1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

চাকরির বাজার ও দক্ষতার গুরুত্ব

সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩

বেশ কিছুদিন আগে খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ কেইন রবিনসনের একটা বক্তৃতায় শুনেছিলাম, এক গবেষণায় পৃথিবীর বড় বড় এক হাজার ৮০০ কম্পানির সিইওকে নাকি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাঁরা কী ধরনের মানুষকে চাকরি দিতে চান। বেশির ভাগ সিইও নাকি বলেছিলেন, তাঁরা এখন আর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রিধারীর প্রতি আগের মতো আগ্রহী নন। তাঁরা এখন মূলত দেখতে চান প্রার্থীরা কোমল দক্ষতায় (সফট স্কিলস) দক্ষ কি না। গত বছর হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে প্রকাশিত একটা গবেষণায় ওই একই কথা বলা হয়েছে।

সেখানে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের রাফেল্লা সাদুন ও তাঁর সহ-গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের পাঁচ হাজার চাকরির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেন, যেসব কম্পানি আগে আর্থিক ও অপারেশনাল দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দিত, তারা এখন সামাজিক দক্ষতার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এখানে সামাজিক দক্ষতার অর্থ হচ্ছে শোনার, চিন্তা করার, যোগাযোগ করার এবং অন্যের মন বোঝার দক্ষতা। ২০২১ সালে ম্যাককিনসে কম্পানি পুনর্দক্ষতা নিয়ে একটা সার্ভে প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, করোনার প্রভাবে চাকরির বাজারে সামাজিক ও আবেগীয় দক্ষতার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে।

যেসব কম্পানি এ ধরনের দক্ষতা চায়, তাদের সংখ্যা ২০২০ সালে এসে আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটা গবেষণা মতে, চাকরিজীবনের সাফল্যের ৮৫ শতাংশ আসে কোমল দক্ষতা থেকে আর বাকি ১৫ শতাংশ আসে কারিগরি দক্ষতা ও জ্ঞান থেকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোমল দক্ষতা (সফট স্কিলস) কী? কোমল দক্ষতা হলো মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং আন্তর্ব্যক্তিক দক্ষতা। আর আমরা সাধারণভাবে যাকে দক্ষতা বলি, সেই কঠিন দক্ষতা (হার্ড স্কিলস) হলো মানুষের জ্ঞান ও পেশাগত দক্ষতা।

কোমল দক্ষতার কিছু সুনির্দিষ্ট উদাহরণ হলো—সূক্ষ্মচিন্তন দক্ষতা, সৃষ্টিশীলতা, অভিযোজন করার ক্ষমতা, নৈতিকতা, যোগাযোগ, দলীয় কাজ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি। এ কারণে সমাজবিজ্ঞানীরা কোমল দক্ষতাকে দেখেন ‘আবেগীয় আইকিউ’ হিসেবে আর কঠিন দক্ষতাকে দেখেন শুধু ‘আইকিউ’ হিসেবে। এই দুই ধরনের দক্ষতার মধ্যে আরেকটা পার্থক্য হচ্ছে, আপনি একই কোমল দক্ষতা নানা কাজে নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন; কিন্তু কঠিন দক্ষতার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রটা সীমিত। যেমন প্রগ্রামিং শিখলে আপনি শুধু তা কম্পিউটার সফটওয়্যারে ব্যবহার করতে পারবেন; কিন্তু আপনার যদি যোগাযোগ দক্ষতা থাকে, তো সেটা আপনি হাজারো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।

আগে চাকরিদাতারা দেখতেন প্রার্থীদের কঠিন দক্ষতা আছে কি না।

সেটাই ছিল মূল বিবেচ্য বিষয়। আর এর সঙ্গে যদি টুকটাক কোমল দক্ষতা থাকে, সেটা ছিল বাড়তি পাওয়া। কিন্তু এখন কোমল দক্ষতাও কঠিন দক্ষতার সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোমল দক্ষতাই মূল বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেন এই ঘটনাটা ঘটছে, তা একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক। একজন ডাক্তারের যে কোমল দক্ষতাগুলো লাগে, সেগুলো হচ্ছে সহমর্মিতা, শোনার ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা এবং চমৎকার ব্যবহার। আর তাঁর যে কঠিন দক্ষতাগুলো লাগে, সেগুলো হচ্ছে অসুখবিসুখ ও চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত জ্ঞান, রোগীর লক্ষণ ও টেস্ট রেজাল্টগুলোকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা, অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি সম্পর্কে বিশদ ধারণা ইত্যাদি। এখন যদি আপনি ভালো করে লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন, একজন ডাক্তার এত দিন ধরে অনেক কষ্ট করে যে কঠিন দক্ষতা অর্জন করতেন, তার অনেকটাই এখন প্রযুক্তি করে দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে সেটা একজন মানুষ ডাক্তারের চেয়ে অনেক ভালোভাবে করতে পারবে। কিন্তু একজন মানুষ ডাক্তার যে কোমল দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে আয়ত্ত করা কঠিন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভব। এই একই কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রের চাকরিদাতারা এখন কঠিন দক্ষতার চেয়ে কোমল দক্ষতার দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

কিন্তু কোমল দক্ষতার প্রতি আগ্রহ বাড়লেও চাকরি দেওয়ার সময় চাকরিদাতাদের পক্ষে চাকরিপ্রার্থীদের কোমল দক্ষতা পরিমাপ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ কঠিন দক্ষতা কিংবা অভিজ্ঞতা পরিমাপ করা যত সহজ, কোমল দক্ষতা পরিমাপ করা তত সহজ নয়। কঠিন দক্ষতা পরিমাপ করা সহজ, কারণ এটা  অবজেক্টিভ, যে কেউ যেভাবেই মাপুক, এটা প্রায় একই রকম হবে। কিন্তু কোমল দক্ষতা হচ্ছে সাবজেক্টিভ, এটা একেক চোখে একেকভাবে মূল্যায়িত হতে পারে। বিশেষ করে লিখিত পরীক্ষায় যেখানে চাকরিদাতা ও চাকরিপ্রার্থী মুখোমুখি হয় না, সেখানে এই কোমল দক্ষতা পরিমাপ করা দুষ্কর। যখন এই দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়, তখন বিষয়টা সহজতর হয়; তার পরও কিছু বাধা রয়ে যায়। একটা ইন্টারভিউ বোর্ডের পরিবেশ ও পরিস্থিতিটা কল্পনা করুন। খেয়াল করলে দেখবেন, ওই পরিবেশটা মৌলিকভাবেই অসামাজিক। ওখানে প্রার্থীদের বলতে বলা হয়, কিন্তু তাদের শোনার ক্ষমতা যাচাই করা হয় না। চাওয়া হয় যে সে চাকরিদাতাদের মন জয় করে নিক; কিন্তু সে অন্যের চোখ দিয়ে দেখতে বা অন্যের হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে অথবা অন্যের জুতা পরে হাঁটতে পারে কি না, সেটা বোঝার চেষ্টা করা হয় না।

গবেষকরা বলছেন, দলগত কাজ করতে গিয়ে একজন মানুষ যদি তার দলের লোকরা কে কী ভাবছে, এটা বুঝতে পারে, তাহলে মোটামুটি ধরে নেওয়া যায় যে তার কোমল দক্ষতা আছে। রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইউ ও তাঁর সহ-গবেষকরা তাঁদের গবেষণায় দেখেছেন যে একজন মানুষ যদি একটা দলগত কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারে যে দলের কোনো কোনো সদস্য অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে যে তাদের ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের তীক্ষ্ণ ক্ষমতা’ আছে। এ ধরনের কোমল দক্ষতাসম্পন্ন লোককে ইংরেজিতে ‘রুম রিডার’ বলে। এই কোমল দক্ষতা মাপার একটা পরীক্ষা পদ্ধতিও তাঁরা তৈরি করেছেন। এই পরীক্ষায় প্রার্থীকে একটা দলগত কাজের ভিডিও দেখানো হয়। এখানে প্রার্থীর কাজ হচ্ছে এটা বের করা যে দলের কোন সদস্য কতটা প্রভাবশালী। যে প্রার্থীর মূল্যায়নের সঙ্গে ওই দলের সদস্যদের মূল্যায়ন যতটা মিলবে, বুঝতে হবে ওই প্রার্থীর ততটা কোমল দক্ষতা আছে।

এ রকম আরো গবেষণা হয়েছে। তার পরও কোমল দক্ষতা মাপার কাজটা এখনো কঠিন দক্ষতা মাপার মতো সহজ হয়ে ওঠেনি। এ জন্যই দেখা যায়, চাকরিদাতারা কোমল দক্ষতা খুঁজলেও নিয়োগ পরীক্ষাটা শেষ পর্যন্ত একটা কঠিন দক্ষতা মাপার পরীক্ষা হয়ে যায়। তবে এখন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। যা হোক, চাকরিপ্রার্থীদের অবশ্যই কোমল দক্ষতায় দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। কারণ কোনোভাবে চাকরি পেয়ে গেলেও চাকরিকালে চাকরিদাতারা ঠিকই তার কোমল দক্ষতা পরিমাপ করতে পারবেন এবং করবেন। তখন এই কোমল দক্ষতার ওপরই তার সাফল্য নির্ভর করবে।

লেখক: সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক – সদস্য, পিএসসি এবং মাউশি ও নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক।


সর্বশেষ - রাজনীতি