1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আবারও রোহিঙ্গা! অরক্ষিত পর্যটন এলাকা!

লীনা পারভীন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকারের আর্মিদের হামলা থেকে জীবন বাঁচাতে পিঁপড়ার মতো লাইন ধরে নাফ নদী পার হয়ে এপারে এসে বসবাস শুরু করেছিল ৭ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকার মানবিকতার খাতিরে নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে সেদিন এই বাড়তি জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছিল। বিনিময়ে হারিয়েছে বান্দরবান, রাঙামাটিসহ আমাদের বিশাল এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ। গাছাপালা কেটে ঘর বাড়ি বানিয়ে নিজেরাই দখল করে নিল আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আধারকে। এর সঙ্গে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম মাদকের অবাধ প্রবেশ, সন্ত্রাস, হানাহানি ও বাঙালিদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়াকে।

অনেক চেষ্টা তদবির বা আন্তর্জাতিক তদবিরের পরও সরকার সেইসব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে পারেনি এখনও। তাদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও নিত্যপ্রয়োজন মিটানোর সুযোগসহ একটি আলাদা বাসস্থান এলাকা বানানো হলো ভাসানচরে। কিন্তু গুটি কয়েক পরিবার ছাড়া কেউ গেল না কোনো এক রহস্যজনক কারণে। কক্সবাজার এলাকা এখন হয়ে উঠেছে বিদেশি সংস্থাগুলোর বসবাস আর কর্মস্থলের জায়গা। এত বড় একটি সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন এলাকা এখন প্রায় অরক্ষিত। দুদিন পরপর রোহিঙ্গা শিবিরে মারামারি হানাহানির খবর।

রোহিঙ্গা শিবিরসহ বৃহত্তর কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি বা রাঙামাটি এলাকায় এখন ডেঙ্গুর পাদুর্ভাব অত্যন্ত বেশি এবং এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছে গাছ কেটে ফেলাকে। ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক আসছে অহরহ।

এতসব বিপদের মধ্যে আবারও রোহিঙ্গা প্রবেশের সংবাদ। এর মধ্যেই নতুন আসা সাতজনের একটি পরিবার পাওয়া গেছে বলে সংবাদে জানা গেছে। আরও প্রায় ৮০০ মানুষ লুকিয়ে অপেক্ষা করছে প্রবেশের। এরমধ্যেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের দূতকে ডেকে সাবধান করেছে কারণ ওপার থেকে গোলা এসে পড়ছে আমাদের সীমান্তে। কিছুতেই কিছু যেন লাভ হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ওপারের সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি বেসরকারি সন্ত্রাসীরাও হত্যা, নির্যাতন শুরু করেছে মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর। প্রাণ বাঁচাতে তাই তারা হামলে পড়ছে এপারে। জানা গেছে, এর মধ্যেই বিজিবি প্রায় ৪৭৮ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে মিয়ানমারে। সদা তৎপর আমাদের সীমান্ত রক্ষীরা কিন্তু কতক্ষণ পারবে?

সীমান্তের একদম কাছে হওয়াতে খুব সহজেই রোহিঙ্গারা চলে আসছে আমাদের দেশে। কিন্তু বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা বিবেচনা করে আর কোনো বাড়তি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার কথা চিন্তায় করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই বাড়তি প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বিনামূল্যে খাওয়াচ্ছে সরকার। সাথে যুক্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে জন্ম নেয়া হাজার হাজার শিশু। কয়দিন পর এসব শিশুর আইনি পরিচয় নিয়েও শুরু হতে পারে ঝামেলা।

আমি জানি না আমাদের সরকার কোন পথে আগাবে বা কী ভাবছে নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। কিন্তু এইটুকু অন্তত জানি যে, আমাদের অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে হবে। এর আগে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ, অভ্যন্তরীণ মানবিকতার চেতনার কারণে আমরা শক্ত হতে পারিনি। কিন্তু একটি দেশের সক্ষমতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এখনও মাত্র সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে ওঠা একটি শিশু। কৈশোরেও পৌঁছাইনি আমরা। মেরুদণ্ড শক্ত হতে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। নিজেদের সুষম খাদ্যের নিশ্চিত করতেই হিমশিম অবস্থা। সেখানে পাশের বাড়ির চাহিদা পূরণ কেবল বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। মিয়ানমার সরকার কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে হতে পারে না। তাহলে জাতিসংঘের ভূমিকা কোথায়? আন্তর্জাতিক আদালতের ন্যায়বিচার কোথায়? এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্মই হয়েছে মধ্যস্থতা মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি ইমার্জিং অর্থনৈতিক শক্তিকে কেন বিবেচনায় আনবে না তারা? বাংলাদেশ এখন আর সেই অবস্থানে নেই যে আমাদের দুর্বল শক্তি ভেবে যে যা পারবে চাপিয়ে দেবে। এখন আমাদের কণ্ঠ অনেক প্রসারিত এবং খুব যৌক্তিভাবেই গ্রহণযোগ্য। সেই জায়গায় মিয়ানমার তাদের স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে না। নিজেদের সুবিধার কথা ভেবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য হুমকি তৈরি করবে এটা কেমন কথা?

এটা কী মিয়ানমার নিজের সিদ্ধান্তে করছে, নাকি তাদের কোনো অভিভাবকের নির্দেশে এমন করছে? বাংলাদেশ এখন কোনো আন্তর্জাতিক মোড়লদের নিজের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করতে দিচ্ছে না। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিচ্ছে। পাত্তা পাচ্ছে না কারও তদবির। নিজেদের সিদ্ধান্তে ফকির হওয়াও ভালো, এই নীতিতেই সম্ভবত হাঁটছে আমাদের সরকার। আর এটাই সম্ভবত কোনো না কোনোভাবে গাত্রদাহের কারণ হয়ে গেছে কোনো মহলের। এই যে আত্মম্ভরিতা, এই যে সেলফ রেসপেক্ট নিয়ে চলার নীতি – এই অবস্থান অনেক মোড়লদের নাক গলানোর জায়গাগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে। হয়তো যুদ্ধবাজ কোনো মহল চাইছে মিয়ানমারের অস্থিরতাকে পুঁজি করে এই অঞ্চলে নিজেদের বাহিনীকে অভিভাবক হিসেবে পাঠাতে।

তাই অত্যন্ত সাহস ও কৌশলের সঙ্গেই আগাতে হবে বাংলাদেশকে। তবে সেটা যেন দেরি না হয়ে যায়। সেটা যেন এমন না হয় যে আবারও আমাদের অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে গিয়ে বদহজম হয়ে যায়। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গার দায়িত্ব বাংলাদেশ নিতে পারবে না এবং এই মানুষের দায়িত্ব কোনোভাবেই বাংলাদেশ নেবে না। এই অবস্থানে থেকে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। মানবিকতা মানে এই নয় যে দিনের পর দিন নিজের পাত খালি রেখে পরের পাত ভরে যাব।

লেখক : লীনা পারভীন – কলামিস্ট।


সর্বশেষ - রাজনীতি

নির্বাচিত