1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের রাজনীতি

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

দেশের যে কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল ব্যবস্থাটা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের উচিত ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নেটজগতে দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতির পরিপন্থি বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা।

আগামী সাধারণ দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক মাঠ একটু একটু গরম হচ্ছে। তবে এই মাঠ কতটা উত্তপ্ত হতে পারে তা কেউ বলতে পারবে না। কারণ এ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের হিসাবটা কষা হয় বিদেশিদের মনোভাবকে কেন্দ্র করে। তাই রাজনীতির বিষয়টা আসলে কি হচ্ছে বা কোন দিকে এগুবে তার গতি ধারা নির্ণয় করাটা দুরূহ বিষয়। তবে তথা কথিত সুশীলরা অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে বসে আছেন কূটনৈতিক পাড়া থেকে কি সংবাদ আসছে, যে কোনো সংবাদ আসুক না কেন তার চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিমিকথকরা। সুশীলদের কোনো চরিত্র বা জ্ঞান বুদ্ধি নেই। দেশের সুশীলরাও বিদেশি অনুদানে পেট চালায়, তাই এরা পেইড সুশীল। সুতরাং, নিরপেক্ষ কথা এদের মুখ দিয়ে বের হবে না। রাত জেগে এদের কথা শুনার আদৌ কি প্রয়োজন আছে দেশের সাধারণ মানুষের।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিদেশিদের দিকে চেয়ে আছে। দেশের কথিত ভাইরাল হিরো আলমকে বিদেশিরা বানালো স্টার। তাই রাজনীতিবিদরা মনে করেন বিদেশিদের ছাড়া এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্ধার পাওয়ার কোনো পথ নেই। সম্প্রতি একটি জনসভায় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের সময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায় আহত হন। বিএনপির এই নেতাকে পুলিশ উদ্ধার করে পুলিশের অফিসে নিয়ে যায়। পুলিশ অফিসের এক বড় কর্তা গয়েশ্বর রায়কে আদর করে খাওয়া-দাওয়া করান। পুলিশের কর্তা গয়েশ্বর রায়কে যে খাওয়ালেন তা ক্যামরা বন্দি করা হয়। তারপর ক্যামেরা বন্দি ছবিগুলো নেট দুনিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হলো। এই ছবিটা নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য কি? সবাই কি ভাইরাল হতে চায় হিরো আলমের মতো? নাকি পুলিশ বিএনপির সম্প্রীতির বিষয়টা জানান দেওয়ার জন্য? নাকি সরকার ও বিএনপির মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ অ্যাকশন হয় না তা বুঝার জন্য? এসব দেখে আবারও নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদের উক্তিটি মনে পড়ে যায়, দেশে রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। তিনি আসলে সত্যি কথাটাই বলেছিলেন, দেশে রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে- তা না হলে একজন উচ্চস্তরের পুলিশের কর্মী একজন রাজনৈতিক নেতাকে তার অফিসে খাওয়ানোটা স্বভাবিক। আর এই বিষয়টার দৃশ্য ধারণ করে নেট দুনিয়ায় ছাড়ার উদ্দেশ্যটাকেই বলা হয় দেশে চলছে রুচির দুর্ভিক্ষ।

দেশের আইসিটি আইনে সংবাদপত্রসহ অনেক কিছুর বাকরুদ্ধ করা বা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে নেট জগতে এমন কিছু পোস্ট দেওয়া হচ্ছে- যা ন্যক্কারজনক ও নীতি গর্হিত কাজ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মারা গেছেন, দারুণ সাবলীলভাবে তা প্রচার করা হয় নেট দুনিয়ায়, বিষয়টা অবাস্তব অলীক। যেমন প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠকে বিকৃত করা হয় বিভিন্ন ভিডিওতে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে নেই এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ ভিডিও। যা ছড়িয়ে গেছে নেট জগতে। এটা রোধ করার কি কোনো ব্যবস্থা নেই? তাছাড়া পর্নোগ্রাফিতে ভরে আছে এই নেট জগৎ। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে এই জগতে আছে নতুন নতুন ভিডিও- যা অত্যন্ত কদর্য ও অরুচিকর। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চায় মূল ধারার সংস্কৃতির বিষয়গুলো আর অনুশীলন হয় না। বাঙালি বা বাংলা জনপদের সংস্কৃতিটা মৌলবাদীদের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে, ফলে এই স্থানটি দখল করছে অপসংস্কৃতি আর তারই ফসল আজকের হিরো আলম। ফেসবুককেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চাটা বাড়ছে। পর্নোগ্রাফিকতায় ইয়েলো জার্নালিজমের রাজনৈতিক সংবাদ ভিডিওগুলোর প্রতি মানুষের আকৃষ্টতা বাড়ছে দিন দিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখায়ব দিয়ে বানানো হচ্ছে কিছু ভিডিও। এই ভিডিওগুলোর সংস্কৃতির মান বিচারে এর চেয়ে নিকৃষ্টতম সংলাপময় ভিডিও আর হতে পারে না। আর এই সংলাপ সংবলিত ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদেকে, এর কি কোনো নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। এ ধরনের সংলাপ ও কথাবার্তার ভিডিওগুলোর কারণে রাজনৈতিক নেতারা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষের কাছে। কোনো জনসভা, পদযাত্রা, বা রাজনৈতিক যে কোনো কর্মসূচিকে ইউটিইউব চ্যানেলগুলো যেভাবে উপস্থাপন করে তাতে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়ার উৎসাহটাই সাধারণ মানুষ হারিয়ে ফেলে। ধর্মীয় বিষয়গুলো রাজনীতিতে ব্যবহার করে ইউটিইউব চ্যানেল সংবাদ পরিবেশন করায় মৌলবাদিত্বের আধিক্য বেড়ে যাচ্ছে। এর জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্ব কমছে মহান মুক্তিযুদ্ধের আর্দশিকদের। বাংলাদেশে নেটিজেনদের রাজনৈতিক জ্ঞানের পরিপূর্ণতা নেই। গত ৯০-এর পর সুস্থ ধারায় নেই বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ছাত্র রাজনীতির প্রতি রয়েছে বড় ধরনের অনীহা। রাজনীতির জ্ঞান আহরণের সূতিকাগার হলো ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির যে হাল তাতে বলা যায়, শুধু সাইন বোর্ড সংবলিত ছাত্র সংগঠন রয়েছে দেশে। যদিও অনেকেই বলবেন ছাত্রলীগ অনেক বড় সংগঠন। এই সংগঠনটি বড় হওয়ার পেছনে আর্দশটার চেয়ে স্বার্থটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ ভবিষ্যতের চাকরি-বাকরি, বর্তমানে হলে থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলো ছাত্রলীগ করার সঙ্গে জড়িত। তাই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি আকারে বড় হয়। দেশের সব ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বন্ধ্যাত্বের দিকেই এগুচ্ছে- যার ফলে নতুন রাজনীতির ফসলের আশা করা যায় না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ৮০ ভাগই নেটিজেন, তাদের মূলত রাজনৈতিক জ্ঞান নেই বললেই চলে, কারণ ক্যাম্পসে এরা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা করে না। তাই নেটজগতে যা পায় তাই গ্রোগ্রাসে গিলছে। এই সেই গলাধকরণের তেত্রিশ বছরের ফসলটি আজ দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে ফুটে উঠেছে। তাই দেখা যায় অর্ধশিক্ষিত, অরুচিকর সংস্কৃতি চর্চাকারীরা মহিরুহের রূপ নিয়ে আর্বিভূত হচ্ছে রাজনীতিতে। এটা জাতির ভবিষ্যতের জন্য খুবই নেতিবাচক দিক। এর পরির্বতন হওয়া উচিত। দেশে ডিজিটাই নিরাপত্তা আইনে এ পর্যন্ত বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিন্তু এই বিকৃতি রুচিকর উপস্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দেশের চলমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কি যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মানুষের বাকরুদ্ধ করা হচ্ছে। অপরদিকে, কিছু বিষয় এমনভাবে উপস্থাপিত করা হচ্ছে- যা দেশের রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এই ক্ষতিকারক বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাহলে ৫৭ ধারাটি কোথায় কার ক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে তা দেখার বিষয়।

দেশের যে কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল ব্যবস্থাটা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের উচিত ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নেটজগতে দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতির পরিপন্থি বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা।

লেখক: শাহ মো. জিয়াউদ্দিন – লেখক ও কলামিস্ট।


সর্বশেষ - রাজনীতি