1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পঁচাত্তরের নারকীয় হত্যাকান্ড: বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায়

এস ডি সুব্রত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষীদের বর্ণনায় পঁচাত্তরে পনেরোই আগস্টের যে নারকীয় হত্যাকান্ডের চিত্র পাওয়া যায় তা মর্মান্তিক এবং এর নজির ইতিহাসে নেই।

স্বাধীনতা অর্জনের পাঁচ বছর না পেরুতেই স্বাধীনতার মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজ দেশে এক দল বিপথগামী সেনা সদস্যের নীল নকশার শিকার হয়ে মৃতু্যবরণ করতে হয়েছিল। আমরা বড় দুর্ভাগা জাতি, পিতা ধরে রাখতে পারিনি। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মসজিদ থেকে যখন ভোরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছিল তখন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ঘিরে ফেলে এ দেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক সেনাসদস্য। দেশের সার্বভৌমত্ব আর সংবিধান রক্ষার শপথ ভুলে গিয়ে ঘাতকরা জড়ো হয়েছিল তাদের নীল নকশার বাস্তবায়নের জন্য। শ্যামল বাংলার সবুজ মাটিতে ঘাতকরা সেদিন জন্ম দিয়েছিল নিষ্ঠুরতম জঘণ্য এক ইতিহাসের। ঘাতকরা হত্যা করে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের। ভাগ্যক্রমে দেশের বাইরে থাকায় মুজিব তনয়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান সেদিন। যে মাটির জন্য, যে মাটির মানুষের জন্য নিজের জীবনের সমস্ত সাধ আহ্লাদ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেই স্বাধীন দেশের মাটিতে তাকে মরতে হলো নিজের অধীনস্থ কতিপয় উচ্চাভিলাষী, বিশ্বাসঘাতক সেনাসদস্যদের হাতে। এ বেদনা সইবার নয়।

পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকান্ডের প্রথম শিকার হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামাল। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, যে সব সেনা অফিসারদের দেখে শেখ কামাল স্বস্তি অনুভব করতেন, তারাই শেখ কামালকে হত্যার মধ্য দিয়ে ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের সূচনা করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী এবং এক নম্বর সাক্ষী মুহিতুল ইসলাম বলেন…. ‘আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে হামলার খবর শুনে বঙ্গবন্ধু যখন উপর থেকে নিচে নেমে সেনা সদর, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং গণভবনে ফোন করার চেষ্টা করছিলেন ঠিক তখনই এক ঝাঁক গুলি দক্ষিণ দিকের জানালার নিচতলায় অফিস কক্ষের দেয়ালে লাগে। বঙ্গবন্ধু তখন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা মহিউদ্দিনকে পেয়েছিলেন। (ওই সময় জানালার কাচ ভেঙে তার কনুই থেকে রক্ত ঝরছিল।) সে সময় এত গুলি কীসের জানতে চাইলে একজন সেন্ট্রি বাইরে থেকে এসে হামলার কথা জানান বলে জানিয়েছিলেন মামলার ৫০নং সাক্ষী সাবেক পুলিশ সুপার নূরুল ইসলাম খান। তখন কালো ও খাকি পোশাকধারী কিছু সেনাসদস্য পূর্ব দক্ষিণ ও পশ্চিম দক্ষিণ দিক থেকে ক্রলিং করে বাড়ির দিকে আসছে দেখে বঙ্গবন্ধু দোতলার দিকে চলে যান। এরপর শেখ কামাল নিচে যান। নিচে নেমে কামাল নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করেন, আর্মি কী এসেছে? তিনি বলেন, মনে হয় এসেছেন। এর আগে সম্ভবত বঙ্গবন্ধু তার শয়নকক্ষ থেকে টেলিফোনে সেনাপ্রধান শফিউল্লা ও কর্নেল জামিলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন। তাই সেনাবাহিনী আসবে এটাই আশা করেছিলেন শেখ কামাল। আর্মিদের দেখে শেখ কামাল খুশি হয়ে বলেন, আর্মি ভাইয়েরা কারা এসেছেন ভেতরে আসেন। ৫/৬ জন খাকি ও কালো পোশাকের আর্মি এগিয়ে এসে হ্যান্ডস আপের কথা বললে শেখ কামাল এবং একজন পুলিশ সার্জেন্ট হ্যান্ডস আপ করেন। তখন শেখ কামাল আশ্চর্য হয়ে বলেন, আমি শেখের ছেলে কামাল। তারা দ্বিতীয় বার হ্যান্ডস আপ করার কথা বললে হ্যান্ডস আপ করার সঙ্গে সঙ্গে শেখ কামালকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নুরুল ইসলামকেও গুলি করা হয় তখন।

পিএ মুহিতুল ইসলামের ভাষায়… মেজর হুদা শেখ কামালের পায়ে গুলি করলে শেখ কামাল শেখ মুজিবের ছেলে বলে পরিচয় দিলে সঙ্গে সঙ্গে হুদা ব্রাশ ফায়ার করে।

মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী আব্দুর রহমান রমার ভাষ্যমতে, শেখ কামালকে হত্যার পর গুলি থামলে শেখ মুজিব রুম থেকে বের হওয়া মাত্র আর্মিরা তাকে ঘিরে ফেলে। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিল, তোরা কি চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে? আর্মিরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিল তখন দুয়েক সিঁড়ি নামার পর নিচের দিক থেকে গুলি করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা সেনা কর্মকর্তাদের পরিচয় দিয়েছেন নিরাপত্তা রক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস। তার ভাষ্যমতে মেজর মুহিউদ্দিন তার ল্যান্সারের ফোর্স নিয়ে গুলি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দোতলার দিকে যায়। আরও ফোর্স নিয়ে সেখানে যায় ক্যাপ্টেন হুদা ও নূর। সে সময় মেজর মুহিউদ্দিন ও তার ফোর্স বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিচে নামছিলেন। সে সময় মেজর নূর ইংরেজিতে কিছু বললে মেজর মুহিউদ্দিন ও তার ফোর্স একপাশে চলে যায়। তখন ক্যাপ্টেন হূদা ও মেজর নূর স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। তখন সিঁড়ির উপর লুটিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু এবং সে সময়ই মৃত্যুবরণ করেন। যে মানুষটি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য সংসার, সুখ সব ত্যাগ করেছিলেন, মৃত্যুকে তুচ্ছ ভেবেছিলেন সে মানুষটিকে এভাবে মারতে পারল হিংস্র হায়েনার দল!

সে সময় বেগম মুজিব, সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, শেখ নাসের ও শেখ রাসেল বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে গুলি করার পর ঘাতকরা আবার দোতলায় যায়। ঘাতকরা যখন বাথরুমের দরজায় আঘাত করতে থাকে তখন বেগম মুজিব মরলে সবাই একসঙ্গে মরব এই কথা বলে দরজা খুলে দেন। আব্দুর রহমান রমাও তখন বাথরুমে ছিল। দরজা খুলে দিলে আর্মিরা শেখ নাসের, শেখ রাসেল, বেগম মুজিব ও রমাকে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে বেগম মুজিব সিঁড়ি থেকে নামতে চাইলেন না। তিনি বলেন, আমাকে এখানেই মেরে ফেল। সেনাসদস্যরা তখন আবার বেগম মুজিবকে নিয়ে দোতলায় যায়?। সেখানে শেখ জামাল, রোজী জামাল ও সুলতানা কামাল ছিলেন। একটু পর সেখানে গুলির শব্দ ও চিৎকার শোনা যায়। ওই রুমে হত্যাকান্ড চলার সময় অন্য আর্মিরা শেখ নাসের, শেখ রাসেল ও রমাকে নিয়ে নিচে নামে। সেখানে শেখ কামালকে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। সে সময় এস আই সিদ্দিকুর রহমান এবং ডি এস পি নুরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। এরপর বেঁচে থাকা শেখ নাসের ও শেখ রাসেলকে নিয়ে ঘাতকরা নিচে নেমে আসে। রমনার ভাষ্যমতে…. নিচে এনে শেখ নাসের, শেখ রাসেল ও রমাকে লাইনে দাঁড় করায়। শেখ নাসের তখন বলেছিল, আমি তো রাজনীতি করি না। কোনোরকম ব্যবসা করে খাই। তখন একজন আর্মি বলে ঠিক আছে, আপনি ওই কক্ষে গিয়ে বসেন। শেখ নাসের পানি চাইলে আরেকজন আর্মি অফিসার গিয়ে পানি না দিয়ে তাকে গুলি করে। দোতলায় হত্যাকান্ড শেষে যখন শেখ রাসেল ও বাড়ির কাজের ছেলে রমাকে নিচে আনা হয় তখন রাসেল মুহিতুল ইসলামকে বলেছিল, ও ভাইয়া আমাকে মারবে না তো? মুহিতুল ইসলাম তাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন- না, মারবেন না। এরপর একজন আর্মি শেখ রাসেলকে মুহিতুল ইসলামের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। মেজর আজিজ পাশা যখন ওয়ারলেসে কথা বলছিল তখন শেখ রাসেল মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কান্না করছিল। মেজর পাশা তখন একজন হাবিলদারকে শেখ রাসেলকে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ওই হাবিলদার শেখ রাসেলকে দোতলায় নিয়ে যায়। কিছু সময় পর গুলির শব্দ পাওয়া যায়। তখন ওই হাবিলদার নিচে এসে বলে স্যার, সব শেষ।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষীদের বর্ণনায় পঁচাত্তরে পনেরোই আগস্টের যে নারকীয় হত্যাকান্ডের চিত্র পাওয়া যায় তা মর্মান্তিক এবং এর নজির ইতিহাসে নেই।

লেখক: এস ডি সুব্রত – কবি ও প্রাবন্ধিক।


সর্বশেষ - রাজনীতি