1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্বায়ত্বশাসন দাবি করে বছরের পর বছর কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন কে?

শামসুদ্দিন পেয়ারা : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩

ধরুন এক জন, বা এক লাখ জন, বা এক কোটি লোক এসে বললো, শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি, ২৫ মার্চের পর কি হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিলো না বলেই তিনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন। দারুন ভালো কথা। তা হলে স্বাধীনতাটা চেয়েছিলো কে? পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন দাবি করে বছরের পর বছর কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন কে? আপনি? সেই ১৯৫৪-র যুক্তফ্রন্টের ২১-দফা থেকে শুরু করে ১৯৬২-র সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে দুই প্রদেশের আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে পূর্বপাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ ও মুদ্রা পাচার বন্ধ করা, পূর্বপাকিস্তানে বাঙালিদের নিয়ে আলাদা প্যারামিলিশিয়া গঠিত করা, পাকিস্তানি নৌবাহিনীর সদর দফতর করাচি থেকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা, পৃথক মুদ্রা ও স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির দাবি সম্বলিত বাঙালির মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ৬-দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন কে? ৬-দফা দাবি নিয়ে পাক-সামরিক শাসকসহ গোটা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে একা লড়াই করেছিলো কে? শেখ মুজিব, না আপনি?

৬-দফার দাবিতে জেলায় জেলায় জনসভা করে ও আওয়ামী লীগকে নতুন করে সুসংগঠিত করে বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলে তাদের মধ্যে স্বাধীনতার স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছিলেন কে? আপনি তুলেছিলেন? ৬-দফার পক্ষে পর্বতসম অটল অবস্থান গ্রহণ করে জেল, জুলুম সয়ে এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ মাথায় বয়ে হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে যেতে প্রস্তুত হয়েছিলেন কে? মওলানা ভাসানি? অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ? মওলানা মওদুদি? নুরুল আমিন? আপনি? ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে পূর্বপাকিস্তানের ১৬৯ টি জাতীয় সংসদের আসনের ১৬৭টি আসনে ও প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৭টি আসনে তো জয়ী হয়েছিলো শেখ মুজিবের অনুসারী আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীরাই। আর সবাই একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো। আপনি কি কোনো মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন? কয়টা ব্যালট পড়েছিলো আপনার বাক্সে? মনে পড়ে?

শেখ মুজিব যদি স্বাধীনতা না চাইতেন তাহলে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসেছিলো কার সঙ্গে আলোচনা করতে? মাওলানা ভাসানির সঙ্গে? জিয়াউর রহমান আর শফিউল্লাহর সঙ্গে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ করতে? এরশাদের সঙ্গে? ইয়াহিয়া তো আলোচনা করতে এসেছিলো শেখ মুজিবের সঙ্গেই। ভুট্টোসহ পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যথা ওয়ালি খান, কাইউম খান, মাহমুদ আলি কাসুরি, মিয়া মোমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলাতানা, আসগর খান, মিয়া ইফতেখার উদ্দিন- এরা সবাইতো এসেছিলেন শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা করতে, ৬-দফার ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে থেকে সামান্য এদিকওদিক করে হলেও পাকিস্তানকে রক্ষা করা যায় কি না সে ব্যাপারে শেষ চেষ্টা করতে। ইয়াহিয়ার চেষ্টাও ছিলো তাই। শেখ মুজিব সবাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন ৬-দফার একটি দাড়ি কমা সেমিকোলোনও আমি বদলাতে পারবো না। ৬-দফা এখন জনগণের সম্পদ। জনগণ আমাকে ৬-দফা বাস্তবায়নের জন্য ভোট দিয়েছে। আমি জনগণের সঙ্গে কখনো বেইমানী করিনি, করবোও না। ওই একই কথা তিনি দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও কূটনীতিকদেরকেও সুস্পষ্ট ভাষায় একাধিকবার বলে দিয়েছিলেন। মাওলানা ভাসানি বা গেলাম আজম তথা আর সব সিকি আধুলি নেতার সঙ্গে আলোচনা বা দেখা করা দূরে থাক, তাঁদের নামটিও কেউ উচ্চারণ করেছিলেন এ সময়ে? করেননি।

পঁচিশ মার্চ রাতে তো ওরা শেখ মুজিবকেই গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে ও পরে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিলো। মাওলানা ভাসানিকে করেনি কেন? স্বাধীনতার আসল নেতা তো না কি ছিলেন মাওলানা ভাসানিই? তাঁকে ধরেনি কেন? ভাসানির অনুসারীরা তো যুদ্ধের নয়মাস চিনের লাইন (কমিউনিস্টদের এই ‘লাইন’ জিনিসটা যে কী, কমিউনিজম চলে গেলো, তবু আমার বুঝা হলো না) হলো করে এটা যে দুই কুকুরের লড়াই তার তত্ত্ব ঝেড়েছে, আর কি করে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করা যায় তার গবেষণা করেছে। যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেখানে ফিরে যাই। যদি কেউ এসে বলে যে শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি, অন্য কেউ একজন বা বহুজন চেয়েছিলো, আমি মনে করি, বলুক। উম্মাদ ও পরাজিত হামবাগদেরওতো কথা বলার অধিকার আছে। বলুক। তাতে কার আর কি এসে গেলো? দেশ তো স্বাধীন হয়েছে। না কি? অফিস আদালতে তো কলকলিয়ে বাঙলা ভাষাই চলে। না কি? উর্দু মিডিয়াম না বাঙলা মিডিয়াম, তা নিয়ে বাঙালি ছেলে-মেয়েদের হীনমন্যতায় ভুগতে হচ্ছে না। তাইতো? দিনরাত পাঞ্জাবি, পাঠান ও বিহারিদের রক্তচক্ষু আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য হজম করে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে না। তাই তো?

আমরা আজ উন্নয়নের ঘোড়দৌড়ে সমসাময়িকদের চাইতে হাজার মাইল পিছিয়ে আছি। খুবই খারাপ আছি। এ কথা সত্য। তবে আর যাই হোক, আমরা তো এখন আর পাকিস্তানের উপনিবেশ বা ইসলামাবাদের অর্থনৈতিক গোচারণভূমি নই। নেতারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের কাছে মাথা বিক্রি করেছেন, শাসকরা দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ, আয় রোজগার, সব ক্ষেত্রেই একেবারে তলাস্যতলায় এসে ঠেকেছি। তবু বলবো: ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়। দাসত্বশৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়’। ঠিক আছে, শেখ মুজিব স্বাধীনতা চায়নি তো কি হয়েছে? আপনি তো চেয়েছিলেন। আপনাকেই না হয় সবাই মিলে স্বাধীনতার মহানায়ক ঘোষণা করলাম। পারবেন তার ভার বইতে? কুয়াৎ আছে হিমালয়সমান সে মিথ্যার বোঝা মাথায় বয়ে চলবার? নেই।

লেখক : শামসুদ্দিন পেয়ারা – মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক


সর্বশেষ - রাজনীতি