সেচের আওতায় আসছে বরিশালের ১৬ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমি। এর ফলে ওই বিভাগে ৬৬ হাজার ১৪ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের আওতায় বরিশাল সদর, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার ২৮টি উপজেলায় ভূপৃষ্ঠের ওপরের পানি ব্যবহার করে সেচের আওতাধীন জমি ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৯২ হেক্টর থেকে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৬ হেক্টর এ উন্নীত করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ‘বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা সেচ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে মোট ৩৪৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকায় সৌরচালিত এলএলপি’র মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং পুনঃখননকৃত খাল, পুকুর ও ফসল রক্ষা বাঁধে বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, প্রকল্প এলাকার কৃষক ও কৃষাণীকে সেচ কার্যক্রম, খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে আধুনিক সেচ ব্যবস্থা এবং সেচ যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন করতে চায় সরকার।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৩৭৫ কিলোমিটার সেচ ও নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন করা হবে। খালের পাড়ে ১ হাজার ৫০০টি পানি নির্গমন পথ নির্মাণ (প্রতি কিলোমিটারে ৪টি) ও ৩০টি পুকুর পুনঃখনন করা হবে। ৪০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ বা সোলার চালিত ২/১-কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন এলএলপি সেট ক্রয় করা হবে। ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা ইউপিভিসি পাইপসহ ভূ-উপরিস্থ সেচনালা প্রতিস্থাপন, ইউপিভিসি পাইপসহ ফিটিংস ও আনুষঙ্গিক মালামাল কেনা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। যা সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক বৈঠকে অনুমোদন করা হয়।
প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পরিকল্পনা কৌশলগত উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম উদ্দেশ্য শস্য উৎপাদনে সেচের দক্ষতা বাড়ানো এবং ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর সঙ্গে প্রকল্পটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া, টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ২.৪ এ টেকসই খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা এবং ৬.৪ এ সব খাতে পানির ব্যবহার দক্ষতার উন্নয়নের সঙ্গেও প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ। জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮ এর ৫.৪২ ও ৫.৪৩.২ এ উল্লিখিত ভূ-গর্ভস্হ সেচনালা তৈরির মাধ্যমে পানির উত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের সঙ্গেও প্রকল্পটি সংগতিপূর্ণ।
একনেকের অনুমোদন চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার পতিত, জলাবদ্ধ এবং সেচের আওতা বহির্ভূত ১৬ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমি সেচের আওতাভুক্ত করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। ফলে প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং প্রকল্পটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন আমাদের অনেক পুরনো। এটিকে ধরে রাখতে হবে। এর জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।