জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) আলোচ্যসূচিতেও বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা গুরুত্বের সাথে উত্থাপন হয়।

স্বাধীনতা লাভের পরও জাতিসংঘ বাংলাদেশে বড় আকারের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিল। বিজয় লাভের এক সপ্তাহের মধ্যেই জাতিসংঘ মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইম ‘জাতিসংঘ রিলিফ অপারেশন ঢাকা’ (আনরড) নামে পরিচিত বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনার ঘোষণা দেন। স্যার রবার্ট জ্যাকসনের নেতৃত্বে শুরু হয় জাতিসংঘ ত্রাণ কার্যক্রম। অল্পদিন পরেই ‘জাতিসংঘ রিলিফ অপারেশন ঢাকা’-র নাম বদলে হয়ে যায় ‘জাতিসংঘ রিলিফ অপারেশন বাংলাদেশ’ (আনরব)। ১৯৭৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর যখন ‘জাতিসংঘ রিলিফ অপারেশন বাংলাদেশ’ তাদের পরিকল্পিত ত্রাণ ও পুনবার্সন তৎপরতা শেষ করে তখনকার এক সমীক্ষায় দেখা যায় ওই সময় পর্যন্ত জাতিসংঘের পরিচালিত ত্রাণকার্যক্রমের মধ্যে ‘জাতিসংঘ রিলিফ অপারেশন বাংলাদেশ’-এর কর্মসূচি ছিল সর্ববৃহৎ। ১৯৭৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইম বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সাক্ষাতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে উভয়ের মধ্যে আন্তরিক আলোচনা হয়। ওয়াল্ডহেইমের বাংলাদেশ সফর বাংলাদেশের জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ সময়ে জাতিসংঘের সহায়তায় যুদ্ধকালীন বিধ্বস্ত চালনা পোর্টে ডুবে যাওয়া জাহাজগুলো অপসারণ করা হয়। এছাড়া, ১৯৭৩ সালে জুলাই মাসে পাকিস্তানে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফেরৎ আনতেও জাতিসংঘ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের নিবিড় নৈকট্য থাকলেও পাকিস্তানের সমর্থক কিছুসংখ্যক রাষ্ট্রের আপত্তির কারণে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি জাতিসংঘের সর্বজনীনতাকে সমুন্নত করবে বলে ভারতের মন্ত্রী শরণ সিং মন্তব্য করেছিলেন। সাধারণ পরিষদের এক নীতি নির্ধারণী ভাষণে এই নেতা বিশ্বের মানচিত্রে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রতি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য পদ দানের জন্যও আবেদন করেন। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সুপারিশ করারও অনুরোধ জানিয়েছিলেন। উপরন্তু, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করতে না পারায় তিনি দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্ব সংস্থায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে এবং এই এলাকার শান্তি ও সম্প্রীতি অর্জিত হবে।’
সদস্য পদ লাভের পর থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশে নানা উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজে নিয়োজিত আছে। বর্তমানে অন্যূন ১৭টি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এ দেশে টেকসই উন্নয়নে কাজ করছে। এর প্রায় প্রতিটিই বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে অনুভূত হওয়া উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্রিয়। বাংলাদেশে এসডিজি অর্জন ও উন্নয়নের প্রভাব জোরদারে সহযোগিতা করতে টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা ২০৩০ এবং ইউএন ডেভেলপমেন্ট সিস্টেম রিফর্ম (ইউএনডিএস)-এর সাথে ভারসাম্য ও সামঞ্জস্য বজায় রেখে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এক পদ্ধতিতে একযোগে কাজ করছে।

টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, দারিদ্র দূরীকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শান্তি, সুশাসন, পুলিশ সংস্কার, মানবাধিকার, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, জনসংখ্যা, শিশু ও মাতৃ উন্নয়ন, টিকা কর্মসূচি, মাতৃ ও শিশু পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা, কিশোর ও তরুণ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাক্ষরতা, সংস্কৃতি, যোগাযোগ, ঐতিহ্য, শ্রম মানদণ্ড ও কর্মসংস্থান, অভিবাসন, শরণার্থী, মাদক ও অপরাধ, শিল্পোন্নয়ন, সক্ষমতা উন্নয়ন, প্রকল্প সেবা, শান্তিরক্ষা, স্বেচ্ছাশ্রম, সন্ত্রাস দমন, কৃষি উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা, এইচআইভি-এইডস, বাণিজ্য, আণবিক শক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক রূপান্তর, অবকাঠামো ও পুনরুদ্ধার, মানব বসতি ও যোগাযোগ এবং প্রচারণা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘ সহযোগিতা দিয়ে আসছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালের রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ক সমস্যাকে জাতিসংঘ বিশেষভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। অনেক রাজনৈতিক এবং সশস্ত্র সংগ্রামের বিষয়ে জাতিসংঘ ঠুটো জগন্নাথ হিসেবে পরিচিত হলেও সামাজিক নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের তৎপরতা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।

লেখক : ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম – অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - রাজনীতি