১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, শুক্রবার। ভোর হবার আগেই সমগ্র জাতি হতবাক, স্তব্দ! নিভে গেল স্বাধীন বাংলার ধ্রুবতারা। পৃথিবীর ইতিহাসে যোগ হয় একটি বর্বরতম ও বেদনাময় কালো অধ্যায়। শুরু হয় কাল থেকে কালান্তরের শোকের আগুন।
এই দিন পরিবারবর্গ সহ নিহত হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলার স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক ও মহাবীর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার সারা জীবনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলার স্বধীনতা। যে মানুষটি সারা জীবন ব্যয় করেছেন শুধু বাংলার মানুষের জন্য,বাংলার স্বাধীনতার জন্য,সমকালিন ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ও সংবাদপত্র বঙ্গবন্ধুকে নানান বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন।
ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছেন, আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি তার ব্যক্তিত্ব ও নির্ভীকতা হিমালয়ের মত।
ফিনান্সিয়ান টাইমস্ বলেছেন, মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্যা গার্ডিয়ান বলেছেন, শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।
আর সেই কারনেই এই বিস্ময়কর ব্যিক্তিকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু স্বাধীনতার আগে থেকেই। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ক্যানভাস ছিল বিচিত্র চক্রান্তের জটিলতায় আচ্ছন্ন । আর সেই চক্রান্ত প্রকাশ্যে। আগরতলা মামলার শুরু থেকে, ষড়যন্ত্রের যুক্ত ছিল দেশি ও আন্তর্জাতিক দুষ্কৃতিমহল।
ভারত-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক নীরদ শ্রী চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।
টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়-‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’
একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
বঙ্গবন্ধু যখন সংগ্রামী জীবনের ঋদ্ধ অভিজ্ঞতায় এবং রক্তাক্ত উপলব্ধিতে কার্ষিক অর্থে কৃষক-শ্রমিক, দুঃখী-শোষিত শ্রেণীর সঙ্গে দৃঢ় অবস্থান নিলেন আর তখনই তাকে হত্যা করা হয়। জেনারেল জিয়ার সম্মতিতে এ বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিপথগামী সেনাসদস্য ফারুক, খন্দকার আবদুর রশিদ, মহিউদ্দিন, ডালিম, আজিজ পাশা, বজলুল হুদা, শাহরিয়ার রশীদ ও রাশেদ চৌধুরী অন্যতম। একাত্তরের পরাজিত শক্তি, কতিপয় বিশ্বাসঘাতক রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বিভ্রান্ত বামপন্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে।
তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছে একটি স্বাধীন জাতিকে, মুছে ফেলতে চেয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসকে, পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে দিয়েছে এ দেশের অগ্রগতিকে। তবে সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার, তাঁর সব স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার।
লেখক : মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান – সাবেক ছাত্রনেতা