1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই

ফারাজী আজমল হোসেন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩

স্বাধীনতার প্রায় ৫২ বছর পর এসেও স্বাধীনতাকে নতুন করে খুঁজতে চাইছি আমরা। দেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষ যার যার মতো করেই হয়তো ভাবছে স্বাধীনতার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রশ্নে স্বাধীনতার চেতনা, সার্বভৌম ভাবনা এবং গর্ব করার স্থান একটাই। যার নাম বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং অসংখ্য চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে আজ আমরা বর্তমান বাংলাদেশকে পেয়েছি। অনেক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। তেমনি এক ভুলের নাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। বিশ্বের কোনো সফল গণতান্ত্রিক দেশে নেই এ ব্যবস্থা। তবে কেন থাকবে বাংলাদেশে?

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে মোটেই প্রয়োজন নেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনই অবাধ ও পক্ষপাতমুক্ত নির্বাচন পরিচালনার পক্ষে যথেষ্ট। বাংলাদেশ বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনের শক্তি বৃদ্ধি করে অবাধ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় যদি নির্বাচিত সরকারের শাসনামলে অবাধ ভোট হতে পারে, তবে বাংলাদেশেও একইরকমভাবে নির্বাচন সম্ভব।

দেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকার ও বিরোধী পক্ষের সবার ভোটে অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে ভোটে প্রতারণা প্রতিরোধ অনেক সহজ। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মহলের চোখের সামনে ভোটকে প্রহসনে পরিণত করা মোটেই সম্ভব নয়। ভোট হচ্ছে গণতান্ত্রিক দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব। সেই উৎসবে অংশ নেওয়া সব নাগরিকের কর্তব্য।

প্রতিবেশী ভারতে জন্মলগ্ন থেকেই নির্বাচিত সরকারের শাসনেই ভোট হচ্ছে। আর সেই ভোটে জনগণের রায়ে পরিবর্তন হচ্ছে সরকারের। ভোটের ফল নিয়ে কোনো দলই সংশয় প্রকাশ করে না। জনগণের রায়কে মাথা পেতে নেন দেশটির বিরোধী নেতারাও। অথচ, সে দেশের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই ভোট হয়। আদর্শ নির্বাচন বিধি বা মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট চালু থাকলেও নির্বাচিত সরকার ভোটের সময়ও ক্ষমতায় থাকে। তবে তাদের কাজকর্মে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ থাকে। মন্ত্রীদেরও সাধারণ ভোটপ্রার্থীর মতোই ভোট চাইতে হয়। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে তিনি মন্ত্রিত্বও চালাতে পারেন।

গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্য মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে, এমন কোনো আচরণ করতে পারেন না। নির্বাচনী সফরের যাবতীয় খরচ তাদের রাজনৈতিক দলকেই বহন করতে হয়। এমনকি নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে আদর্শ আচরণবিধি। সোজা কথায়, মন্ত্রিত্ব থাকলেও তাকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা যায় না। তাই ভোটকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো কাজ করাটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলাকালে কার্যত নিষিদ্ধ।

ভারতে নির্বাচনের দিন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চালু হয় আদর্শ আচরণবিধি। তার আগে থেকেই প্রশাসনিক কাজকর্ম চলে আসে নির্বাচন কমিশনের নজরদারিতে। ভোট সংক্রান্ত সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী নির্বাচন কমিশন। তাই জনগণ চাইলেই শাসক দলের জয় বা পরাজয়ে কোনো অসুবিধা হয় না। ভারতের নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছাই শেষ কথা। যেমন- ইন্দিরা গান্ধীর মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ নারীকেও মানুষের ভোটে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই। তার ছেলে প্রয়াত রাজীব গান্ধী রেকর্ড আসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও ৫ বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হন। পরপর দুবার কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট সরকার ড. মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের ইচ্ছায়ই তাদের হারিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় দিল্লিতে।

সেই সরকারও পরপর দুবার জিতলেও আগামী দিনে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই ভোটে অংশ নিয়ে তাকে হারানোর ছক কষতে শুরু করে দিয়েছেন বিরোধীরা। তারা কেউই মোদীর ইস্তফার দাবি তোলেননি। ভোটে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিও কখনো ওঠেনি ভারতে। কারণ ভোটের ফলে সরকারের কোনো ইচ্ছা কখনও কাজ করেনি। সম্প্রতি কর্ণাটক রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিজেপির হেভিওয়েট নেতারা সেখানে সক্রিয় অংশ নেন। রাজ্যেও ক্ষমতায় ছিল বিজেপিরই সরকার। তবু সেখানে বিজেপিকে পরাস্ত করেই মানুষের ভোটে কংগ্রেসের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

গণতান্ত্রিক দেশে মানুষই একমাত্র সরকার বানাতে পারে। মানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকারেরই জনগণের প্রতি তাই থাকে দায়বদ্ধতাও। পাঁচ বছর পরপর জনগণের কাছে নির্বাচিত সরকারকে জবাব দিতে হয়। মানুষকে বা ভোটারদের বোকা ভাবার কোনো কারণ নেই। তারা সব বোঝেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে তারা সেটা বুঝিয়েও দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, এদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বারবার সেই স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে বারবার বিদেশি শক্তির ইন্ধনে সামরিক শক্তির অভ্যুত্থান দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে।

পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের প্রবণতা রয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলের। দেশের মানচিত্র রক্ষা করার পাশাপাশি গণতন্ত্রও রক্ষা করতে হবে। নির্বাচন এলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মায়াকান্না বন্ধ করে সবাই মিলিতভাবে পরিচ্ছন্ন ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচনের পরিবেশ রচনা করাটাই জরুরি। বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও এখতিয়ার বৃদ্ধি করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বন্দোবস্ত করেছে। তাই জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবারও আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনেই বাংলাদেশ আদর্শ ভোটগ্রহণে প্রস্তুত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা এক সময় অবশ্যই ছিল। কারণ দেশ চলে গিয়েছিল সামরিক শাসনে। সেখান থেকে গণতন্ত্রে ফের উত্তরণের স্বার্থেই জরুরি হয়েছিল নিরপেক্ষ সরকারের। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতায় রয়েছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত দলের সরকার। বিরোধীরাও একইরকম ভাবে জনগণের রায়ে নির্বাচিত। মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দেশে নির্বাচন কীভাবে হবে সেটা ঠিক করার অধিকারী। আর তারাই ঠিক করেছেন, নির্বাচন কমিশনের আওতায় নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চিন্তা-ভাবনা এখন অপ্রয়োজনীয়।

গত সাধারণ নির্বাচনে জনগণ যাদের পরাস্ত করেছিল তারাই বেশি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য গলা ফাটাচ্ছে। আসলে তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। জনসমর্থন তলানিতে এসে ঠেকেছে। ভোটে জেতার মুরোদ নেই। তাই সংবিধানবিরোধী দাবি তুলে হাওয়া গরম করতে চাইছেন তারা। তারা ভালো করেই জানেন, সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে বহু আগেই। নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ভোট পরিচালনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা। তাই এখন আর পেছন ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যুগ শেষ। নির্বাচিত সরকারই বাংলাদেশ শাসন করবে।

মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বালাই নেই। পুরোদমে ক্ষমতায় থেকেই ভোটে লড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার দল। জো বাইডেনদের জিততে তাতে কোনো অসুবিধা হয়নি। নিজেদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সমর্থক বলে দাবি করা আমেরিকাই তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে মান্যতা দেয় না, তাহলে বাংলাদেশ কেন দেবে? আসলে ভোটে লড়তে যারা ভয় পায়, যাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই, হিংসাই যাদের একমাত্র শক্তি, দেশের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই যাদের, তারাই চাইছে পেছনের দরোজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার সেটা হতে দেবে না। মানুষের ভোটেই ফের নির্বাচিত হবে বাংলাদেশের নতুন সরকার। কারণ বাংলাদেশের মানুষও সেটাই চান।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্তব্য করলেও দেশটির এই দেশে থাকা অ্যাম্বাসেডর বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে একটি কথাও বলা হয়নি। উল্টো সর্বশেষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়েও বলা হয়েছে শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। বিশ্বের কোনো দেশই বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি এক বিরোধী দল ছাড়া। এখনো তারা আন্দোলন করে যাচ্ছে ‘এক দফা, এক দাবি’ নিয়ে। যার স্বপক্ষে নেই জন সমর্থন। এমনকি তাদের ভিন্ন দেশের প্রভুদের মুখেও নেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। তাহলে কী শুধু বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্যই বিএনপি ও তার শরিকদের এই আন্দোলন?

লেখক: ফারাজী আজমল হোসেন – সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।


সর্বশেষ - রাজনীতি