প্রেক্ষাপট
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড . মুহাম্মদ ইউনূসকে গত ৩১ মে ১২ কোটি টাকা আয়কর দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরবর্তীতে আদালতে আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন ড . ইউনূস । সে আবেদন খারিজ হওয়ার পর গত ২৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ( এনবিআর ) পাওনা ১২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার দানকর পরিশোধ করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড . মুহাম্মদ ইউনূস ।
ঘটনার সূত্রপাত ও আইনি ধারাবাহিকতা
● ঘটনার শুরু ২০১১ সালে । ২০১১-১২ , ২০১২-১৩ , এবং ২০১৩-১৪ কর বছরে , প্রফেসর ইউনূস ৭৬ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন তিনটি ট্রাস্টকে । ট্রাস্ট তিনটি হলো , প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট এবং ইউনূস সেন্টার ।
● এ অনুদানের ফলে , আয়কর আইন অনুযায়ী তার আয়কর পরের কর বছরে ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এ ধরনের অস্বাভাবিক হ্রাস জাতীয় রাজস্ব ব্যুরোর ( এনবিআর ) দৃষ্টি আকর্ষণ করে । নিরীক্ষার পর এনবিআর উপহার কর আইনে এসব উপহারের বিপরীতে ১৬ কোটি টাকা দাবি করে।
● কিন্তু ড . ইউনূসের আইনজীবীর দাবি , যেহেতু মি. ইউনূস মৃত্যুচিন্তা ও নিকট আত্মীয়দের কল্যাণের কথা ভেবে ওই টাকা দান করেছেন, ফলে তিনি দানকর আইন অনুযায়ী কর অব্যাহতি পাবেন।
● কিন্তু এনবিআর – এর দাবি , দানকর আইন অনুযায়ী দান যদি পুত্র , কন্যা , পিতা , মাতা , স্বামী , স্ত্রী , আপন ভাই অথবা আপন বোনকে করা হয় তবে করদাতা কর অব্যাহতি পাবেন ।
● কিন্তু এসব সম্পদের নথিতে দেখা যাচ্ছে , ড . ইউনূস দান করেছেন ট্রাস্টে। এর মধ্যে ইউনূস সেন্টারের তিনজন ট্রাস্টির মধ্যে একজন ট্রাস্টি দাতা ড . ইউনূস নিজেই। আবার প্রফেসর ড . মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট ও ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টের ট্রাস্টিরা করদাতার নিকট আত্মীয় নন। ফলে এ ক্ষেত্রে তিনি কর অব্যাহতি পেতে পারেন না ।
● মূলত ট্রাস্টের অর্থের কর না দেওয়ার মতলব থেকেই এমন কাজ করেছিলেন ড . ইউনূস । আইনি যুক্তিতে এই তথ্যই উঠে আসে । এটর্নি জেনারেল এডভোকেট আমিন উদ্দীন জানান , ‘ দানকরের সংজ্ঞায় কোনভাবেই এটা আসবে না । ‘
ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র
ড . ইউনূসের গড়া এই ট্রাস্টগুলির গঠনতন্ত্রও বেশ চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করে ।
● ট্রাস্টগুলোর এমন বিধান রয়েছে যার জন্য প্রফেসর ইউনূস ও তার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে ট্রাস্টের অর্থেই ।
● ট্রাস্টের সমাজসেবা দলিলের চুক্তির নয় নাম্বারে বলা হয়েছে , ” To maintain the settlor , his wife prof Afrozi Yunus , his daughters Monica Yunus and Deena Afroz Yunus as hereinafter provided . ”
● অর্থাৎ , এ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক আফরোজি ইউনূস, দুই কন্যা মনিকা ইউনূস, দীনা আফরোজ ইউনূস ও তার পোষ্যদের রক্ষার জন্য ।
দাতাও তিনি গ্রহীতাও তিনি
● অনুসন্ধানে দেখা যায় , আয়কর নথিতে ট্রাস্টের দাতা যেমন মুহম্মদ ইউনূস , আবার গ্রহীতাও তিনিই ।
● নিজের পরিবারের ব্যয়ের টাকাও এ ট্রাস্ট থেকেই নিয়েছেন বলে নথিতে দেখা যায় ।
● উৎসব আপ্যায়নের জন্য ৪৭ লাখ , টেলিফোন বিল হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার বিল নথিতে উল্লেখ আছে ।
● কিন্তু আইনে আছে ট্রাস্টে দান করলে সেখান থেকে আবার বাসার খরচ বা অন্যান্য খরচ তিনি নিতে পারেন না। তাই সমাজসেবার নামে এ ট্রাস্টকে কর ফাঁকির আয়োজন বলছেন এটর্নি জেনারেল এডভোকেট আমিন উদ্দীন।
দানকর পরিশোধ ও অপরাধ স্বীকার
● আদালতে আপিলের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে একটি পে – অর্ডারের মাধ্যমে এই অর্থ পরিশোধ করেন ড . ইউনূস। সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।
● ড . ইউনূসের পক্ষে তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মো . রুহুল আমিন সরকার সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় এ টাকা জমা দেন। পাশাপাশি বকেয়া দানকর প্রদান করে এ – সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়ে কর কমিশনারকে অবহিত করেন তিনি ।
● এই দানকর পরিশোধের মাধ্যমে কার্যত দানকর ফাঁকির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন ড . ইউনূস।