1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গুম, বলপূর্বক অন্তর্ধান ও জঙ্গিবাদ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

মো. আল আমিন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিতর্কিত সাংবাদিক তাসনীম খলিল মানবাধিকারের নামে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের রক্ষা করায় সচেষ্ট রয়েছেন তা কারও অজানা নয়। সম্প্রতি “বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম” সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আইনের সূত্র ব্যবহার করে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার উদাহরণ। ১৯৯৭ সালের ১৭ জুলাই রোম নীতিমালার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, কোন অবস্থাতেই বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমকে জায়েজ করা যাবেনা। কিন্তু তিনি জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে যা আড়াল করেছেন তা হচ্ছে ২০০১ পরবর্তী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পটভূমি।

প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসবাদের সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য কোনো সংজ্ঞা এ যাবত প্রণীত হয় নি। আমার কাছে যা সন্ত্রাসবাদ তা অন্যের কাছে হয়তো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কর্তব্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এক্ষেত্রে নৈতিকতাও আপেক্ষিক। তাই ফৌজদারী অপরাধের সঙ্গে কোনো মতবাদপ্রসূত সন্ত্রাসবাদের তুলনা করা যায় না।

সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালতের মূল ভিত্তি হচ্ছে রোম নীতিমালা। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশই এ নীতিমালা অনুসরণে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। পক্ষান্তরে ২০০১ পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসবাদের নতুন যে দৃশ্যপট সামনে আসে তা অনেক নীতিমালায় পরিবর্তন আনে। মুম্বাই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্মেলনে ভারত এবং আলজেরিয়া, কলম্বো ও তুরস্ক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে নতুন নীতিমালা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান কয়েকটি দেশের আপত্তির কারণে তা গুরুত্ব হারায়।

২০০১ এ টুইন টাওয়ারে হামলার পর জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের নতুন বাস্তব্তা উপলব্ধ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে শুরু হয় “ওয়ার অন টেরর”। সন্ত্রাসবাদকে বিশ্বের ১ নং সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সকল দেশ জঙ্গিবাদ দমনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে শুরু করে।
২০০৪ সালের ১৭ই জুন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান বলেন,
‘Terrorism strikes at the very heart of everything the United Nations stands for. It is a global threat to democracy, the rule of law, human rights and stability, and therefore requires a global response.’

শুধু কফি আনানই নন, সকলেই একমত যে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ বিশ্ব মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড “ইনহিউম্যান এক্টিভিটি” হিসেবে গণ্য। জঙ্গিবাদকে Gross Violations of Human Rights” হিসেবে আখ্যা দিয়ে আত্মঘাতি বোমা হামলাকারী বা সন্দেহভাজন বোমা হামলাকারীকে হত্যায় “Shoot to Kill” পলিসি গ্রহণ করে অনেকে। তবে বাংলাদেশ এমন কোনো নীতি গ্রহণ করে নি।

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই অনলাইন, সোশ্যাল মিডিয়া ও সাধারণ নাগরিকদের পরামর্শ গ্রহণ ছাড়াও Terrorist Screening Center, Joint Terrorism Task Forces ও High-Value Detainee Interrogation Group নামে তিনটি বিশেষায়িত শাখা রয়েছে। জঙ্গি্বাদে জড়িত ব্যক্তিদের ছাড়াও জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দমনের উপায় কি?
বেশিরভাগ ফৌজদারী অপরাধ সংগঠিত হয় রাগ বা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে অথবা লোভ বা প্রতিহিংসা থেকে, প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে বা পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাবে। এমন কি অভিযুক্ত অপরাধীও উক্ত অপরাধকে নিন্দনীয় বা দণ্ডনীয় বলেই মনে করে। কিন্তু জঙ্গিবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদ বা কোনো মতাদর্শ কেন্দ্রিক সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে জড়িতরা মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডকে ন্যায়সঙ্গত ও নৈতিক বলে গণ্য করে থাকে। অনুশোচনার পরিবর্তে অপরাধকে তারা বিবেচনা করে যৌক্তিক কার্যক্রম হিসেবে। এজন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও জঙ্গিরা কার্পণ্য করে না।

জঙ্গি ও সন্দেহভাজন জঙ্গি:

জঙ্গি্বাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানবাধিকার রক্ষায় দেশ ও জনগণের বৃহত্তর ক্ষতি হ্রাস করা। এক্ষেত্রে জঙ্গি এবং সন্দেহভাজন জঙ্গিদের একইভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া জঙ্গিদের দমনমূলক সকল কার্যক্রমকে unilateral exceptions to human rights হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর কারণ একজন জঙ্গির কাছ থেকে চাইলেই স্পর্শকাতর বা প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না। তাদের মানসিকতা এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, মৃত্যুকেও পরোয়া করে না। অথচ বিষয়টি দেশ, জাতি তথা বিশ্বের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। মানবাধিকার মানুষের জন্য, অমানুষের জন্য নয়। যারা অমানুষের মতো অমানবিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তাদের জন্য মানবাধিকারের মায়াকান্না করার ফলাফল কখনোই শুভ হতে পারে না।

গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ:

বাংলাদেশে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান সম্পর্কে যেসব অভিযোগ তোলা হয় তার সুনির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি নেই। উদাহরণস্বরূপ: হাসিনুর রহমান সম্পর্কে তাসনীম খলিল দুই বছর যাবত নিয়মবহির্ভূতভাবে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ করেছে। অথচ হাসিনুরের ভাষ্য মোতাবেক তাকে ৪২ দিন আটক রাখা হয়েছিল। দুই বছর আত্মগোপনে থাকা হাসিনুর সত্য বলেছে তা বিশ্বাস করার কারণ নেই। জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের যুক্ত থাকার পরও সে নিরাপদেই জীবন কাটাচ্ছে। যুবদল নেতা সেলিমকে ডিবি জঙ্গি সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এবং আদালতের মাধ্যমেই সে ছাড়া পেয়েছে। সে নিজেই ভালো খাবার পাওয়ার কথা ও নিয়মিত চিকিৎসা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। কট্টরভাবে সরকার বিরোধী সেলিমের কথাকে আমলে নেয়ারও কোনো কারণ নেই। এছাড়া তেহজিব করিম, রাজিব করিম ও লিটন আন্তর্জাতিকভাবে জঙ্গি পরিচিতি পেয়েছিল। অর্থাৎ একটি উদাহরণ দিয়েও তাসনীম খলীল তার অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারে নি। এছাড়া বিরোধী দলের পক্ষ থেকে যাদের গুমের কথা বলা হয় তাদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নেই। কথিত গুম হওয়া ব্যক্তিরা কবে, কেন ও কিভাবে সরকারের জন্য হুমকি ছিল তার জবাবও পাওয়া যায় না। বরং হারিছ চৌধুরী ও কক্সবাজারের সালাউদ্দিনের গুম নাটকের উদাহরণ রয়েছে আমাদের সামনে।

তাসনীম খলীল পাহাড়ে স্বাধীনভূমি জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার সমর্থক। সম্প্রতি তিনি জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেছেন। তাই তিনি মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসীদের রক্ষার চেষ্টা করবেন – এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বাংলাদেশ তার অবিরাম অগ্রযাত্রায় সচল রয়েছে। বাংলাদেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে রোম নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছে – এই মর্মে সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক আদালত। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের পাশাপাশি স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করে সর্বোচ্চ আদালতে আপীলের সুযোগও দেওয়া হয়েছে যা নজিরবিহীন। গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান নিয়ে তাসনীম খলীল সহ যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা মিথ্যাকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করার মতো বুদ্ধিসত্তার পরিচয়ও দেন নি, যে কারণে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

সূত্র:
ICC lauds BD’s commitment to Rome Statute

লেখক: মো. আল আমিন, কলামিস্ট। 


সর্বশেষ - রাজনীতি